বিহারের একটি স্টেশনের ম্যানেজার-সহ তিন কর্মীকে মাওবাদীরা তুলে নিয়ে যাওয়ার জেরে রাতভর বন্ধ রইল আসানসোল ও দানাপুর ডিভিশনের মেন লাইনের ট্রেন চলাচল। মাঝরাতে মাওবাদীরা অপহৃতদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু মূলত নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার সকালের আগে আর ট্রেন চালানো হয়নি। উত্তর এবং মধ্য ভারতে যাতায়াতের প্রধান দু’টি শাখায় রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। এর ফলে, হাজার-হাজার যাত্রী দুর্ভোগের শিকার হন।
পুলিশ দলের দুই নেতাকে আটক করেও আদালতে না তোলায় পূর্ব বিহার এবং উত্তর ঝাড়খণ্ডের জেলাগুলিতে ৪৮ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ শুরু হয়। রেল সূত্রের খবর, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ জনা চল্লিশ মাওবাদী বিহারে আসানসোল ডিভিশনের নরগঞ্জ স্টেশন ম্যানেজার মালধারী রবানীর অফিসে ঢোকে। তাদের পরনে ছিল রেল রক্ষী বাহিনীর (আরপিএফ) পোশাক। রাতে রেল চলাচল বন্ধ না করলে লাইন উড়িয়ে দেওয়া হবে বলে তারা হুমকি দেয়। শেষমেশ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ স্টেশন ম্যানেজার, সহ-ম্যানেজার কৌশল কিশোর এবং আরও এক কর্মীকে তুলে নিয়ে যায় তারা। এর পরেই রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পূর্ব-মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নীরজ অমবাস্তা বলেন, “স্টেশন থেকে ওই কর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে আর রেল চালানো সম্ভব ছিল না। কারণ ওই স্টেশন থেকে কোনও সিগন্যাল দেওয়া যাচ্ছিল না। এ ছাড়া, নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি।” পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের ডিআরএম জগদানন্দ ঝা-ও বলেন, “স্টেশনে মাওবাদীদের চড়াও হওয়ার খবর পেয়েই আমরা বিহার পুলিশ-প্রশাসন এবং আরপিএফের জরুরি বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিই, ওই রাতে আর রেল চালানো হবে না।”
সিগন্যাল না পেয়ে দু’দিকে বিভিন্ন স্টেশনে প্রায় ২৫টি ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। ঝাঝা, কিউল, মধুপুর, মোগলসরাই, পটনা, মোকামা স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রাত দেড়টা নাগাদ নরগঞ্জ স্টেশনের তিন কর্মীকে ছেড়ে দেয় মাওবাদীরা। কিন্তু সকালের আগে আর ট্রেন ছাড়েনি। রেল সূত্রের খবর, সকাল পৌনে ৭টা নাগাদ ডাউন লাইনে এবং ৭টা নাগাদ আপে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের নরগঞ্জ, মধুপুর প্রভৃতি এলাকা পুরোপুরি মাওবাদী অধ্যুষিত বলে পরিচিত। বেশ কয়েক বার ওই এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া, চলন্ত ট্রেনে গুলি ছোড়া, রেল রক্ষী বাহিনীরজওয়ানদের গুলিতে জখম করে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল লুঠের ঘটনা ঘটিয়েছে মাওবাদীরা। আসানসোলের ডিআরএম জানান, আপাতত আরপিএফ এবং রেলপুলিশের (জিআরপি) যৌথ বাহিনী এলাকায় টহলদারি বাড়াবে বলে স্থির হয়েছে। মূল দায়িত্বে থাকছে ঝাঝা-র আরপিএফ পোস্ট। কামরায় সশ্রস্ত্র বাহিনী বাড়ানো হয়েছে। মাওবাদী এলাকা পেরনোর সময়ে ট্রেনের আগে ‘পেট্রোল’ হিসেবে মালগাড়িও চালানো হবে।
তবে বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধ শেষ হয়েছে, এটাই আপাতত রেলকর্তাদের কাছে স্বস্তির। |