|
|
|
|
কর্মী-বিন্যাসকেই দোষারোপ |
ডাকের ডামাডোলে চিঠি বেপাত্তা, চাকরি বেহাত |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
আগরার দীপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪ ফেব্রুয়ারি স্পিডপোস্টে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের কাঁদিতে। দেড় মাসেও সেই চিঠি গন্তব্যে পৌঁছয়নি। ফলে খোয়াতে হল তাঁর শিক্ষকতার কাজ করার স্বপ্ন। দীপিকার পাঠানো খামে ছিল তাঁর মাধ্যমিকের মার্কশিট ও অ্যাডমিট কার্ড। সেগুলির প্রতিলিপি ‘অ্যাটেস্টেট’ করানোর কথা ছিল তাঁর এক আত্মীয়ের। সেই নথি স্কুলে দেখানোর কথা ছিল। চিঠি বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় ওই চাকরি তো হাতছাড়া হয়েছেই। এখন দীপিকার চিন্তা, কী ভাবে ফেরত পাওয়া যাবে ওই মার্কশিট এবং অ্যাডমিট কার্ড? কোথায়, কার কাছে খোঁজ করবেন?
প্রায় একই অবস্থা শ্রীরামপুরের দম্পতি শেখ মুজিবর রহমান এবং অঞ্জনা বোধকের। তাঁদের বাড়িতে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসার অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরে! করণিকের পদে মুজিবরের পরীক্ষা ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি। তিনি চিঠি পান ১০ মার্চ। আর রাজ্য পুলিশের ফার্স্ট ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল-পদে তাঁর স্ত্রী অঞ্জনার পরীক্ষা ছিল ৩১ জানুয়ারি। চিঠি আসে ৪ ফেব্রুয়ারি।
তিন জনেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উপর মহলে। রাজ্যের কয়েক লক্ষ চিঠি এই রকম ‘দিশাহারা’ বা ‘দীর্ঘসূত্রতা’ রোগের শিকার। অভিযোগের পর অভিযোগ আসছে ডাক বিভাগে। কোনও চিঠি বিলি হয়েছে অনেক দেরিতে। কোনওটি বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে আছে ডাকঘরে। বিলি-ব্যবস্থা যে ব্যাহত হচ্ছে, ডাক-কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের আশ্বাস, শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে। সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ ‘শর্টিং’ অর্থাৎ চিঠি বাছাইয়ের নতুন ব্যবস্থার পরিকাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া।
কী হচ্ছে ওই ব্যবস্থায়?
ডাক বিভাগ তাদের বিমানবন্দরের অফিসে ‘অটোমেটিক মেল প্রসেসিং সেন্টার’ (এএমপিসি) তৈরি হচ্ছে। সেখানে দু’টি যন্ত্রের মধ্যে একটিতে ঘণ্টায় ১৬ হাজার চিঠি বাছাই হবে। দ্বিতীয় যন্ত্রে বাছাই হবে ৩৬ হাজার চিঠি। দু’টি যন্ত্রের জন্য খরচ হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। পরীক্ষামূলক ভাবে যন্ত্র দু’টির কাজ চলছে। তাই শর্টিং মার খাচ্ছে বলে ডাক বিভাগ সূত্রের খবর।
এখন চিঠি ও পার্সেল শর্টিং হয় কম্পিউটারের সাহায্যে। ঘণ্টায় এক-এক জন শর্টারের এক হাজার চিঠি বাছাই করার কথা। এই কাজটা বন্ধ হয়নি। তা হলে সমস্যাটা কোথায়?
আধুনিকীকরণের জন্য বিমানবন্দর এবং কলকাতা জিপিও-র মধ্যে কিছু কাজের অদলবদল হয়েছে। এর জন্য ‘কর্মী-বিন্যাস’ যেমনটি হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস প্রভাবিত ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর রেলওয়ে মেল সার্ভিস’-এর আঞ্চলিক সম্পাদক পাঁচুগোপাল দত্তবণিক। তিনি বলেন, “কলকাতা ও সংলগ্ন চার জায়গার আরএমএস অফিসের চিঠি ও পার্সেল ১২ মার্চ থেকে বস্তাবোঝাই করে পাঠানো হচ্ছে বিমানবন্দরের অফিসে। বিমানবন্দরে আমাদের অফিসে দৈনিক লক্ষাধিক খাম-পার্সেল জমে যাচ্ছে।” আধুনিকীকরণের জন্য কর্মী-বিন্যাস যথাযথ ভাবে হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সিটু প্রভাবিত সর্বভারতীয় ডাককর্মী সংগঠন (এআইআরএমএ-এমএমএসসইউ)-এর আঞ্চলিক সম্পাদক সমীর বর্ধনও। তিনি বলেন, প্রায় ৫০০ কর্মী দিনে দু’লক্ষেরও বেশি চিঠি বাছাই করেন। কিন্তু কাজ অদলবদল হওয়ায় জিপিও-র বেশ কিছু কর্মী হাত গুটিয়ে বসে আছেন।
কর্মী-নেতাদের হিসেব অনুযায়ী বিমানবন্দরের ডাক অফিসে আটকে আছে প্রায় ছ’লক্ষ খাম-পার্সেল। এই হিসেব মানতে রাজি নন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল (বেঙ্গল সার্কেল) সরিৎকুমার চক্রবর্তী। তবে আটকে থাকা চিঠির ঠিক সংখ্যাও জানাতে পারেননি তিনি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের যে-ভাবে এবং যত সংখ্যায় ওই দুই বিভাগের মধ্যে অদলবদল করা উচিত ছিল, তা যে হয়নি, সেটা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন ওই ডাক-কর্তা। ওই সব কর্মীকে যথাযথ ভাবে বদলি করা যায়নি কেন? তিনি বলেন, “অনিচ্ছুক কর্মীদের বদলি করা হবে না এই মর্মে ইউনিয়নের সঙ্গে আগাম চুক্তি করতে হয়েছে আমাদের।”
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে?
সিপিএমজি বলেন, “সাধারণ চিঠি বিলি ঠিকঠাক হতে দিন দশেক লাগবে। তবে স্পিডপোস্ট বিলির ব্যাপারটা চলতি সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।” তিনি জানান, নানা রকম পরীক্ষার পরে শর্টিংয়ের নয়া ব্যবস্থা মে মাসের শেষে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|