বেসরকারি হাসপাতাল
বিধি মানতে বাধ্য করে না প্রশাসন, সুরক্ষা শিকেয়
হাসপাতাল চলছে রমরমিয়ে। কাগজে-কলমে সরকারি বিধি মানার অঙ্গীকারও রয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি বিধি মানছে বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলি? আমরি-কাণ্ডের পর রাজ্য জুড়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার পর কিছু দিন শোরগোল ফেলে পরিদর্শন অভিযানও করেছে প্রশাসন। তাতেও কি বিধি মানতে বাধ্য করা গিয়েছে! মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফের পরিষ্কার হয়ে গেল, সরকারি আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম।
যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সবিতেন্দ্র পাত্রের দাবি, “ঘটনার পর নথিপত্র খতিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, ওই হাসপাতালটি স্বাস্থ্য দফতরের বিধি মেনেই চলছিল।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এমন দাবি করলেও স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ কর্মী থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের কেউ কেউ মনে করছেন, সমস্ত বিধি যথাযথ মেনে চলছিল না ওই হাসপাতাল। বিধি মেনে চললে দুর্ঘটনা ঘটত না।
অগ্নিকাণ্ডের পরে সুনসান
মেদিনীপুরের বেসরকারি হাসপাতাল।
বন্ধ মেদিনীপুরের ওই হাসপাতালের
বেসমেন্টে যাওয়ার রাস্তাও।
মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতিরও অভিযোগ, “সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই চলছিল হাসপাতালটি। ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগই রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরকে যথাযথ তদন্ত করতে হবে।”
কী অভিযোগ রয়েছে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে? অভিযোগ, সরকারি বিধি মেনে যে সংখ্যায় চিকিৎসক বা নার্স থাকার কথা, তা-ও নেই ওই হাসপাতালে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ২০টি শয্যা-পিছু এক জন করে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) থাকা প্রয়োজন। ৫টি শয্যা-পিছু এক জন করে নার্স। কিন্তু ওই হাসপাতাল খাতায়-কলমে ৫ জন আরএমও থাকার কথা জানালেও বাস্তবে মাত্র ৩ জন রয়েছেন বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসাপাতালের চিকিৎসক এবং অন্য হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে এসে অস্থায়ী ভিত্তিতেই চলছিল স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবসা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সও নেই বললেই চলে। খাতায়-কলমে ৫টি শয্যা-পিছু নার্স রয়েছে দেখানো হলেও তাঁদের বেশিরভাগেরই প্রশিক্ষণ নেই বলেই অভিযোগ। নামে আইসিসিইউ থাকলেও, তার পরিকাঠামো নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অথচ, কলকাতার যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের মতো পরিষেবার বিজ্ঞাপনে মোটা টাকাই নেওয়া হত রোগীদের কাছ থেকে। এক প্রসূতির মায়ের অভিযোগ, “ওখানে চিকিৎসা পরিষেবা বলে কিছু নেই। সব নিজেদেরই করতে হয়।”
সিঁড়ির নীচে বিপজ্জনক তার
মেদিনীপুর মেডিক্যালে।
অগ্নিকাণ্ডের
পরের দিন।
সব জেনেও স্বাস্থ্য দফতর ‘নীরব দর্শক’ হয়েই থেকেছে বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতালের সঙ্গেই রয়েছে ডায়গনিস্টিক সেন্টার। সেখানেও স্বাস্থ্য দফতরের বিধি মেনে রেডিয়োলজিস্ট বা প্যাথলজিস্ট রাখা হয় না বলে অভিযোগ। কাজ জানা কয়েক জনকে দিয়েই রক্ত, প্রস্রাব থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়। তবে রিপোর্টে বিশেষজ্ঞের সই করিয়ে নেওয়া হয়। অভিযোগ, এ রকম কিছু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ফাঁকা রিপোর্টেই আগেভাগে সই করানো থাকে। বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এমন অনেক অভিযোগই গিয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনও তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। সংকীর্ণ গলিপথে পাঁচ-তলা হাসপাতাল-বাড়িই বা তৈরি হল কী ভাবে, পুরসভা কী করছিলসে প্রশ্নও রয়েছে। ‘অন্য উপায়ে’ সব বন্দোবস্ত করে ফেলার খবর উড়ছে শহরে।
আপাতত, হাসপাতালটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, হাসপাতালের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ফায়ার-লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছিল বটে তবে দমকলের কাছ থেকে তারা এখনও লাইসেন্স পায়নি। ইতিমধ্যেই সংস্থার কর্তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি আদালতে উঠেছে। আমরাও রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। আদালতের নির্দেশ ও রাজ্য সরকারের নির্দেশের পরেই ওই হাসপাতাল সম্বন্ধে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তত দিন হাসপাতালটি বন্ধই থাকবে।” তবে, ইতিমধ্যেই কোনও কোনও মহল থেকে হাসপাতালটি দ্রুত খোলানোর জন্য তদ্বির শুরু হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে! এই তদ্বির-প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ এবং চিকিৎসকমহলের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ছবিগুলি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.