|
|
|
|
রাজ্য বাজেট |
আজ খরচ কমিয়ে আয় বাড়ানোর দিশা দেখানোই চ্যালেঞ্জ অমিতের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বামপন্থীদের তৈরি বাজেট দেখেছেন রাজ্যবাসী। এত বছর পরে আজ, শুক্রবার বিধানসভায় ‘অ-বাম’ বাজেট পেশ করবেন তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
বামফ্রন্ট সরকারের বিদায়ের পর গত বছরের ২৪ জুন ‘ভোট অন অ্যাকাউন্টস’ পেশ করেছিলেন অমিতবাবু। এর পর ১১ অগস্ট বিধানসভায় তিনি পেশ করেন রাজ্যের আর্থিক বিবরণী। কার্যত নতুন কর না-বসিয়ে সেই সময়ে তিনি বাড়তি ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের কথা বলেছিলেন। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল ৬,৩৯০ কোটি। এর মধ্যে আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে ৬০৬ কোটি টাকা এবং অনলাইন লটারি থেকে ১২৭ কোটি টাকা আদায় করার কথা বলা হয়েছিল।
সাধারণ মানুষের উপরে কার্যত কর না-বসিয়ে কী করে বাড়তি টাকা আদায় হবে, তার পদ্ধতিও বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য ছিল, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কর আদায় পদ্ধতিকে আরও সরল করে তিনি বাড়তি রাজস্ব আদায় করবেন। অমিতবাবু বলেছিলেন, যাঁরা ঠিকমতো কর দেবেন তাঁদের জন্য চালু করা হবে পুরস্কার। কর ফাঁকি দিলে দেওয়া হবে কড়া শাস্তি। এর ফলে রাজস্ব আদায় বাড়তে শুরু করবে। অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল, রাজস্ব ঘাটতি ১৭,০০০ কোটি থেকে নামিয়ে আনা হবে ৮,২০০ কোটিতে। রাজকোষ ঘাটতি ২১,০০০ কোটি থেকে নামিয়ে আনা যাবে ১৫,৫৬১ কোটিতে। অর্থমন্ত্রী ওই সময়ে বিধানসভায় জানান, বেতন, পেনশন, সুদ বাবদ রাজস্বের ৯৪ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। এই পরিমাণ তিনি ৭৪ শতাংশে নামিয়ে আনবেন।
অর্থমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুতি কতটা পালন করতে পেরেছেন, সেটা শুক্রবার যখন তিনি আর্থিক বিবরণী পেশ করবেন তখনই স্পষ্ট হবে। তবে অর্থ দফতর সূত্রে যা তথ্য জানা গিয়েছে, তা অনেকের কাছেই বিশেষ আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯,৫৩৮ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২৬,৩১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ঘাটতি প্রায় ১৩,২২০ কোটি টাকা। অর্থ দফতরের আধিকারিকরা মনে করছেন, মার্চ মাসের মধ্যে এই ঘাটতি পূরণ করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অথচ সরকারের খরচের বহর বেড়েই চলেছে। এর ফলে রাজকোষের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বললেই চলে।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, গত বছর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নতুন সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে বড় রকমের আর্থিক সাহায্য প্রত্যাশা করছিল। অর্থমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, বাইরে থেকে একটা বড় রকমের সাহায্য পেলে কোষাগারের হাল ফেরাতে সুবিধা হবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা কার্যত পূরণ হয়নি। এ বার আর তাই কেন্দ্রের সাহায্যের প্রত্যাশায় না-থেকে রাজ্যের অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। সেটাই তাঁর কাছে সব চেয়ে বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ হবে বলে মনে করছেন রাজ্যের অর্থনীতিবিদরা।
এই কাজে প্রধান অসুবিধা কী?
অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, এ রাজ্যে বড় শিল্পের সংখ্যা হাতে গোনা। এর মধ্যে নতুন করে কোনও শিল্পও হয়নি। রাজ্যে যে সব ব্যবসা রয়েছে, তা থেকে আয় খুব একটা বাড়ানো সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের উপর কর বসানোও মমতা-সরকারের নীতি নয়। তাই কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রণব মুখোপাধ্যায় যেমন হ্যামলেটের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘নির্মম’ হওয়ার কথা বলে অনেক ক্ষেত্রেই কর বাড়িয়েছেন, এই সরকার তা-ও করতে পারবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তা হলে আয় বাড়বে কী করে?
অর্থ দফতরের কর্তাদের মতে, ‘নির্মম’ না হয়েও দু’ভাবে আয় বাড়ানো সম্ভব।
১) গত বারের মতো কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে (আবগারি ও অনলাইন লটারির মতো) বাড়তি কর বসিয়ে।
২) খরচ কমিয়ে। কিন্তু আবগারি ক্ষেত্রে বার বার কর বসানোর বিপদও রয়েছে। অর্থ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, গত বার অর্থমন্ত্রী আবগারি শুল্ক (মূলত দেশে তৈরি বিদেশি মদ) এবং অনলাইন লটারির উপরে কর বসানোয় উল্টো বিপত্তি হয়েছে। বিদেশি মদের দাম এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় তার বিক্রি মার খেয়েছে। এর ফলে ক্ষতি হয়েছে দু’ভাবে। এক দিকে, রাজস্ব আদায় আশানুরূপ হয়নি। পাশাপাশি বেড়েছে ভেজাল মদ ও চোরা পথে অন্য রাজ্য থেকে আনা মদের কারবার। অন্য দিকে, দেশি মদের দোকানও বাড়ানো হয়নি। ফলে চাহিদা ও জোগানের বিস্তর ফারাক হয়ে যাওয়ায় সেই বাজারে থাবা বসিয়েছে বেআইনি চোলাই মদ। কম দামে ভাল মদ না-পেয়ে সাধারণ মানুষের একাংশ ঝুঁকছেন বিষাক্ত চোলাই মদের দিকে। এর মধ্যেই মগরাহাটে চোলাই মদ খেয়ে মারা গিয়েছেন ১৭২ জন। অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ মনে করেছেন, আবগারি শুল্ক আর বেশি বাড়ালে বেআইনি মদের কারবার আরও বেড়ে যাবে। তাতে আখেরে ক্ষতি হবে কোষাগারেরই।
অন্য দিকে, অনলাইন লটারির উপরে কর বসিয়ে রাজ্যের আয় সামান্যই বেড়েছে (১০০ কোটির মতো)। এই ক্ষেত্রে নতুন করে কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব নয় বলেই অর্থ দফতরের কর্তারা মনে করছেন। তাই কর বসানোর জন্য নতুন ক্ষেত্র খুঁজতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। পাশাপাশি খরচ কমানোর জন্যও আরও কড়া হতে হবে তাঁকে।
কিন্তু এ ভাবে কি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বাড়তি টাকা জোগাড় করা সম্ভব?
শুক্রবার বিধানসভায় এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রাজ্যের অর্থনীতিকে নয়া দিশা দেখাতে হবে অমিত মিত্রকে। এই কাজ তিনি সঠিক ভাবে করতে পারবেন কি না, সে দিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী। |
|
|
|
|
|