|
|
|
|
|
হাতিবাগান বাজারের
উন্নতি চেয়েও ব্যর্থ হই
কমলকুমার বসু (প্রাক্তন মেয়র) |
|
তখনও টিভি দেখিনি। বাড়িরই এক জন সকালে বাজার করতে গিয়ে ফিরে এসে বলল, বিরাট আগুন লেগেছে হাতিবাগান বাজারে। কত দিনের স্মৃতি জড়িয়ে ওই বাজারের সঙ্গে!
সে অনেক পুরনো কথা। তখন টাউন স্কুলে পড়ি। অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে রাস্তায় নামা যুবকদের ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে গোরা পুলিশ। আমাদের হাতিবাগান বাজারেও সেই আন্দোলনের প্রচার চলত। সেখান থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে যেত পুলিশ। আর আমরা স্কুল বয়কট করতাম। তবে বয়কট চললেও আমরা ক্লাসে বসে বসে ‘তক্লি’ কাটতাম, মানে হাতে সুতো বানাতাম। তো, সেই থেকে হাতিবাগান বাজারের সঙ্গে সম্পর্কের সুতো গড়া।
মনে পড়ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানিদের সেই বোমা ফেলার কথা। হাতিবাগান বাজারে যখন বোমা পড়ল, তখন বোধহয় বিকেল। লোক মারা গিয়েছিল। পুলিশ ও মিলিটারি গোটা এলাকা ঘিরে ফেলল। তখন বাজারে গোটা এলাকার কেন্দ্রীয় রেশন অফিস ছিল। বোমা পড়ার আওয়াজ পেয়েছিলাম। তার অভিঘাতও টের পেয়েছিলাম। কারণ, সে সময় বাড়ির আশপাশেই ছিলাম। পরের দিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে বোমা পড়ার জায়গাটা দেখতে গেলাম। ক্ষতবিক্ষত এলাকা। লোকজন কলকাতা ছেড়ে পালাচ্ছে। ছত্রভঙ্গ শহর। দক্ষিণ কলকাতাতেও বোমা পড়েছিল। আমাদের বাগানবাড়ি ছিল ফলতায়। কলকাতা ছেড়ে সেখানে ক’দিন থাকার সময়েই দাঙ্গা বাধল। আমরা আটকে গেলাম।
পরে এক বার বাজার কমিটি গড়ে হাতিবাগান বাজারের উন্নয়নের চেষ্টা চালাই আমরা। তখনও মেয়র হইনি। সে চেষ্টা অবশ্য খুব ফলপ্রসূ হয়নি। মেয়র হওয়ার পরে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করি। বেসরকারি হলেও হাতিবাগান বাজারও তার মধ্যে ছিল। নির্দিষ্ট সংখ্যক দোকান পিছু একটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরে সেটা খুব কিছু এগিয়েছিল বলে মনে হয় না।
প্রথম দিকে বাজারের মালিক ছিলেন সত্যবিনয় মল্লিক। পরে ভাগ্যকুলের প্রমথনাথ রায়কে তাঁরা বাজারের জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ দিতে বলেন। কিন্তু তাঁরা বাজারটিই কিনতে চান। তা হয়নি। পরে এই বাজার অনেক হাত ঘুরেছে।
এই বাজারের সঙ্গে সখ্য দীর্ঘ কালের। আগুন তাতে ছেদ ঘটাল। আমার বয়স এখন ৯৪। শারীরিক ভাবে সক্ষম থাকলে আজও এক বার ছুটে যেতাম। সেটাও পারলাম না! |
|
|
|
|
|