|
|
|
|
ক্রমশ কমছে জলস্তর |
সঙ্কট ময়নাগুড়ি ব্লকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
কিছু কুয়োয় জল এখনও আছে। নলকূপেও জল পড়ছে। কিন্তু প্রয়োজন মতো ব্যবহারের উপায় নেই। দু’বালতি বেশি জল তুলতে শুকিয়ে যাচ্ছে কুয়ো, অকেজো হচ্ছে নলকূপ। স্নানের জন্য নিরুপায় বাসিন্দাদের ছুটতে হচ্ছে এক কিলোমিটার দূরে নদীতে। অথবা পাশের গ্রামে। ময়নাগুড়ি ব্লক জুড়ে বেড়ে চলা জলকষ্টের এটাই ছবি। ব্লকের পদমতি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈকুরগৌড় গ্রামে কুয়ো অথবা নলকূপে জল রয়েছে। ওই জল মেপে ব্যবহার করছেন বাসিন্দারা। কারণ, এক বালতি বেশি জল খরচের চেষ্টা করলে কুয়ো শুকিয়ে যাচ্ছে। বিকল হচ্ছে নলকূপ। ফলে ভোগান্তি বাড়ছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান দীপক রায় বলেন, “বৈকুরগৌড় গ্রামের পাঁচটি সংসদে ওই পরিস্থিতি চলছে। বাসিন্দাদের অনেক হিসেব করে জল ব্যবহার করতে হচ্ছে।” শুধু কী বৈকুরগৌড় গ্রাম? জলকষ্টে ধুঁকছে জোরপাকড়ি, ভোটপট্টি, রাজারহাট, পুঁটিমারি, শালতলি এলাকাও। ব্লক জুড়ে প্রতিদিন জলস্তর নামছে। ধুলো উড়ছে চাষের মাঠে। চাষ করা খেতের মাটি শুকিয়ে যাওয়ায় পাট চাষিরা বীজ ফেলতে পারছে না। বেশির ভাগ গ্রাম ও পাড়ার কুয়ো শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। অকেজো নলকূপ। গরম না-পড়তে এ ভাবে জলকষ্ট বেড়ে চলায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। ভরা গ্রীষ্মে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটা ভেবে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাঁদের। সারা ভারত কৃষক সভার ময়নাগুড়ি ব্লক সম্পাদক নির্মল চৌধুরী বলেন, “কবে বৃষ্টি নামবে সেই ভরসায় চাষিরা বসে আছেন। নদীর আশপাশের জমি ছাড়া অন্য কোথাও পাটের বীজ ফেলা সম্ভব হয়নি। বাড়ির কুয়োতেও জল নেই। জানি না কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে!” বেড়ে চলা জলকষ্টের খবর পৌঁছেছে ব্লক প্রশাসনের দফতরেও। ময়নাগুড়ির বিডিও সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, “পানীয় জল ও সেচের জলের সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। ওই রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।” গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’বছর আগে ৪০ ফুট গভীরে স্বচ্ছ জলের সন্ধান মেলে। এ বার ৬০ ফুট পর্যন্ত পাইপ পুঁতে জল পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাম থেকে শহর একই ছবি। সুভাষনগর, দেবীনগর, আনন্দনগর, হাসপাতাল পাড়া, ময়নামাপাড়া, গোবিন্দনগর এলাকার বেশির ভাগ কুয়োয় জল নেই। জলস্তর নেমে যাওয়ায় পুরনো নলকূপগুলি অকেজো হয়েছে। পানীয় জল তো বটেই। স্নান থেকে অন্য সমস্ত কাজের জন্য এখন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সরবরাহ করা টাইম কলের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে নিরুপায় বাসিন্দাদের। জরদা নদী সংলগ্ন শহিদগড়, মহাকাল পাড়া, আনন্দনগরে জল বাড়ন্ত। ময়নাগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল সদস্য মিতু চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালপাড়া সংলগ্ন হামনডাঙা থেকে প্রধানের বাড়ি, খাউটিয়াপাড়া, দক্ষিণ খাগরাবাড়ি, হাতিরবাড়ি, ভাতিরডাঙা, মালিপাড়া, হঠাৎ কলোনি, শান্তি কলোনি এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের কোনও ব্যবস্থা নেই। এলাকার বাসিন্দারা প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে জল সংগ্রহ করছেন।” একই পরিস্থিতি দোমহনি-২ এলাকার। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দীনবন্ধু রায় বলেন, “কুমারপাড়া, বাংলাঝাড়, পাটকাখোচা, সিঙ্গিমারি ও আবদুলের মোড় এলাকার ৮টি সংসদ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে কুয়ো আছে। কিন্তু সেগুলি শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। বাসিন্দারা ২ কিমি দূর থেকে জল সংগ্রহ করছেন।” |
|
|
|
|
|