রাজস্ব ঘাটতি কমাতে কেন্দ্রেরই দ্বারস্থ হতে হবে অমিতকে
মবে রাজস্ব ঘাটতি। অন্তত এমনই দাবি। কিন্তু বছর শেষে তার জন্য অমিত মিত্রকে পুরোটাই নির্ভর করতে হবে মনমোহন-প্রণবের সদিচ্ছার উপরে। এক ঝলকে এটাই পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটের মূল ছবি।
কার্যত কেন্দ্রীয় বদান্যতা পেতে পারেন, এটা ধরে নিয়েই অমিত মিত্র তাঁর বাজেট প্রস্তাব পেশ করলেন। সেই কেন্দ্রীয় সহায়তা না পেলে কী হবে বা হতে পারে, তার কোনও ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরের রাজ্য বাজেটের অনেকটাই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গ্র্যান্ট-ইন-এড’ খাতে গত আর্থিক বছরের তুলনায় অতিরিক্ত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা পাওয়া না পাওয়ার উপরে। গত আর্থিক বছরে এই খাতে ১৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা পাওয়া যাবে ধরে নিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আর্থিক বছরের শেষে সেই প্রাপ্তি প্রায় ৩ হাজার কোটি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকায়। আগামী আর্থিক বছরে এই ‘গ্র্যান্ট-ইন-এড’ খাতে ২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে অমিতবাবু ধরে নিয়েছেন। সেই কারণেই মনমোহন-প্রণবের সদিচ্ছার উপরেই নির্ভর করে আছে অমিত মিত্রর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেটের সার্বিক সাফল্য।
বাজেট পেশ করতে গিয়ে অমিতবাবু এমনিতে কেন্দ্রীয় ‘সহায়তা’ নিয়ে অন্তত দু’টি ক্ষেত্রে হতাশা প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, আর্থিক সঙ্কটের পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজ্য সরকার ঋণের সুদ ও আসল শোধ করার ক্ষেত্রে তিন বছরের ছাড় চেয়েছিল। অমিতবাবুর কথায়, “পাইনি।” দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সার্বিক ঋণকে পুনর্গঠন করার প্রস্তাবও কেন্দ্রের কাছে দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্র কোনও সাড়া দেয়নি। ফলে ‘গ্র্যান্ট-ইন-এড’ বাবদ যে অতিরিক্ত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে চলতি বছরের অভিজ্ঞতার নিরিখে। উল্লেখ্য, আগামী আর্থিক বছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রভৃতি খাতে রাজ্যকে মোট ২৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার ঋণ শোধ করতে হবে।
আগামী বাজেটে রাজস্ব ঘাটতিকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে বলে অমিতবাবু দেখিয়েছেন। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছরের সঙ্গে তুলনা টানলে এই পরিমাণ ১০ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা কম। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে অমিতবাবু এক ধাক্কায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ আগের বছরের থেকে ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারবেন। কিন্তু সেখানেও সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ রাজস্ব আয়ের মধ্যে রাজ্যের আদায়ী কর, কর-বহির্ভূত আয় ছাড়াও দু’টি বড় বিষয়ই হল কেন্দ্রীয় কর ও শুল্ক বাবদ প্রাপ্য রাজ্যের অংশ (২১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা) ও কেন্দ্রীয় ‘গ্র্যান্ট-ইন-এড’ (২০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা)। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কমে গেলেই রাজস্ব ঘাটতি আর অমিত মিত্রর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
২০১২-১৩ আর্থিক বছরে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে দাঁড়াচ্ছে ২৬ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। অন্য দিকে, সরকারি নথিতে রাজ্যের নিট মোট উৎপাদন (নেট এসজিডিপি) দেখানো হয়েছে ৫ লক্ষ ২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। শতাংশের হিসেবে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে নিট এসজিডিপি-র ৫.৩ শতাংশ। রাজ্য অর্থ দফতর সূত্রের বক্তব্য, প্রকৃত পক্ষে এই পরিমাণ ৫.৬ থেকে ৫.৭-এর মধ্যেই থাকবে। উল্লেখ্য, জাতীয় ক্ষেত্রে ২০১১-১২ সালে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপি-র ৫.৯ শতাংশ। আগামী আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে জিডিপি-র ৫.১ শতাংশ। তবে এই নিয়ে আপাতত অমিতবাবুর চিন্তার কিছু নেই। কারণ ফিনান্সিয়াল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেট ম্যানেজমেন্ট (এফআরবিএম) আইনের প্রয়োগ মুলতুবি থাকছে ২০১৫ সাল পর্যন্ত। সুতরাং রাজকোষ ঘাটতিকে ৩%-এ নামিয়ে আনার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অমিতবাবু আরও কয়েক বছর সময় পাবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.