লোকপাল বিল সংসদে পাশ করানোর জন্য আজ ফের কেন্দ্রকে হুমকি দিলেন অণ্ণা হজারে। যন্তর মন্তরে তাঁর এক দিনের উপবাস-মঞ্চ থেকে অণ্ণার হুঁশিয়ারি, অগস্ট মাসের মধ্যে যদি সমস্ত দাগি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু না হয়, তা হলে দেশ জুড়ে জেল ভরো আন্দোলনের ডাক দেবেন তিনি। ফের দিল্লির রামলীলা ময়দানে অনশনে বসবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কোনও আমলা বা নাগরিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিলে তাঁর সুরক্ষার জন্য ‘হুইসলব্লোয়ার’ আইন পাশেরও দাবি করলেন তিনি।
তবে অণ্ণা আজ শুধু লোকপাল বিল পাশের দাবি জানিয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার, জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধনের মতো দাবিও তুলেছেন। অণ্ণার দাবি, জমি অধিগ্রহণের সময় গ্রামসভার অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হোক। ভোট প্রার্থীদের কাউকে পছন্দ না হলে প্রত্যাখানের অধিকার দেওয়া হোক। কৌশলে জনভিত্তি বাড়াতে এ বার রামদেবের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করেছেন।
এর আগে জন লোকপাল বিলের দাবিতে অণ্ণা শেষ বার অনশন ধর্না করেছিলেন মুম্বইয়ে। কিন্তু তাঁর সেই আন্দোলন সে বার একেবারেই লোক টানতে পারেনি। তার পর থেকে অণ্ণা চুপচাপই ছিলেন। পাঁচ রাজ্যের ভোটেও অণ্ণা-সমর্থকরা বিশেষ প্রচারে যাননি। বরং রাজনৈতিক নেতৃত্ব এটাই মনে করছিলেন, যে অণ্ণা ক্রমশ প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন। সেদিক থেকে যন্তরে মন্তরে অণ্ণার আজকের এক দিনের উপবাসকে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার লড়াই হিসাবেই দেখছিলেন অধিকাংশ রাজনীতিক। তবে অণ্ণা আজ স্পষ্ট করে দেন যে, সরকারের সঙ্গে আর কোনও দর কষাকষিতে তিনি যাবেন না। কোনও চিঠিও লিখবেন না। তাঁর দাবি পূরণের জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের উপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবেন। |
জনভিত্তি বাড়াতে অণ্ণা যেমন রামদেবের সাহায্য নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তেমনই আজ ধর্নাস্থলে সামিল করা হয় ঝুপড়ি উচ্ছেদ কমিটি, ব্রাহ্মণ সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনকারী গোষ্ঠীর মতো কিছু সংগঠনকেও। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, আসলে অণ্ণা এবং তাঁর সহযোগীদের এত দিন কোনও ক্যাডার ছিল না। যা ছিল, তা নিতান্তই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ‘ফ্যান ক্লাব’। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে তাঁদের আন্দোলনে সামিল করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা যে কিছুটা উৎসাহ হারিয়েছেন, তা মুম্বইয়েই স্পষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে অণ্ণারা এ বার নিজেদের ক্যাডার তৈরি করতে চাইছেন।
সেই লক্ষ্যে অণ্ণা আজ দৃশ্যতই আরও আগ্রাসী হতে চেয়েছেন। বক্তৃতায় রাজনীতিকদের উদ্দেশ করে চাঁচাছোলা আক্রমণও করেছেন। লালুপ্রসাদ যাদবকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “রামলীলায় আমার ১২ দিন অনশনকে কটাক্ষ করে লালুপ্রসাদ বলেছিলেন, অনশনের পরেও গলার এত জোর কোথা থেকে হয়! কিন্তু দশ-বারো জন ছেলেমেয়েকে জন্ম দেওয়া ব্যক্তি এক জন ব্রহ্মচারীর শক্তি বুঝবেন কী করে?” অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা আক্রমণ শানিয়েছেন শরদ যাদব, পি চিদম্বরমদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, অণ্ণা প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেলেন কি? এক বছর আগে অণ্ণার আন্দোলনে অংশ নিয়ে এই যন্তর মন্তরেই ঢেউ তুলেছিল ভিড়। অথচ সংসদ ভবনের অদূরে দিল্লির স্থায়ী ধর্নাস্থলে কিন্তু আজ ভিড়ে ভাঁটা পড়েছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ও নতুন প্রজন্মের ভিড়, তাঁদের অকৃত্রিম উন্মাদনা দিনভর টিভির পর্দায় উঠে এসেছে ঠিকই। কিন্তু এক বছর আগের যন্তর মন্তর, রামলীলা ময়দানের তুলনায় আজকের জমায়েত আড়ে-বহরে দৃশ্যতই ছিল হালকা। যদিও আয়োজনের খামতি ছিল না। সাদা শামিয়ানার নীচে বড়সড় মঞ্চ। পিছনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা ‘শহিদ’দের ছবি। মঞ্চের দু’দিকে ডিজিটাল পর্দায় তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থা, দেশাত্মবোধক গান, অণ্ণা টুপি...। তবু সড়কের কেবল অর্ধেকটাই ভরাতে পেরেছেন অণ্ণা সমর্থকরা।
বাকি অর্ধেক জুড়ে ছিল আরও দুই আন্দোলনকারী গোষ্ঠীর ভিড়। তাঁরা না থাকলে নিঃসন্দেহে আরও হালকা দেখাত যন্তর মন্তর।
সুতরাং অণ্ণা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিলেও শেষ পর্যন্ত কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রইলই। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, আজ এক দিনের উপবাস করে জল মাপতে চাইলেন অণ্ণা। মুম্বইয়ে ভিড় না হওয়ার যে ভাবে তাঁকে মাত্র দু’দিনেই অনশন ভেঙে দিতে হয়, তেমন অস্বস্তির পুনরাবৃত্তি সহযোগীরা চাননি।
তবে অণ্ণাকে যে সরকার খুব হালকা ভাবে নিচ্ছে, তা-ও নয়। অণ্ণার উপবাসের দু ’দিন আগেই লোকপাল বিল নিয়ে সর্বদল বৈঠকও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, আসলে উত্তরপ্রদেশের ভোট বিপর্যয় বা শরিকি টানাপোড়েনের কারণে কেন্দ্রে কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল হতেই তার সুযোগ নিতে নেমে পড়েছেন কেজরিওয়ালরা। তবে সরকার যদি শীঘ্রই লোকপাল বিল সংসদে পাশ করে ফেলতে পারে, তা হলে অণ্ণারা হয়তো আর বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না। |