আংশিক প্রত্যাহার ভাড়া, মমতার জয়ই দেখছে দল
প্রত্যাশিত ভাবেই বর্ধিত যাত্রিভাড়ার অনেকটা আজ প্রত্যাহার করে নিলেন নতুন রেলমন্ত্রী মকুল রায়। সংসদে বাজেট পাশ করানোর সময়ে বাতানকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বাদে অন্য সমস্ত শ্রেণিতে বর্ধিত যাত্রিভাড়া ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। যার জেরে চলতি অর্থবর্ষে রেলের আয় মূল বাজেট প্রস্তাবের থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা কম হবে।
রেলমন্ত্রী মুকুল রায়
রেলমন্ত্রী পদ থেকে দীনেশ ত্রিবেদীর অপসারণের পর যাত্রিভাড়া প্রত্যাহার করা ছিল সময়ের অপেক্ষা। দীর্ঘ ৯ বছর পরে রেলে ভাড়া বাড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোপে পড়েন দীনেশ। আজ দলনেত্রীর নির্দেশ মেনেই ভাড়া কমানোর কথা ঘোষণা করেন মুকুল। যদিও যুক্তি হিসেবে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে হাতিয়ার করেন বিভিন্ন দলের সাংসদদের বিরোধিতাকেই। তবে তৃণমূল শিবির তো বটেই, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, জমি অধিগ্রহণ, খাদ্য সুরক্ষা, তিস্তা বিতর্ক, এনসিটিসি নিয়ে দর কষাকষিতে জেতার পরে এ বার রেল ভাড়া নিয়েও সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করলেন মমতা। কারণ, ভাড়াবৃদ্ধির ব্যাপারে কংগ্রেসের বিশেষ আপত্তি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী নিজে এই বাজেটকে ‘ভবিষ্যতের দিশারি’ এবং দীনেশের বিদায়কে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সে দিক থেকে জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় শেষ হাসি হাসলেন মমতাই।
নিজের দলেরই প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর বাজেটের বিরোধিতা করে আজ সংসদের উভয় কক্ষেই মুকুল জানিয়ে দেন, যে হারে বাজেটে যাত্রিভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে তা অনেকটাই বেশি। এই সিদ্ধান্তে অধিকাংশ সাংসদই ক্ষুব্ধ। এই ভাড়া বাড়ানোর ফলে আম-জনতার উপর আরও আর্থিক বোঝা বাড়বে। তাই এই ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত। মুকুলের কথায়, “সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই নিত্যযাত্রীদের ভাড়া যেমন কমেছে, তেমনি দূরপাল্লার ট্রেনে অসংরক্ষিত, স্লিপার, বাতানুকূল তৃতীয় শ্রেণি ও চেয়ার কারে বর্ধিত ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পাশাপাশি ভাড়াকে নিকটবর্তী পাঁচ টাকার গুণিতকে নিয়ে যাওয়া বা ভাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরপেক্ষ কমিটি (ট্যারিফ রেগুলেটরি অথরিটি) গঠনের যে সিদ্ধান্ত দীনেশ নিয়েছিলেন, তা-ও বাতিল করে দিয়েছেন নতুন রেলমন্ত্রী। সুরক্ষা ও যৌথ উদ্যোগের (পিপিপি) বিষয়গুলি দেখভালের জন্য রেল বোর্ডে নতুন দু’টি পদ তৈরির সিদ্ধান্তও বাতিল হয়েছে। প্রত্যাহার হয়েছে হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ক্যাটারিং-এর বরাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
কী বাতিল
বাতানুকূল প্রথম, টু-টিয়ার বাদে সর্বত্র বর্ধিত ভাড়া
ভাড়াকে পাঁচের গুণিতকে বৃদ্ধি
স্বাধীন ট্যারিফ রেগুলেটরি অথরিটি
বিদেশি সংস্থাকে ক্যাটারিং-এর বরাত দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র

কী রইল
প্ল্যাটফর্ম টিকিট তিন থেকে পাঁচ টাকা
‘ইজ্জত’ টিকিটে ২৫ টাকায় ১৫০ কিলোমিটার
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আজকের এই সিদ্ধান্তের ফলে রেলের আয় কমবে। আরও সঙ্কটে পড়বে রেল। মন্ত্রক প্রাথমিক হিসেবে দেখেছে, ভাড়া বাড়লে রেলের আয় বৃদ্ধি পেত প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আয় কম হবে। যদিও রেলমন্ত্রীর আশ্বাস, “ওই খাত থেকে আয় কমলেও অন্য কোনও খাত থেকে ওই টাকা তুলে আনতে পারব। আয় বাড়াতে একাধিক আগ্রাসী পদক্ষেপ করা হবে।” প্রধানমন্ত্রীও পরে এ প্রসঙ্গে বলেন, “নতুন রেলমন্ত্রী আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই আয় কমে যাওয়া বাজেট বরাদ্দের উপরে প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরও আশ্বাস দিয়েছেন, বিজ্ঞাপন ও রেলের জমিকে ব্যবহার করে ওই টাকা তুলে নেবেন।” রেলের জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার, বিজ্ঞাপন বা পিপিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক দৈন্যদশা ঘোচাতে চাইলেও তার দিশানির্দেশ কী হবে, তা আজ সবিস্তার জানাতে চাননি মুকুল।
ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে অবশ্য রেলের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রাক্তন সদস্য বিজেপি-র সুধীন্দ্র কুলকার্নির সমর্থন পেয়েছেন রেলমন্ত্রী। কুলকার্নির যুক্তি, এ বছর রেলের সার্বিক বাজেট এক লক্ষ ত্রিশ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। তাই দু’-আড়াই হাজার কোটি টাকা কম আয় হয় হলেও তা রেলের সার্বিক বাজেটের উপর প্রভাব ফেলবে না। একই সুরে তৃণমূল নেতা সৌগত রায় বলেন, “সরকার খাদ্য সুরক্ষার জন্য ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে পারে। আর রেল তার যাত্রীদের উপর থেকে বোঝা কমানোর জন্য এই সামান্য ভর্তুকি দিতে পারবে না!”
অন্য দিকে, সদ্য প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশকে বাজেট নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তাই দু’টি কমিটি গঠন করা হয়। যারা রেলের যাত্রী সুরক্ষা বাড়াতে আধুনিকীকরণের পক্ষে রায় দেন। আর সেই কাজে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল।” দীনেশ এই যুক্তি দিলেও তৃণমূলের আরেক সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের যুক্তি, “দীনেশের বাজেট চমক ছাড়া আর কিছু নয়। সুরক্ষা নিয়ে বাগাড়ম্বর করলেই তো যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না।”
এই বিতর্কের মধ্যেই মুকুল আজ যে ভাবে বাজেট পাশ করিয়ে নিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন অনেক রাজনীতিকই। বিশেষ করে বর্ধিত যাত্রিভাড়া প্রত্যাহারে সাংসদদের আপত্তিকে যে ভাবে তিনি হাতিয়ার করেছেন। কারণ, ঘনিষ্ঠ মহলে ভাড়াবৃদ্ধির পক্ষে কথা বললেও প্রকাশ্যে কোনও দলের পক্ষেই সে কথা বলা সম্ভব নয়। কংগ্রেসের এক সাংসদের কথায়, “কী করে ভাড়াবৃদ্ধি সমর্থন করব! এই সিদ্ধান্ত তো আম-আদমির বিপক্ষে।”
কার্যত এই মনোভাবই ফুটে উঠেছে সংসদে দু’দিনের বাজেট বিতর্কে। তা ছাড়া, মুকুল আজ যে ভাবে “আমি সদ্য এসেছি। সবার দাবি খতিয়ে দেখব” বলে আশ্বাস দিয়েছেন, তার মধ্যেও কৌশলী রণকৌশলের ছাপ রয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূল শিবির। এর ফলে বিপক্ষের সাংসদেরাও সে ভাবে কড়া ভাবে সমালোচনার রাস্তায় হাঁটতে পারেনি। উল্টে ওড়িশার কালাহান্ডিতে রেলের কারখানা বা নতুন ট্রেনের জন্য সবার দাবি খতিয়ে দেখার কথা বলে গোটা সংসদের হাততালি কুড়িয়েছেন মুকুল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.