বোলপুরে জমি পড়ে এক দশক
অধিগৃহীত জমিতে ফুড পার্ক গড়ার ভাবনা রাজ্যের
শিল্প হওয়ার কথা থাকলেও এক দশকে তা হয়নি। তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভও রয়েছে বিস্তর। বোলপুরের শিবপুর মৌজার সেই অধিগৃহীত জমিতে এ বার ‘ফুড পার্ক’ গড়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।
রবিবার ওই জমি পরিদর্শন করেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন শিল্পসংস্থা আইটিসি-র কিছু শীর্ষ কর্তা।
পরিদর্শন শেষে পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আইটিসি-র চেয়ারম্যানের কথাবার্তা হয়েছে। এখানে ফুড পার্ক করার কথা ভাবা হচ্ছে। তা ছাড়া, এখানে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) হাবেরও সম্ভাবনা রয়েছে।” আইটিসি-র এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর কে এন গ্রান্ট বলেন, “এ রাজ্যে আমাদের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প রয়েছে। এই জায়গাটি ঘুরে দেখলাম, বেশ ভাল। জাতীয় সড়কও খুব কাছে। শীঘ্রই আমাদের ‘টেকনিক্যাল টিম’ পরিদর্শনে আসবে। তার পরেই এখানে শিল্প করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ শিবপুর মৌজায় তাঁরা আসেন। পার্থবাবু ও গ্রান্ট ছাড়াও ছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা, মহকুমাশাসক (বোলপুর) প্রবালকান্তি মাইতি, আইটিসি-র এগজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজিব আরিফ প্রমুখ। অধিগৃহীত জমির মানচিত্র আইটিসি-কর্তাদের দেখান প্রশাসনের আধিকারিকরা। শিল্পমন্ত্রী তাঁদের জানান, কাছেই রয়েছে ২-বি জাতীয় সড়ক। বর্ধমান, দুর্গাপুর, কলকাতা শহর এবং ইলামবাজারের ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক এই এলাকা থেকে কতটা দূরে, তা-ও জানান।
এলাকার গুরুত্ব বোঝাতে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “কাছেই রয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিছু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুতের সাব-স্টেশন ও জার্মান জল প্রকল্পও এখান থেকে খুব দূরে নয়।”
অধিগৃহীত জমির পরিদর্শনে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়
ও আইটিসি-র কর্মকর্তারা। বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
আইটিসি-র প্রতিনিধিদের জেলাশাসকের আশ্বাস, “আপনারা শিল্প গড়ার সবুজ সঙ্কেত দিলে বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলে এখানেই পৃথক একটি সাব-স্টেশন তৈরি করা হবে।” পরে বিশদ আলোচনার জন্য শিল্পমন্ত্রী আইটিসি-র প্রতিনিধিদের শ্রীনিকেতন রোডের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাংলোয় নিয়ে যান।
শিল্পস্থাপনের জন্য ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে শিবপুর মৌজার প্রায় ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে প্রায় ২০৬ একর জমির উপরে শিল্প করা হবে বলে তৎকালীন বাম-সরকার জানিয়েছিল। রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে অবশ্য কেউ শিল্প গড়তে আসেনি। অনেক জমির মালিক ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নিলেও শ’খানেক চাষি নেননি। শিল্প স্থাপন না হওয়ায় এবং জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে জমিদাতারা ২০০৮ সালে ‘শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’ গড়ে আন্দোলনে নামেন। সেই সময় পার্থবাবু এলাকায় এসে আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়ে গিয়েছিলেন। অধিগৃহীত জমির সিমেন্টের সীমানা খুঁটি উপড়ে জমিদাতাদের একাংশ ধান চাষ শুরু করেন। এখনও ফি বছর ওই জমিতে চাষ হয়।
শিল্পমন্ত্রীর জমি পরিদর্শনের খবর পেয়ে এ দিন কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক-সহ অন্য সদস্যেরা সেখানে আসেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রূপায়ণমন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ এবং তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা জমির ন্যায্য দাম চাই। কর্মসংস্থানও চাই। অধিগ্রহণের সময় বিজ্ঞপ্তিতে বিঘা প্রতি ৬৮ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ৪৭,৪১৩ টাকা দেওয়া হয়। এখনকার বাজারদর অনুযায়ী সরকারের কাছে রাস্তার পাশের জমির জন্য বিঘা প্রতি ৬ লক্ষ টাকা এবং ভিতরের জমির জন্য সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করছি।”
পরে মোজাম্মেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রীও। মোজাম্মেল বলেন, “যাঁরা ইতিমধ্যেই চেক নিয়েছেন, তাঁদের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দেওয়া হোক। আর যাঁরা নেননি, তাঁদের প্রাপ্যও বাজারদর অনুযায়ীই মেটাতে হবে। বর্গাদার, খেতমজুর, পাট্টাদারদেরও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
শিল্পমন্ত্রীর আশ্বাস, “ওঁদের দাবিদাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.