নিজস্ব সংবাদদাতা • পূর্বস্থলী |
বাড়ি ফেরার পথে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হলেন এক প্রৌঢ়। শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে পূর্ণ ঘোষ (৫৫) নামে ওই ব্যক্তিকে বোমা মেরে খুন করা হয়। নিহতের বাড়ি লক্ষ্মীপুর ঘোষপাড়ায়। এই ঘটনায় আলুনির মাঠ এলাকার দশ জনের নামে রবিবার পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ করেন নিহতের পরিবারের লোকজন। এই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যেই সুকুমার মণ্ডল এবং রাম সমাজপতি নামে দু’ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে বিজেপি থেকে নির্বাচিত মাজিদা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ ছিয়ালকে। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “দু’জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে।”
মাজিদা পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর এলাকায় ঘোষপাড়া এবং আলুনির মাঠ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। ২০১০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই বিবাদ চরমে পৌঁছয় একটি খেলার মাঠের দখল নিয়ে। আলুনির মাঠের বাসিন্দারা বহু বছর ধরে যে খেলার মাঠ ব্যবহার করে আসছেন, তাতে তাঁদেরও অধিকার আছে বলে দাবি করেন ঘোষপাড়ার বাসিন্দারা। এ নিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। পাশাপাশি দুই এলাকার রেষারেষিতে জড়িয়ে পড়ে সমাজবিরোধীরাও। বেরিয়ে পড়ে বন্দুক, পাইপগান, বোমা-সহ নানা অস্ত্র। দু’পক্ষের লড়াইয়ে প্রাণ যায় পাঁচ জনের। এর পরে ঘর ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। গোটা লক্ষ্মীপুর জুড়ে তখন আতঙ্কের পরিবেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে দু’পক্ষেরই কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এলাকায় বসানো হয় পুলিশ ক্যাম্প। কিন্তু, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্যাম্প বসানো হলেও লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। প্রায়ই রাতের অন্ধকারে সেখানে চলে বোমাবাজি।
পূর্ণবাবুর পরিবারের লোকজনের দাবি, শনিবার বিকেলে ছানা বিক্রি করতে স্থানীয় সিংহারি বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় কাছাকাছি অপেক্ষা করছিল দুষ্কৃতীদের দলটি। পূর্ণবাবুকে দেখে প্রথমে তারা একটি বোমা ছোড়ে। বোমার আঘাতে তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে লক্ষ করে আরও কিছু বোমা ফাটিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এর পরেই বোমা ফাটাতে ফাটাতে এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। রাতে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রবিবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যালে।
উল্লেখ্য, খেলার মাঠ দখলকে ঘিরে যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল, তার মধ্যে ছিলেন পূর্ণবাবুর ছেলে মেঘা ঘোষ। পাশাপাশি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টির অভিযোগ ছিল পূর্ণবাবুর বিরুদ্ধেও। তবে শনিবার খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ যে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে তারা নির্দোষ বলে দাবি বিজেপি-র। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বিজেপি নেতা তাপস দে বলেন, “আলুনির মাঠ এলাকার ৫০ ঘর বাসিন্দা আমাদের দলের সমর্থক। ঘটনার সময় আতঙ্কিত হয়ে ওরা পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পুলিশ এখন মিথ্যা করে আমাদের সমর্থকদের গ্রেফতার করেছে।”
অন্য দিকে, তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে অরাজনৈতিক বলে দাবি করেছে। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শনিবারের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমাদের আশঙ্কা পুরনো বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করতে বলা হয়েছে।” |