সেই অরক্ষিতই বালির রাস্তা
ছুটছেন ধর্ষিতা, ধারেকাছে নেই পুলিশ
রাত সওয়া তিনটে নাগাদ জনমানবশূন্য রাস্তায় ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে করতে ছুটছেন শাড়ি পরা এক তরুণী। পিছনে ধাওয়া করে তাঁকে ধরতে আসছে দুই যুবক।
প্রাণপণে ছুটে বালির রাজচন্দ্রপুরের টোল প্লাজার ভিতরে ঢুকে পড়েন ওই তরুণী। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীদের তিনি বলেন, “আমার স্বামীর দুই বন্ধু আমাকে ধর্ষণ করেছে। তারা আমাকে মারতে আসছে। আমাকে বাঁচান।”
বুধবার রাতের ওই ঘটনার পর টোল প্লাজার নিরাপত্তাকর্মীরা খবর দেন বালি থানায়। ততক্ষণে ওই দুই যুবক পালিয়ে গিয়েছে। রাত পৌনে চারটে নাগাদ তরুণীটিকে হাওড়ার জয়সোয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
ঠিক এক মাস আগে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি, বরাহনগর থেকে এক মহিলাকে তুলে এনে ধর্ষণ করে এই রাজচন্দ্রপুরেই ফেলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ওই ঘটনার পরে পুলিশের কর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, রাতে ওই এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি যে রাখা হয়নি, বুধবার রাতের ওই ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে গেল। নির্জন রাস্তায় প্রাণভয়ে ছুটছেন এক তরুণী, তাঁকে তাড়া করছে দুই দুষ্কৃতী এ সব কিছুই নজরে পড়ল না টহলদার পুলিশের! যদিও পরে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজচন্দ্রপুর থেকে রাজা সরকার ও কার্তিক দাস নামের দুই যুবককে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের কাছে ১৭ বছরের ওই তরুণী লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, তাঁর বাপের বাড়ি বর্ধমানের জামালপুরে। গত ১৫ মার্চ তাঁর সঙ্গে ডানকুনির বাসিন্দা বাপ্পা রুইদাসের বিয়ে হয়। তাঁরা দু’জনেই লিলুয়ার একটি বাসন পালিশের কারখানায় কাজ করেন। বিয়ের পর ওই তরুণী তারকেশ্বরে থাকলেও তাঁর স্বামী ডানকুনিতে থাকতেন। বুধবার সকালে বাপ্পা ফোন করে তাঁকে রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে চলে আসতে বলেন। বাপ্পা বলেছিলেন, তাঁর দুই বন্ধু রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে থাকবে। তারাই ওই তরুণীকে বাপ্পার কাছে পৌঁছে দেবে।
ফোন পাওয়ার পরেই ওই তরুণী রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে চলে আসেন। কিন্তু ওই ‘বন্ধু’দের দেখা মেলেনি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ দুই যুবক এসে নিজেদের বাপ্পার বন্ধু বলে পরিচয় দেয়। তারা ওই তরুণীকে স্টেশনের পাশেই একটি চালা ঘরে নিয়ে যায়। তরুণীর অভিযোগ, তাঁর সামনেই মদ্যপান করার পর ওই দুই যুবক রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁকে ধর্ষণ করে।
এ দিন ওই দুই যুবককে গ্রেফতারের পরে পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীটিকে তারা সকাল থেকেই রাজচন্দ্রপুর স্টেশনে ঘুরতে দেখেছিল। তরুণীটির উপরে নজর রেখেছিল তারা। সন্ধ্যায় ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারে যে তাঁর স্বামীর দুই বন্ধু তাঁকে স্টেশনে নিতে আসবেন। যুবক দু’টি নিজেদের ওই তরুণীর স্বামীর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে তাঁকে একটি ঘরে নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, অভিযুক্ত দু’জন বাপ্পাকে চেনে না। হাওড়া সিটি পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) রশিদ মুনির খান বলেন, “ওই দুই যুবক তরুণীটিকে একা পেয়ে মিথ্যে পরিচয় দিয়ে নিজেদের ঘরে নিয়ে যায়। জেরায় ওরা ধর্ষণের কথা স্বীকারও করেছে।”
কথা দিয়েও কেন বাপ্পা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না, সে ব্যাপারে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। ওই তরুণীও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। পুলিশ বাপ্পার খোঁজ করছে। তদন্তকারীরা জানান, ওই তরুণী বাপ্পার যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন, সেটি অন্য এক জনের নম্বর। ওই ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বাপ্পাকে চেনেন না।
বৃহস্পতিবার সকালে জয়সোয়াল হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে বসে তরুণী বলেন, “ওই দু’জন এসে বলল, ‘কার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছ?’ বাপ্পার কথা বলতেই ওরা বলল, আমরা বাপ্পারই বন্ধু। আমাদের বাড়িতে চল। ও ওখানেই আসবে।” ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে রাজচন্দ্রপুর স্টেশন সংলগ্ন কলাবাগানের পাশে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে বসিয়ে রেখে ওই দুই যুবক মদ্যপান শুরু করে। জোর করে তারা তাঁকে অশ্লীল সিনেমাও দেখায়। তরুণী জানিয়েছেন, তিনি আপত্তি করায় তাঁকে জোর করে মাদক মেশানো পানীয় খাওয়ানো হয়। এর পরেই তিনি আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে ধর্ষণ করে ওই দুই যুবক। ওই তরুণী বলেন, “জ্ঞান ফেরার পর শুনতে পেলাম ওরা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। তখনই আমি ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়তে শুরু করি। ওরা পিছনে তাড়া করলেও আমাকে ধরতে পারেনি।”
এক মাস আগে বালির ওই এলাকায় নিবেদিতা সেতুর টোল প্লাজার সমান্তরাল নির্জন রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন বরাহনগরের এক ঝুপড়িবাসী মহিলা। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্তে জানা যায়, ধর্ষণ করে ওই মহিলাকে ওই জায়গায় ফেলে যাওয়া হয়েছিল। এর পরেই স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ ওই এলাকায় রাতে টহলদারি বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
কিন্তু পুলিশ সূত্রেরই খবর, বুধবার রাতের ঘটনার সময়ে ওই জায়গাটিতে কোনও পুলিশ ছিল না। তা হলে কোথায় গেল সেই ‘প্রতিশ্রুতি’? হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (সদর) সুকেশ জৈন বলেন, “বালির ঘটনাটি একটি বাড়ির ভিতরে হয়েছে। তবে পুলিশ খবর পেয়ে ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছে। পরে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.