তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব
হরিপালে মন্ত্রীর গাড়িতে হামলা, সংঘর্ষে জখম ২০
লে ‘গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বরদাস্ত করা হবে না’ বলে চলতি মাসের গোড়ায় হুগলির আরামবাগে এসে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার সেই হুগলি জেলারই হরিপাল তেতে উঠল তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষেই। ঘটনাচক্রে, আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত দলের তরফে এই হুগলির দায়িত্বপ্রাপ্ত পার্থবাবুই।
এ দিন ঘণ্টাখানেক ধরে পুলিশের সামনেই দু’পক্ষের মধ্যে ইটবৃষ্টি হয়। মারামারি, কটূক্তি, দলীয় বিধায়ক তথা পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহের গাড়ি ভাঙচুর কিছুই বাদ যায়নি। আহত দু’পক্ষের অন্তত ২০ জন। বিকেলে সম্মেলনে পার্থবাবু বলেন, “কেউ যদি বেয়াদপি করে, দলে তার স্থান নেই। বদমাইশদের দল থেকে তাড়াতে হবে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সিপিএমের লোকজনও গোলমালে জড়িত।” সিপিএমের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন রচপাল সিংহ-সহ দলের জেলা নেতারা। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
গোলমালের সূত্রপাত তৃণমূলের ‘পঞ্চায়েতিরাজ সম্মেলন’কে ঘিরে। যে সম্মেলন ঘিরে এর আগে আরামবাগে দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে ‘বিব্রত’ হতে হয়েছিল পার্থবাবুকে। বহরমপুরে পণ্ড হয়েছিল তৃণমূলের সভা, যেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা। যে সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে কিছু দিন আগে ক্যানিংয়ে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জন্য ‘বিড়ম্বনা’য় পড়েন তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চৌধুরীমোহন জাটুয়া। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের চড়-থাপ্পড়, লাঠির বাড়ি পড়ে মন্ত্রীর গাড়ির বনেটে, কাচে।
পুলিশের সামনেই ইট ছুড়ছেন এক তৃণমূল সমর্থক।
হরিপালের কিঙ্করবাটি কৃষি বিদ্যালয়ে এ দিন ওই সম্মেলনে গোলমাল হয় হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না এবং বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত জেলার প্রাক্তন যুব তৃণমূল সহ-সভাপতি শেখ মুজফ্ফর আলির (মাজা) অনুগামীদের মধ্যে। কিছু দিন আগে হরিপাল বিবেকানন্দ কলেজের নির্বাচনেও দল নির্ধারিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল মাজা-গোষ্ঠী। সেই থেকে দু’পক্ষের বিরোধ বাড়ে।
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ মাজা-গোষ্ঠীর শ’খানেক সমর্থক মিছিল করে সম্মেলন-স্থলে আসেন। তাঁদের হাতে তৃণমূলের পতাকা। তাঁরা জোর করে সম্মেলনে ঢুকতে যান। চিৎকার হতে থাকে ‘মাজার কত লোক দেখে নে তোরা’। ‘ঢুকতে না দিলে তাণ্ডব বাধাব’। ‘মাজাই প্রকৃত তৃণমূল’। ‘বেচারামের লোকজন সবাই সিপিএম’ ইত্যাদি। মাজা অবশ্য সম্মেলনে ছিলেন না। বাইরেও তাঁকে দেখা যায়নি।
এর পরেই বিক্ষোভকারীরা ভিতরে এলোপাথাড়ি ইট ছুড়তে শুরু করে। রাস্তায় বিদ্যুতের তার ছিড়ে দেয়। ভিতরে থাকা দলীয় কর্মীরা লাঠিসোটা, বাঁশ নিয়ে বেরিয়ে আসেন। বাধে মারামারি। নির্মল পাল নামে এক তৃণমূল কর্মীর মাথা ফাটে। হরিপালের ওসি বঙ্কিম বিশ্বাসের পিঠেও ইট পড়ে। পুলিশ লাঠি চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সওয়া ১টা নাগাদ সম্মেলনে ঢুকছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। অভিযোগ, মাজা-গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁর গাড়ি আটকে ইট-পাটকেল ছোড়েন। বাঁশ দিয়েও মারা হয় গাড়িতে। গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে যায়। মন্ত্রীর অবশ্য চোট লাগেনি। পুলিশ কোনও রকমে গাড়িটিকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। শেষমেশ বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলের দখল নেয়। তার পরে ফের শুরু হয় সম্মেলন। রাতে হরিপাল স্টেশনের কাছে মাজা যে তৃণমূল কার্যালয়ে বসেন, সেখানে ভাঙচুর চালায় কিছু লোক।
জখম তৃণমূল কর্মী।
রচপাল দাবি করেছেন, “আমার গাড়ি যারা ভেঙেছে, তারা তৃণমূলের কেউ নয়। তৃণমূলের পতাকা নিয়ে সিপিএমের লোকেরাই সম্মেলন বানচাল করতে পরিকল্পিত ভাবে এটা করেছে।” বেচারামবাবুর অবশ্য বলেন, “শেখ মুজফ্ফর আলির লোকেরাই হামলা চালায়।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে মাজা বলেন, “আমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী। কিছু কর্মীকে সম্মেলনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উল্টে তাঁদের মারধর করা হয়। সম্মেলনেই বাঁশ-লাঠি মজুত রাখা হয়েছিল।” মাজাকে অবশ্য দলের কেউ বলে মানতে চাননি পার্থবাবু। সিপিএমের হরিপাল জোনাল কমিটির সম্পাদক দুলাল ভৌমিক বলেন, “যা হয়েছে, তা ওরাই করেছে। আমাদের কেউ ধারেকাছে ছিলেন না।”
ব্লক তৃণমূলের তরফে এ দিন মাজা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে গোলমালের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে থানায়। রাতে মাজা-গোষ্ঠীর দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, বেচারামবাবুর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি দলীয় ভাবেও ঘটনার তদন্ত করবে। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “এদের ঠান্ডা হতে বেশি সময় লাগবে না।”

রবিবার তাপস ঘোষের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.