হাতিবাগানে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ তখনও শেষ. হয়নি। কাছেই মানিকতলা বাজারে তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকলেন ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারা। হাতিবাগানের বিপর্যয় থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে ভবিষ্যতে আগুনের বিপদ ঠেকাতে কী করণীয়, তার একটা ন্যূনতম ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তখনই ছকে ফেলতে হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা। রাতারাতি মান্ধাতার আমলের বাজারের ভোল পাল্টানো যাবে না জেনেও সীমিত সামর্থ্যে কতটুকু করা সম্ভব তা ভেবে বার করতেই দু’ঘণ্টার বৈঠকে মাথা খাটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ব্যবসায়ীরা। ঠিক হল, এখনই বাজারের ভিতরে রান্নাবান্না বন্ধ করা হবে। বাঁশ-ত্রিপল ও দাহ্য জঞ্জাল-টঞ্জালও বাজার-চত্বরে ডাঁই করা চলবে না। আর আগুন নেভাতে জল-বালি মজুত রাখার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব সব ব্যবসায়ীর মিটার সংস্কার করানো হবে। |
এমনিতে এই ‘মেগাসিটি’র বেশির ভাগ পুরনো বাজারের ছবিতে তেমন হেরফের নেই। কোথাও বিদ্যুতের তারের মাকড়সার জালে ঢেকে গিয়েছে নোনা-ধরা ছাদ। কোথাও ভরা বাজারেই স্টোভ জ্বেলে সকাল-সন্ধে রান্নার ধুম। আগুনের মোকাবিলায় জলাধারের ব্যবস্থা থাকা দূর অস্ত্, কবেকার ঝুলে-ঢাকা গুটিকয় ‘ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার’ও কার্যত পরিত্যক্ত।
কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, পুরনো বাজারগুলির এটাই চালচিত্র। হাতিবাগানে অগ্নিকাণ্ডের দিন মানিকতলার প্রাচীন বাজারে এই ‘গা-ছাড়া সংস্কৃতি’র ট্র্যাডিশন ভাঙার গা-ঝাড়াটুকু অন্তত দেখা গেল।
শহরের বেশির ভাগ বাজারে সুরক্ষা-বিধি মানতে ব্যবসায়ীদের গা-ছাড়া ভাব নিয়েই অভিযোগ তোলে প্রশাসন। পুর-বাজারগুলিতে অফিসও রয়েছে কলকাতা পুরসভার। সেখানে বিপদের আশঙ্কা অজানা নয় দমকল বা পুর-কর্তৃপক্ষেরও। কিন্তু বাস্তবে যাবতীয় গাফিলতির দায় ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে চাপিয়েই হাত ধুয়ে ফেলতে চান প্রশাসনের কর্তারা। |
তৃণমূল বিধায়ক তথা মেয়র পারিষদ শশী পাঁজা বলেন, “উত্তর কলকাতায় নতুনবাজার, ছাতুবাবুর বাজার, খোট্টাবাজার, শোভাবাজারের হালও খুব খারাপ। মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকায় কোনও কাজ করা যাচ্ছে না।” এ দিন হাতিবাগানের ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুরনো বাজারের দোকানদারদের সচেতনতা নেই। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই। তাই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।” অথচ নন্দরাম মার্কেটের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, বিপদের ঝুঁকি সত্ত্বেও বহুতলটির উপরের তলাগুলিতে ফের ব্যবসায়ীদের বসাতে খোদ মেয়রই উদ্যোগী হয়েছেন।
শহরের বাজারগুলিকে অগ্নি-বিধি মানতে কেন বাধ্য করছে না প্রশাসন?
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “এত জন লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ীকে তুলতে গেলে তো হইচই পড়ে যাবে। যত বারই আগুন লাগুক, দমকলের কাজ আগুন নেভানো। আমরা সেই কাজটাই করে যাচ্ছি।” |
তা হলে বিধ্বংসী আগুনের ঘটনা রুখতে কী করবে দমকল? দমকলমন্ত্রীর কাছে তার সদুত্তর মেলেনি।
দক্ষিণের লেক মার্কেট বা ল্যান্সডাউন মার্কেটের মতো কয়েকটি বাজার অবশ্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সংস্কারের চেষ্টা করছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। জল ছেটানোর স্বয়ংক্রিয় স্প্রিঙ্কলার চালু করার লক্ষ্যে নতুন জলের লাইন বসেছে লেক মার্কেটে। কিন্তু এখনও জলাধারে জল নেই সেখানে। গড়িয়াহাট বাজারেও বেশ কয়েক বছর আগে নতুন বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু পুরকর্তারাই মানছেন, বাজারের ভিতরে ঝুঁকি নিয়ে রান্নাবান্না এখনও বন্ধ করা যায়নি। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও সন্তোষজনক নয়।
|