টুজি ছাপিয়ে কয়লা কাণ্ড, উত্তাল সংসদ
টু-জি স্পেকট্রামের থেকেও ছ’গুণ বেশি দুর্নীতির অভিযোগে আজ উত্তাল হল সংসদ।
কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) প্রাথমিক রিপোর্ট বলে যে তথ্য সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিলাম না ডেকে কিছু সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে কয়লার ব্লক দিয়ে দেওয়ার ফলে সরকারের ১০ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। টু-জি স্পেকট্রাম কাণ্ডে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছিল বলে দাবি করেছিল সিএজি। স্বাভাবিক ভাবেই এত বড় দুর্নীতির গন্ধ পেয়ে বাম-বিজেপি-সহ বিরোধীরা সংসদে সরকারকে চেপে ধরে। যে সময় এই দুর্নীতি হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তখন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহই ছিলেন কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে। ফলে রক্তের স্বাদ পেয়ে আরও বেশি করে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্তের দাবি তোলে তারা। রাজ্যের অধিকারের দাবিতে সরব হওয়া নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়কের মতো মুখ্যমন্ত্রীরাও এই অভিযোগকে হাতিয়ার করতে চাইছেন।
এই অভিযোগ যাতে বেশি দূর না গড়ায়, তার জন্য দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে গোটা সরকার। সিএজি-কে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি চিঠিও লেখানো হয়। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেই চিঠির উল্লেখ করে মনমোহন বলেন, “সিএজি জানিয়েছে, এই ধরনের কোনও রিপোর্ট নেই। রিপোর্টই যদি না থাকে, তা হলে আর ব্যাখ্যা দেওয়ার কী আছে!”
সিএজি-র সেই চিঠির অংশবিশেষ আজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশও করে দিয়েছে সরকার। তাতে বলা হয়েছে, কয়লা ব্লক বণ্টন নিয়ে রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি খুবই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। ফলে রাজস্বের এই পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে কথা বলার ভিত্তি নেই। আজ সংসদ মুলতুবির পরে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় ও সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল বিরোধীদের বোঝান, এই অভিযোগ নিয়ে এত হইচই করার কিছু নেই। কারণ, ১৫৫টি কয়লা ব্লকের মধ্যে ৬২টি দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে। যদি সেগুলি নিলাম করা হত, তা হলে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যেত। এই বিষয়টি নিয়ে পরে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রণববাবু সংসদ স্বাভাবিক রাখার আশ্বাস আদায় করে নেন বিরোধীদের থেকে।
তবে বিজেপি এই বিষয়টিকে সহজে হাতছাড়া করতে চাইছে না। বস্তুত, দলের নেতা প্রকাশ জাভড়েকর গত বছর মে মাসেই কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি তোলপাড় হয়নি। জাভড়েকর আজ বলেন, “২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ১৪৩টি বেসরকারি সংস্থাকে বিভিন্ন রাজ্যে বিনামূল্যে ৭৩টি কয়লা ব্লক বণ্টন করা হয়েছে। এর ফলে ৮৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি গত বছরই আমাদের নজরে এসেছিল। এখন সেই পরিমাণ আরও বেড়েছে। ২০০৬ সালে শিবু সোরেন ইস্তফা দেওয়ার পরে কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রীর উপরেই। নিলাম বাধ্যতামূলক করা নিয়ে একটি বিল নিয়ে আসার কথা হচ্ছিল। সেই বিল কার্যকর হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি সমস্ত ব্লক বণ্টন করে দেওয়া হয়।”
বিজেপি-র মতে, টু-জি দুর্নীতির সঙ্গে কয়লা দুর্নীতির অনেক মিল রয়েছে। প্রথমত, টু-জি-মতোই দ্রুততার সঙ্গে সমস্ত ব্লক বণ্টন করা হয়েছে। দুই, এমন কিছু সংস্থাকে এই ব্লক দেওয়া হয়েছে, যাদের এই ব্যবসার সঙ্গে দূরদূরান্তে কোনও সম্পর্ক নেই। টু-জি-র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। তাদের অনেকেই ব্লক পাওয়ার পর চড়া দামে তা অন্যদের বিক্রি করে দিয়েছে। টু-জি কাণ্ডেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল।
কয়লামন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়াল অবশ্য দাবি করেছেন, বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে কয়লা ব্লক বণ্টন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থানের মতো তৎকালীন বাম-বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যের নিলামে আপত্তি ছিল। কয়লাসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে তবেই বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.