সরকার বাঁচানোর তাগিদে রেলকেই ‘বরবাদ’ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রেলকর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেলওয়েমেন’ (এনএফআইআর)-এর।
পুরুলিয়ার আদ্রায় কংগ্রেস প্রভাবিত এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এম রাঘোভাইয়া কার্যত ইউপিএ-র বড় শরিকের সমালোচনার সুরেই বলেছেন, “সরকারের আধিকার আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কিন্তু, জোট সরকার চালানোর রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে বা স্রেফ সরকার বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে ভারতীয় রেলকে বরবাদ করাটা ঠিক নয়!” নাম না করে তৃণমূলকেও বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। বলেছেন, “রেল বাজেটে পূর্বতন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী সামান্য ভাড়া বাড়িয়েছিলেন। রাজনৈতিক চাপে সেটাও প্রত্যাহার করা হল। এই সিদ্ধান্ত রেলকে আরও বড় ক্ষতির সামনে ফেলে দিয়েছে।”
আদ্রায় শনি ও রবিবার হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে মেন্স কংগ্রেসের ২৪তম সাধারণ দ্বিবার্ষিক সভা। সংগঠন সূত্রের খবর, যাত্রিভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত যথেষ্ট সমালেচিত হয়েছে সম্মেলনে। বস্তুত, রেলের ভাড়া প্রত্যাহারের বিরোধিতায় প্রথম থেকেই সরব রেলকর্মীদের পাঁচটি সংগঠন। তারা আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। আগামী সপ্তাহে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই সংগঠনগুলি সংসদ ভবন অভিযান কর্মসূচি নিয়েছে।
পাশাপাশি, রেলের ‘সঙ্কটজনক’ পরিস্থিতিতে যাত্রিভাড়ার বর্ধিত হার আংশিক প্রত্যাহারের পরে অর্থ মন্ত্রক যাতে রেলকে সমপরিমাণ অনুদান (ম্যাচিং গ্রান্ট) দেয়, তার দাবিও তুলেছে রেলকর্মী সংগঠনগুলি। রাঘোভাইয়ার দাবি, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পণ্য পরিবহণ পরিষেবা দিতে গিয়ে রেলের বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। ওই পরিমাণ অর্থে রেলকর্মীদের আর্থিক সমস্যা মেটানো যেত। তাঁর কথায়, “রেল বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে দেশের সেবা করছে। কেন্দ্রের কাছে আমরা দাবি করেছি, ওই পরিমাণ ম্যাচিং গ্রান্ট কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে রেলকে দেওয়া হোক।”
ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন বলেও দাবি রাঘোভাইয়ার। তিনি বলেন “রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সমস্ত সংগঠন মিলে আবার কথা বলা হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও জানাব, আমরা বাড়তি সুবিধা চাইছি না। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হলে রেলকে তার প্রতিদান দেওয়া দরকার কেন্দ্রীয় সরকারের।” একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “বাজেটে যে সামান্য ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল, তাতে সাধারণ মানুষের সমস্যা হত না। দেশের কোথাও তাঁরা প্রতিবাদ করেননি। সমালোচনা করেনি যাত্রী-সংগঠনগুলিও। কারণ, যাত্রীরা চান রেলের সুরক্ষা, উন্নত পরিষেবা। তা ছাড়া, বাড়তি টাকা খরচ হত পরিকাঠামো উন্নয়নেই। পরিকাঠামো উন্নত না হলে রেলই বা কী ভাবে সুষ্ঠু পরিষেবা দেবে?” |