‘তোলা না দেওয়ায়’ এক মাছ ব্যবসায়ীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগের তদন্তে নামল রেলপুলিশ। হাওড়া রেলপুলিশের ডিএসপি (সদর) ধীরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার সকালে বোলপুরে গিয়ে মৃত ব্যবসায়ী গোবিন্দ সিংহের মা ও এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের ভিডিও-রেকর্ডিং করেন। হাওড়ার রেলপুলিশ সুপার মিলনকান্তি দাস বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোলপুরের কাছে কেটেপোলে রেলসেতুর নীচে বর্ধমানের গুসকরা পুরসভার বলডাঙা এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দের (২৮) দেহ মেলে। সে দিন তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। পর দিন তাঁর মা ভাগ্য সিংহ দেহটি শনাক্ত করেন। বোলপুর ব্যবসায়ী সঙ্ঘের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শনিবার রাতে ভাগ্যদেবী বোলপুর জিআরপি ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, তিনি ও তাঁর ছেলে হাওড়া-মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন। তিনি গুসকরায় নেমে যান। গোবিন্দ ২০ কেজি চিংড়ি নিয়ে বোলপুরে যাচ্ছিলেন। ওই ট্রেনের প্রত্যক্ষদর্শীরা তাঁকে জানিয়েছেন, ‘মান্থলি টিকিট’ থাকা সত্ত্বেও জনাকয়েক রেলপুলিশ তাঁর ছেলের কাছে তোলা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তাঁকে মারধরও করা হয়। অজয় নদ পার হওয়ার পরে রেলপুলিশের কর্মীরা গোবিন্দকে ট্রেন থেকে বাইরে ফেলে দিয়ে খুন করেন বলে অভিযোগ ভাগ্যদেবীর। এ দিন রেলের ডিএসপি-র কাছেও একই দাবি করেন ওই মহিলা। তাঁর বক্তব্য, “অভিযোগের বয়ান আমার। প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাকে জানিয়েছেন, তোলা না দেওয়াতেই রেলপুলিশ ছেলেকে ফেলে দিয়েছে।” বোলপুর ব্যবসায়ী সঙ্ঘের দুই সদস্যের নাম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। এ দিন তাঁদেরই একজন বোলপুর শহরের হাটতলার বাসিন্দা সুভাষ সাহা অবশ্য ডিএসপি-কে বলেন, “কামরার দরজার সামনে রেলপুলিশের কয়েক জনের সঙ্গে গোবিন্দর তর্কাতকি চলছিল। আমি কামরার ভিতরে ছিলাম। তাই তাঁকে কেউ দরজার বাইরে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল কি না দেখতে পাইনি।” পরে ডিএসপি কেটেপোলের ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন।
রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে গোবিন্দ বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে ছিলেন। টিকিট পরীক্ষক ও রেলপুলিশের কর্মীদের কামরায় উঠতে দেখে তিনি ভয় পেয়ে দরজার পাদানিতে গিয়ে দাঁড়ান। কোনও ভাবে হাত ফস্কে তিনি নীচে পড়ে যান। তবে তাঁকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও ভাগ্যদেবীর বক্তব্য, “আমার ছেলে বরাবর মান্থলি টিকিট কেটেই যাতায়াত করত। বিনা টিকিটের কথা পুরোপুরি মিথ্যা।’’ শনিবার রাতে রেলপুলিশ ইন্সপেক্টর (ব্যান্ডেল) মহম্মদ এ নুর জানিয়েছিলেন, ওই ট্রেনে থাকা কনস্টেবলদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বোলপুর ব্যবসায়ী সঙ্ঘের সম্পাদক সুনীল সিংহ দাবি করেন, “রেলকেই মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” |