উভয়সঙ্কটে পড়ে অবশেষে অনাবাসী ব্যবসায়ী অংশুমান মিশ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হল বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীকে।
কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে গডকড়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির। তার পরে উপনির্বাচনেও সে ধারা অব্যাহত। এর মধ্যেই দলে কোনও আলোচনা ছাড়া অংশুমান মিশ্রের মতো বিতর্কিত ব্যবসায়ীকে ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যসভায় সমর্থন জানিয়ে দলে যেমন অশান্তি ডেকে এনেছেন, সে রাজ্যে শিবু সোরেনের সঙ্গে দলের জোটকেও বিপদে ফেলে দিয়েছেন গডকড়ী। দলে ‘বিদ্রোহের’ পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসাবে মিশ্রকে সমর্থন থেকে সরে এসেছেন তিনি। কিন্তু মিশ্র যে ভাবে দলের এক দল নেতার মুখে কালি ছিটিয়ে চলেছেন, তাতে সোমবার থেকেই সংসদে কোমর বেঁধে নামতে চলেছে কংগ্রেস। আর সে আক্রমণ যাঁদের সামলানোর কথা, সেই সুষমা স্বরাজ-অরুণ জেটলি দলের নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সব দায় সভাপতি গডকড়ীর। কারণ মিশ্রকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত তিনি একতরফা ভাবেই নিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আজ বিবৃতি দিয়ে অংশুমানের সব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও ‘হতাশার অভিব্যক্তি’ বলে বর্ণনা করতে হয়েছে গডকড়ীকে।
মিশ্রের প্রার্থীপদের বিরোধিতা করে বিজেপির এক দল নেতা গডকড়ীকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছিলেন। তাঁদের ‘বিদ্রোহে’ মিশ্রকে সমর্থন করা থেকে পিছিয়ে আসার কথা ঘোষণা করতে হয় গডকড়ীকে। তার পরেই তাঁর কাছ থেকে ‘বিদ্রোহী’ বিজেপি নেতাদের টাকাকড়ি নেওয়ার কথা ফলাও করে অভিযোগ করতে থাকেন অংশুমান। তিনি মুখ খোলায় বিজেপির অনেক নেতাই বিপদে পড়েছেন। |
দলের প্রথম সারির নেতাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে অথচ সভাপতি নীরব, এই বিষয়টি উল্লেখ করে দলের অনেকে ঘরোয়া স্তরে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, মিশ্রের এই বজ্রনির্ঘোষ আসলে গডকড়ীরই চাল। মিশ্র শুধু সেই সব নেতাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনছিলেন, যাঁরা দলের ভিতরে গডকড়ীর বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকী লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো বর্ষীয়ান নেতাকেও ছাড় দেননি সেই অনাবাসী ব্যবসায়ী। শুধু গডকড়ী বা তাঁর অনুগত নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনেননি মিশ্র। এ দিকে দলে এই ডামাডোলের ছায়া পড়েছে ঝাড়খণ্ডে জেএমএমের সঙ্গে জোটেও। তার দায়ও সুষমা-জেটলিরা গডকড়ীর কাঁধেই চাপিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিবৃতি দিয়ে অংশুমানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি ছাড়া পথ ছিল না গডকড়ীর।
এ দিকে এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন আডবাণীও। একটি প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মোদীও সেই প্রতিবেদনের ঢালাও প্রচারে নেমেছেন। আজ নিজের ব্লগে আডবাণী আপাত ভাবে মোদীর প্রশংসা করেই একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের জনমত সমীক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদী যে রাহুল গাঁধীর চেয়েও এগিয়ে, সে কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মোদী যে আবার বহু মানুষের কাছে ‘ঘৃণিত’, কথার মারপ্যাঁচে এ কথাও বলতে ছাড়েননি আডবাণী।
বিজেপির এক গুরুত্বর্পূণ নেতার কথায়, এই প্রবন্ধে আসলে প্রধানমন্ত্রী হতে চাওয়া দলের ‘দ্বিতীয় সারির’ নেতাদেরই কৌশলে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা।
সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো নেতারা নেতৃত্বের এই ‘দ্বিতীয় সারিতে’ পড়েন। কিন্তু তাঁদের উদ্বুদ্ধ করে আখেরে আডবাণীর লাভটা কি?
বিজেপির ওই নেতার ব্যাখ্যা, বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এক বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা আডবাণীর রয়েইছে। মোদী যে ভাবে এই পদে প্রার্থী হিসাবে নিজেকে তুলে ধরছেন, তাতে সুষমা-জেটলিরা এখনই তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হোন, এটাই কাম্য আডবাণীর। এক মাত্র তা হলেই দলে ‘সর্বসম্মত’ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম উঠে আসতে পারে। |