মান্নানকে তুলে নিল দল, মমতার প্রার্থীরাই সংসদে
জোটধর্মের ‘দোহাই’ দিয়ে আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কার্যত ‘আত্মসমর্পণ’ করল কংগ্রেস। রাজ্যসভা ভোট থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিল তারা। হাইকম্যান্ডের নির্দেশেই ওই সিদ্ধান্ত বলে রাজ্য কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, ‘দর-কষাকষি’তে এ বারও মমতাই ‘জয়ী।
গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই ‘দর-কষাকষি’তে মমতার কাছে নতি স্বীকার করে যাচ্ছে কংগ্রেস। ভোটের ক্ষেত্রে যেমন লোকসভার পর বিধানসভা এবং এখন রাজ্যসভা, তেমনই সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বিষয়ে মমতাই ‘শেষ কথা’ বলছেন।
কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুল মান্নান মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তৃণমূলের চার প্রার্থী রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, কুণাল ঘোষ, নাদিমুল হক, বিবেক গুপ্ত এবং বামফ্রন্টের প্রার্থী তপন সেন বৃহস্পতিবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলেন। তৃণমূলের জয়ীদের ‘সবুজ শুভেচ্ছা’ জানান পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি ‘সময়োচিত’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহনপাল এবং পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাবকেও ধন্যবাদ জানান। মুকুল দিল্লিতে। তিনি ছাড়া বাকি তিন জন এ দিনই জয়ের শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন। মুকুল শংসাপত্র নেবেন ক’দিন পর।
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যে মান্নানকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলবে, বুধবার থেকেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন-সহ বিভিন্ন প্রশ্নে মমতার সঙ্গে আপাতত জাতীয় স্তরে ‘সুসম্পর্ক’ রাখার তাগিদই হাইকম্যান্ডকে ওই সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিল বলে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁদের প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে কেন জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিধায়ক নেই জেনেও প্রথমে প্রার্থী দিতে রাজি হয়েছিল হাইকম্যান্ড? কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, রাজ্য কংগ্রেসের তরফে প্রথমে ভাবা হয়েছিল, জয়ের জন্য বামেদের ‘সহযোগিতা’ পাওয়া যাবে। বস্তুত, বিমল গুরুঙ্গের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা রাজ্যসভা ভোট বয়কটের কথা ঘোষণা করার পর তাদেরও কংগ্রেসের তরফে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু গুরুঙ্গদের তরফে সাড়া মেলেনি। তারা স্পষ্টতই মমতার বিরুদ্ধে যেতে চায়নি। অন্য দিকে, কংগ্রেসের তরফে মান্নানের মতো পুরোদস্তুর ‘রাজনৈতিক’ প্রার্থী দেওয়ায় সিপিএম তথা বামফ্রন্টের পক্ষেও সমর্থন দেওয়া সম্ভব ছিল না। ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন বটে সমর্থনের কথা। কিন্তু তা একান্তভাবেই কোনও ‘অরাজনৈতিক-সর্বসম্মত’ প্রার্থীর ক্ষেত্রে।
কংগ্রেসের একাংশ তবুও আশাবাদী ছিল যে, মমতা-কংগ্রেস বিভাজন করতে অন্তত ফ্রন্টের শরিকরা কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের আগে বামেরা যে সেই ‘ঝুঁকি’ নেবে না, তা-ও অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল।
একই সঙ্গে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশও এই পরিস্থিতিতে মমতার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর ‘ঝুঁকি’ নিতে রাজি ছিলেন না। পরিষদীয় দলের তরফে বারবার বলার ফলেই হাইকম্যান্ড প্রার্থী দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু মান্নান ময়দানে নামার পরেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জয়ের জন্য ‘প্রয়োজনীয়’ সংখ্যা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতার কথায়, “যদি প্রার্থী দিয়ে হেরেই যেতে হয়, তা হলে এই পরিস্থিতিতে মমতার সঙ্গে লড়াইয়ে গিয়ে লাভ কী?” পাশাপাশিই, কংগ্রেসের একাংশ এমনও মনে করছিলেন যে, সংখ্যার বিচারে তৃণমূল এগিয়ে থাকায় চতুর্থ আসনটি তাদেরই ‘প্রাপ্য’।
প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের পর দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে মান্নান বলেন, “রাজ্যসভার প্রার্থী হতে দলের কাছে আবেদন করিনি। সনিয়া’জি, শাকিল’জি, প্রণব’দা ও প্রদীপ’দা আমায় প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বৃহত্তর কোনও রাজনৈতিক স্বার্থে কংগ্রেস প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করেছে।” তবে মান্নানের দাবি, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের মনোবল ‘ক্ষুণ্ণ’ হবে না। তাঁর কথায়, “আগেও বহুবার কংগ্রেস রাজনৈতিক কারণে স্বার্থত্যাগ করেছে। কোনও একটা ঘটনায় দলের মনোবল দুর্বল হবে না।” মান্নানকে মমতার সঙ্গে দেখা করে সমর্থন চাইতে বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসির সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ। তবু কেন তিনি দেখা করলেন না? মান্নান বলেন, “প্রার্থী হিসেবে দলের যে কোনও নেতার সঙ্গে দেখা করে সাহায্য-পরামর্শ চাইতে পারি। কিন্তু অন্য দলের নেতা-নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে অনুকম্পা চাইতে যাব কেন? করলে সেটা আমার রাজনৈতিক জীবনের সব চেয়ে ঘৃণ্য অপরাধ হত!” বামেদের অতিরিক্ত ভোট নিয়ে মান্নান জিতলে মমতা কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন, সেই আশঙ্কাতেই কি হাইকম্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত? মান্নান বলেন, “বরাবর চেয়েছি রাজ্য থেকে বামফ্রন্টকে সরাতে। নিজেদের শক্তিতে জেতার আস্থা নিয়েই এগোচ্ছিলাম। বামেদের সমর্থন দরকার ছিল না।” মমতা দিল্লিকে কোনও ‘শর্ত’ দেওয়ার ফলেই কি প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত? মান্নানের জবাব, “সেটা দিল্লির নেতারাই বলতে পারবেন।” রাজ্যসভার আসন ছাড়া, না-ছাড়া নিয়ে গত বছরই কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ হয়েছিল বলে মমতার দাবিকে কটাক্ষ করে মান্নান বলেন, “গত বছর কংগ্রেস নিজেদের বিধায়ক-সংখ্যাতেই জিতেছে। কারও সাহায্যের দরকার পড়েনি। আমি অশিক্ষিত, সাধারণ স্কুলশিক্ষক হিসেবেও এই অঙ্কটা জানি। কেউ (মমতা) অন্য দাবি করলে সেটা তাঁর পাণ্ডিত্য!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.