|
|
|
|
|
বাজার করার ‘আর্ট’
শিখেছি এখানেই
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় |
|
আমার ছোটবেলার অনেকখানি জড়িয়ে আছে এই বাজারটা। এখনকার অরবিন্দ সরণি, মানে তখনকার গ্রে স্ট্রিটে বাজারের কাছেই ছিল আমাদের বাড়ি।
তখন আমি বেশ ছোট। ন’দশ বছর হবে। একা বাজার করার প্রশ্নই ওঠে না। বাবার হাত ধরেই হাতিবাগান বাজারে যাওয়া শুরু। বাবা হয়তো বাজার করে জিনিসপত্র কিনে আমার হাত দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিতেন। সেই করতে করতেই ঘুরতে লাগলাম বাজারের ভিতরে। দোকানে দোকানে দরদাম, কোন জিনিসটা কী রকম কিনতে হয় যত দিনে বড় হয়ে আমার একা একা কেনাকাটা শুরু, তত দিনে বাজার করার ‘আর্টটা’ বেশ রপ্ত হয়ে গিয়েছে। বাবার সঙ্গে বাজারে যাওয়ার দিনগুলো থেকেই দোকানিদের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। রোজকার যাতায়াতে যেমন হয় আর কী! কোন মাছটা ভাল, কোন সব্জিটা টাটকা, ওঁরাই দেখিয়ে দিতেন।
বেশ মজাও হত মাঝে মাঝে। এই বাজারেই এক বার বাবা কাঁচা বেল খুঁজছেন, পেটের অসুখে পুড়িয়ে খাওয়া হবে। দোকানদারও কিছুতেই পাকা বেল ছাড়া দেবে না, আমরাও কাঁচা বেল ছাড়া নেব না! এর পর থেকে মাঝে মাঝে এ ধরনের ক্ষেত্রে উল্টোটা বলতাম। তা হলে যা চাইছি সেটা মিলত!
অন্য রকম স্মৃতিও কম নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানিদের বোমা পড়ল। এই বাজারেই। ভয়ে আর বাজারমুখো হইনি তখন। বাবা আমাদের সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রামে। ফিরে যখন এলাম, বাজারটা আবার তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাজারের পিছনটায় একটা খাটাল ছিল। সেখানকার অনেকগুলো মোষ মরে গিয়েছিল ওই ঘটনায়।
এই বাজারের সামনেই এক বার দাঁড়িয়ে আছি। একটা মিছিল আসছে রাস্তা ধরে। পুলিশ লাঠিচার্জ করতে শুরু করল। তখনও আমি ছোটই। কী হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এ দিকে পুলিশ রাস্তার পাশে দাঁড়ানো সবাইকেই ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে তখন। আমাকেও জোরে ধাক্কা দিল এক ইংরেজ পুলিশ। পরে বড় হয়ে এ ব্যাপারটা নিয়ে বেশ গর্বই হল। আমিও ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ সৈনিকের হাতে অত্যাচারিত!
প্রায় আঠেরো বছর বয়স পর্যন্ত ওই পাড়াতেই ছিলাম। অনেক গল্প-উপন্যাসে তাই ঘুরেফিরে এসেছে হাতিবাগান বাজারের স্মৃতি। ‘অর্ধেক জীবন’ যেমন। এখন তো পুরোপুরি দক্ষিণের বাসিন্দা। কত বছর হয়ে গেল যাওয়াই হয় না আর! পাখির বাজারটাও তো এখন আর নেই। |
|
|
|
|
|