চলতি মাসেই বিয়ে। আর সপ্তাহ ঘুরতে না-ঘুরতে স্বামীই তার স্ত্রীকে ধর্ষণকারীদের হাতে তুলে দিয়েছিল বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
বালির রাজচন্দ্রপুরে ওই ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী বাপ্পাকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগে ধৃত দুই যুবক রাজা সরকার ও কার্তিক বসু তার পূর্বপরিচিত। কী উদ্দেশ্যে বাপ্পা পরিচিত যুবকদের হাতে স্ত্রীকে তুলে দিয়েছিল, সেই ব্যাপারে পুলিশ পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, এর পিছনে টাকার লেনদেন থাকতে পারে। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বাপ্পার বাড়ি ডানকুনিতে। কিন্তু পুলিশ জানিয়েছে, বাপ্পা রাজচন্দ্রপুরের সুকান্তপল্লির বাসিন্দা। রুইদাস পদবি জানিয়ে বাপ্পা বিয়ে করলেও তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তার আসল পদবি বসু। অর্থাৎ শুধু ঠিকানা নয়, পদবিও ভাঁড়িয়েছিল বাপ্পা।
বুধবার, ২১ মার্চ রাতে বালির রাজচন্দ্রপুর স্টেশন সংলগ্ন একটি চালাঘরে ধর্ষণ করা হয় ওই তরুণীকে। তিনি পুলিশকে জানান, গত ১৫ মার্চ ডানকুনির বাসিন্দা বাপ্পা রুইদাসের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তিনি তারকেশ্বরে বাপের বাড়িতে থাকতেন। বাপ্পাই বুধবার সকালে তাঁকে ফোন করে রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে পৌঁছে যেতে বলে। সে আরও বলে, স্টেশন থেকে তার দুই বন্ধুই ওই তরুণীকে বাপ্পার কাছে পৌঁছে দেবে। তরুণী জানান, তিনি বুধবার দুপুরে রাজচন্দ্রপুরে চলে যান। দীর্ঘ ক্ষণ স্টেশনে বসে থাকেন। কিন্তু কেউ আসেনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ দুই যুবক এসে বাপ্পার বন্ধু বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। তারা ওই তরুণীকে স্টেশনের লাগোয়া একটি চালাঘরে নিয়ে যায়। সেখানে জোর করে মাদক মেশানো পানীয় খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে ওই যুবকেরা। রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ জ্ঞান ফিরে এলে ওই তরুণী সেখান থেকে পালিয়ে বালি রাজচন্দ্রপুরের টোল প্লাজায় গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরাই খবর দেন পুলিশে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের সন্দেহ হয়, বাপ্পা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এমন সন্দেহ কেন?
পুলিশ জানায়, বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বাপ্পা ওই তরুণীকে রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে পৌঁছে যেতে বললেও সারা দিন সে স্ত্রীর কোনও খবর নেয়নি। তার আগে যে-মোবাইল থেকে সে ওই তরুণীকে ফোন করেছিল, সেটিও পরে বন্ধ রাখা হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানান, তদন্তে বেরিয়ে আসে, বাপ্পা যে-মোবাইল থেকে ফোন করেছিল, তার সিমকার্ড কেনা হয়েছিল অন্য এক ব্যক্তির নামে। সেই ব্যক্তি পুলিশকে জানান, তিনি বাপ্পাকে চেনেন না।
এক পুলিশ অফিসার বলেন, “প্রথম থেকেই বাপ্পার সম্পর্কে সন্দেহ দানা বাঁধছিল। তার পদবি ভাঁড়ানো, ভুল ঠিকানা দেওয়া, অন্যের নামে কেনা সিমকার্ড ব্যবহার ইত্যাদি থেকে আমরা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাই যে, সে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।” পুলিশি সূত্রের খবর, ধর্ষণের ঘটনার পরেই বাপ্পা ডানকুনির একটি ডেরায় আশ্রয় নিয়েছিল। সে লিলুয়ায় একটি বাসন কারখানার কর্মী। তার মা-ও লিলুয়ার অন্য একটি বাসন কারখানায় কাজ করেন। সেখান থেকেই বাপ্পা সম্পর্কে খোঁজখবর মেলে। শনিবার বাপ্পা রাজচন্দ্রপুরের বাড়িতে মায়ের
সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বাপ্পাকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, লিলুয়ার বাসন কারখানায় কাজ করতে গিয়েই ওই তরুণীর সঙ্গে তার আলাপ হয়। তবে বাপ্পার দাবি, তরুণীটির সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক’ গড়ে উঠলেও বিয়ে হয়নি। পুলিশি সূত্রের খবর, বুধবার সারা দিনে বাপ্পা বেশ কয়েক বার রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে গিয়েছিল। আড়াল থেকে ওই তরুণীর উপরে নজর রাখছিল সে। কিন্তু তরুণীর সামনে যায়নি। পরে সন্ধ্যায় তরুণীকে তার বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য দুই বন্ধুকে স্টেশনে পাঠিয়েছিল বাপ্পাই। পুলিশের সন্দেহ, অসৎ উদ্দেশ্যেই বাপ্পা ওই তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু স্টেশন-চত্বরে পরিচিত লোকেরা ছিল বলে সে দিনের বেলায় ওই তরুণীকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেনি।
হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “বাপ্পা এই ঘটনায় জড়িত। ওই দুই যুবকের সঙ্গে তার কোনও টাকার লেনদেন হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ওই তিন জনের অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা-ও যাচাই করছে পুলিশ। রবিবার বাপ্পাকে হাওড়া আদালতে তোলা হয়। তাকে তিন দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজচন্দ্রপুর স্টেশন সংলগ্ন যে-চালাঘরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেটি চোলাই মদের ঠেক। এই ধরনের আরও কয়েকটি চোলাই ঠেক আছে ওই স্টেশন এলাকায়। বৃহস্পতিবার পুলিশ সেগুলি ভেঙে দিয়েছিল। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভাঙার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না-পেরোতেই সেগুলি ফের চালু হয়েছিল। রবিবার ক্ষিপ্ত জনতা সেই ঠেকগুলি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। |