|
|
|
|
রাজ্যের ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে লোকসভায় সরব বামেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এত দিনে হয়তো রাজনীতির বৃত্ত সম্পূর্ণ! এক বছর আগে পর্যন্ত সংসদে সুযোগ পেলেই পশ্চিমবঙ্গে ‘সিপিএমের সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হতেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতেন। দাবি জানাতেন, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের! আজ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সংসদে একই ভূমিকায় অবতীর্ণ বামেরা! মজার বিষয়, অতীতে বামেদেরই দেখানো পথ অনুসরণ করে তাঁদের বাধা দিতে নামলেন তৃণমূল সাংসদরা। যার অর্থ, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার প্রশ্নে সংসদের ছবিটার পরিবর্তন কিন্তু হল না। হল স্রেফ ভূমিকার পরিবর্তন!
পূর্ব ঘোষণা মতোই আজ অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবন চত্বরে ধর্নায় বসেন রাজ্যসভা ও লোকসভার বাম সাংসদরা। পরে লোকসভার ‘জিরো আওয়ারে’ সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া মানবাধিকার নিয়ে বলতে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ঘটনা চলছে। হাজার হাজার কর্মী ঘরছাড়া, গ্রামছাড়া। গোটা রাজ্যে সন্ত্রাসের রাজত্ব। মহিলারাও নিরাপদ নন। ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা হরদম ঘটছে। এমনকী এক জন প্রাক্তন বিধায়ককে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার বলে কিছু অবশিষ্ট নেই।”
বস্তুত আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। তাই অতীতে মমতা সংসদে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সন্ত্রাস বা আইনশৃঙ্খলার প্রসঙ্গ তুললেই স্পিকার তাঁকে বিরত করতে চাইতেন। সেই কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে বলার অনুমতি চেয়ে মমতা কৌশলে সিপিএমের ‘সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ তুলতেন। আজ সিপিএমও সেই পথেই হেঁটেছে। স্পিকার মীরা কুমার বাসুদেবকে বাধা দিয়ে বলেন, “কেন এই সব বিষয় তুলছেন, যা এখানে তোলার কথা নয়?” অতীতে যে ভাবে মমতা থামতেন না, আজ বাসুদেবও সেই ভাবেই না থেমে বলে চলেন।
বামেরা আজ অবশ্য মমতার পথে হেঁটে রাজ্যে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি করেননি। তবে সংসদ ভবনের বাইরে ধর্নার সময় বাম সাংসদদের অতীতে ‘সিপিএমের সন্ত্রাস’ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এ-ও প্রশ্ন ওঠে যে, সুশান্ত ঘোষ, লক্ষণ শেঠের মতো তাবড় সিপিএম নেতাদের যখন সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক খুনের অভিযোগে একের পর এক জেলে যেতে হচ্ছে, তখন তাদের মুখে এমন অভিযোগ মানায় কি না? জবাবে সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “লক্ষণ, সুশান্তর প্রশ্ন এখানে উঠছে কেন? রাজ্যে সাধারণ সিপিএম ও বাম কর্মীদের কথা আমরা বলছি।” সিপিএমের অভিযোগ নিয়ে লোকসভায় পাল্টা সরব হয় তৃণমূল। পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএমের এই সব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা।”
যুযুধান দু’তরফের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বহর দেখে রাজনৈতিক নেতৃত্ব মনে করছেন, এই চাপানউতোরের এটাই শেষ দিন নয়। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ও পরে তা আরও বাড়বে। |
|
|
|
|
|