কেটে গিয়েছে দু’দশকেরও বেশি সময়। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন শারু ব্রালি ওরফে শেরু। সাহায্য করেছে গুগল আর ফেসবুক।
১৯৮৮ সালে শেরুর বয়স ছিল ছয়। মধ্যপ্রদেশের খান্ডওয়ায় মা ফতিমা বাই আর আরও চার ভাইবোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি। বাবা ছেড়ে গিয়েছিলেন মা-কে। পেট চালাতে বুরহানপুর স্টেশনে চা বিক্রি করতেন শেরুর বড় ভাই গুড্ডু।
এক রাতে ট্রেনে খান্ডওয়া ফিরছিলেন গুড্ডু, শেরু ও তাঁদের আর এক ভাই কাল্লু। এখনও সেই রাতের স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় কাল্লুকে। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়েছিলেন গুড্ডু। কাল্লু খান্ডওয়া পৌঁছলেও খোঁজ পাওয়া যায়নি শেরুর। ট্রেনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি।
পরের কাহিনী হার মানাতে পারে যে কোনও রোমহর্ষক উপন্যাস বা টানটান উত্তেজনার সিনেমাকে। ট্রেনে চড়ে কলকাতা পৌঁছে যান শেরু। সেখানে একদল ভিক্ষুকের খপ্পরে পড়ে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে তাদের চোখ এড়িয়ে পালিয়ে যান। এক মৎস্যজীবী পরিবারের সঙ্গেও ছিলেন কিছু দিন। তাঁরাই তাকে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাতে তুলে দেন।
অস্ট্রেলিয়াবাসী এক দম্পতি দত্তক নেন শেরুকে। অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেন তিনি। উচ্চশিক্ষার পরে যোগ দেন ওই দম্পতির পারিবারিক ব্যবসায়ে। জীবনের এই অভাবনীয় পট পরিবর্তনেও নিজের পুরনো পরিবারের
কথা ভোলেননি শেরু। নাম বদলে যিনি এখন শারু ব্রালি। বুরহানপুরের অস্পষ্ট স্মৃতিও ছিল তাঁর মনে।
আর ছিল অনেক দিন আগে ভাইদের সঙ্গে তোলা একটা ছবি।
ইন্টারনেটের চল হওয়ার পরে পুরনো পরিবারকে খোঁজার কাজটা সহজ হয়ে যায় শেরুর কাছে। গুগল ম্যাপের সাহায্যে খুঁজে পান খান্ডওয়ার গণেশ তলাই এলাকায় নিজের পুরনো বাড়িটিকেও।
২৪ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে দেখে রীতিমতো চমকে উঠেছিলেন ফতিমা বাই। তবে ভাষাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমস্যা। কেবল ইংরেজি বলতে পারেন শেরু। আর তাঁর মা ও ভাইরা কথা বলেন কেবল হিন্দিতে।
আপাতত অস্ট্রেলিয়া ফিরে গিয়েছেন শেরু। তবে নিজের আত্মীয়স্বজনের জীবন বদলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে গিয়েছেন। এও জানিয়ে দিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়াবাসী পালক বাবা-মারই তাঁর উপরে প্রথম অধিকার। এখন শেরুর ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছে খান্ডওয়া। |