বাজেট এখন পুরনো খেলনা। আকর্ষণ ও উত্তেজনা এখন তলানিতে। মূল প্রস্তাবগুলির উপর আলোচনা শেষ হলেও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কিন্তু এখনও দেখা দিচ্ছে। আজ আমরা আলোচনা করব বাজেটের এমন কিছু খুঁটিনাটি দিক নিয়ে, যার প্রভাব পড়তে পারে সঞ্চয় তথা লগ্নির বাজারে।
৮০ সিসিএফ ধারায় কর সাশ্রয়কারী দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো বন্ডের কোনও উল্লেখ নেই এ বারের বাজেটে। ২০১০-’১১ সালের জন্য প্রথম অনুমোদন পেয়েছিল এই বন্ড। এখানে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর করছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সে বার। পরের বছর, অর্থাৎ ২০১১-’১২ সালের বাজেটে এই বন্ডের মেয়াদ এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়। এ বারের বাজেট প্রস্তাবে কিন্তু এই বন্ডের কোনও উল্লেখ নেই। অর্থাৎ মেয়াদ আর বাড়ছে না। মনে হয়, প্রত্যক্ষ কর বিধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এটা করা হয়েছে। ডিটিসি-তে কর সাশ্রয়কারী প্রকল্পের তালিকায় এই বন্ডের উল্লেখ নেই।
৮০ সিসিএফ ধারায় কর সাশ্রয়ের সুবিধা বিলোপ হলেও ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়সম্পন্ন করদাতাদের জন্য নতুন এক কর সাশ্রয়ের রাস্তা দেখিয়েছে এ বারের বাজেট। প্রস্তাব অনুযায়ী, রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস প্রকল্পের শর্ত মেনে ইক্যুইটিতে নতুন খুচরো বিনিয়োগকারীরা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লগ্নি করলে তার ৫০ শতাংশের উপর পাবেন কর সাশ্রয়ের সুবিধা। প্রকল্পটি সম্পর্কে বিশদ জানতে অবশ্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। ইক্যুইটিতে নতুন খুচরো লগ্নিকারী বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। আশা করা যায়, প্রকল্পটি শেয়ার বাজারের শক্তি বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।
শেয়ার বাজারে প্রকৃত লেনদেনের উপর সিকিউ- রিটিজ ট্রান -জাকশন ট্যাক্স বা এসটিটি ০.১২৫ \ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে করা হয়েছে ০.১ শতাংশ। আশা করা যায়, এর ফলে লগ্নিকারীরা প্রকৃত লেনদেনে উৎসাহিত হবেন। পরিষেবা কর বেড়ে ওঠায় সব মিলিয়ে খরচ অবশ্য খুব একটা কমবে না। যত বেশি সংখ্যায় খুচরো লগ্নিকারী বাজারে আসবেন, বাজারের পক্ষে ততই মঙ্গল।
৮০ডি ধারায় রোগ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাবদ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচকে ছাড় দেওয়া হয়েছে বাজেটে। মনে রাখতে হবে, এটি কোনও অতিরিক্ত সুবিধা নয়। ৮০ডি ধারায় স্বাস্থ্যবিমা বাবদ ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচের উপর করের যে সুবিধা পাওয়া যায়, এ বারের দেওয়া ৫,০০০ টাকা তারই অন্তর্গত, অতিরিক্ত নয়। অর্থাৎ স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখলে তবেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাবদ ৫,০০০ টাকার উপর করের সুবিধা পাওয়া যাবে।
করের ব্যাপারে প্রবীণ নাগরিকদের বয়স ৬৫ বছর থেকে কমিয়ে ৬০ বছর আগেই করা হয়েছিল। ৮০ডি ধারায় স্বাস্থ্য বিমার ব্যাপারেও প্রবীণত্বের বয়স কমিয়ে এ বার ৬০ বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ এ বার থেকে বয়স ৬০ বছর হলেই এই ধারায় পাওয়া যাবে ২০,০০০ টাকার উপর কর ছাড়ের সুবিধা।
শুধু স্বাস্থ্যবিমাই নয়, পরিবর্তন আনা হয়েছে জীবনবিমার ক্ষেত্রেও। বর্তমানে জীবনবিমার ক্ষেত্রে ৮০সি এবং ১০ (১০ডি) ধারায় করের সুবিধা পাওয়া যায় বাৎসরিক প্রিমিয়ামের তুলনায় বিমার অঙ্ক (‘লাইফ কভার’) কমপক্ষে পাঁচগুণ হলে তবেই। এ বারের বাজেটে বাৎসরিক প্রিমিয়াম এবং বিমার অঙ্কের অনুপাত বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ : ১০ বা দশগুণ। অর্থাৎ প্রিমিয়ামের উপর করছাড়ের সুবিধা এবং মেয়াদ শেষে প্রাপ্তির উপর কর রেহাইয়ের সুবিধা পেতে হলে বাৎসরিক প্রিমিয়ামের তুলনায় বিমার অঙ্ক অন্ততপক্ষে দশগুণ হতে হবে। মেয়াদ শেষে যদি কোনও বোনাস দেওয়ার কথা থাকে, তাকে লাইফ কভারের মধ্যে ধরা হবে না। এই পরিবর্তনের ফলে বিমার মেয়াদ বাড়বে। লগ্নির তুলনায় ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা বাড়বে। ‘বিনিয়োগ তথা বিমা প্রকল্প’-এর তুলনায় খাঁটি জীবনবিমার চাহিদা বাড়বে। বিমার তুলনায় বিনিয়োগই যাঁদের লক্ষ্য, এই পরিবর্তনের ফলে তাঁরা বিমা থেকে দূরে সরে যাবেন। ঝুঁকবেন অন্যান্য খাঁটি বিনিয়োগ প্রকল্পের প্রতি।
‘নারী-পুরুষ সমান সমান’, এ কথা মানা হয়েছে বাজেটে। কর বাবদ অতিরিক্ত সুবিধা বিলোপ হয়েছে মেয়েদের জন্য। এতে খুশি নারীবাদীরা। অখুশি অনেক মহিলা। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লক্ষ টাকা হওয়ায় কর বাবদ আগামী বছর পুরুষদের যেখানে সাশ্রয় হবে ২,০৬০ টাকা, সেখানে মেয়েদের বাঁচবে ১,০৩০ টাকা। |