বিধান সরণির উপরে দাঁড়িয়ে এক যুবক। ভেজা চোখে অসহায় ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন পুড়ে যাওয়া হাতিবাগান বাজারের দিকে। অস্ফুটে বলে চলেছেন, “সব শেষ! সব শেষ!”
বাজারের ভিতরে কাপড়ের দোকান ছিল তাঁর। এখন পুরোটাই ছাই।
ওই যুবকের পাশে দাঁড়িয়েই আধপোড়া জামা-কাপড় ভর্তি প্যাকেটগুলি লুফে নিচ্ছিলেন বাপি পালচৌধুরী, গৌরাঙ্গ সাহাদের মতো কয়েক জন ব্যবসায়ী। তাঁরা হয়তো জানেন, এর কোনওটিই আর বিক্রি হবে না। তবুও, শেষ চেষ্টা।
কেন? তাঁরা জানালেন, সামনেই চৈত্র সেলের বাজার। শুধু জামা-কাপড়ই নয়, এই সময়ে সস্তায় ঘর-গৃহস্থালির জিনিসও কেনেন অনেকে। সে কথা মাথায় রেখেই ধার-দেনা করে একটু বেশি পরিমাণে মালপত্র কিনেছিলেন বিছানার চাদর বিক্রেতা গৌরাঙ্গবাবু। কিন্তু এ দিনের আগুনে সে সব জিনিসের বেশির ভাগই ছাই হয়ে গিয়েছে। যেগুলি পড়ে আছে, তার অবস্থাও বিক্রির মতো নয়। সেখানেই সুশীল সাহা নামে আর এক ব্যবসায়ী বলেন, “চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। এ বারে মহাজনের টাকা কী ভাবে শোধ করব, আর সংসারই বা চালাব কী ভাবে?” একই প্রশ্ন বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদেরও। |
বাজার পুড়ে যাওয়ায় কপালে হাত সব্জি বিক্রেতাদেরও। মালপত্র তো গিয়েছেই, অনেকে ক্যাশবাক্স সরানোর পর্যন্ত সময় পাননি। তাঁদেরই এক জন দীপক নাথ। বুধবার রাতে নিজের দোকানেই ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। চিৎকারে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে কোনও মতে পালিয়ে বাঁচেন। কিন্তু ক্যাশবাক্সে থাকা কয়েক হাজার টাকা আর সঙ্গে আনতে পারেননি। পুড়ে গিয়েছে সব।
শুধু ছোট ব্যবসায়ীরাই নন, এ দিনের অগ্নিকাণ্ড অসহায় করে দিয়েছে মাঝারি মাপের ব্যবসায়ীদেরও। হাতিবাগান বাজারের কাপড়পট্টিতে বেশ কয়েকটি কাপড়ের গুদাম রয়েছে। আগুন নিভে যাওয়ার পরে সেগুলির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মধ্যবয়সী দুই ব্যক্তি। নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করছিলেন, “গত সপ্তাহেই কয়েক লক্ষ টাকার কাপড় তুলেছিলাম। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।”
এরই ফাঁকে হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে গেলেন অসীম সাহা নামে এক যুবক। বাজারে ছোট কাপড়ের দোকান ছিল তাঁর। থাকতেনও বাজারের উপরের ঘরে। বললেন, “দোকান তো ছাই হয়ে গিয়েছেই। কিন্তু ঘর পুড়ে যাওয়ায় এখন পরার মতো জামাকাপড় পর্যন্ত নেই আমাদের।”
স্থানীয়দের দেওয়া লুঙ্গি, গেঞ্জি ও কাপড়ই ভরসা অসীম ও তাঁর পরিবারের। |