|
|
|
|
সরকারি প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ, অভিযোগ বাসিন্দাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্পে তৈরি রাস্তা ও কালভার্টে অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন এলাকাবাসীদের একাংশ। বোলপুর থানার শান্তিনিকেতন লাগোয়া প্রান্তিক এলাকার ঘটনা। ওই কাজে নিম্নমানের মালমশলা ব্যবহার করা-সহ সরকারি অর্থের ব্যাপক নয়ছয়ের অভিযোগও তুলছেন তাঁরা। সংশ্লিষ্ট দফতরে তাঁরা আর্জি জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত ওই কাজের আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ রাখা হোক।
বোলপুর ব্লকের রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তালতোড় মৌজার প্রান্তিক (পশ্চিম) এলাকার রাস্তা ও কালভার্ট তৈরির ওই কাজ নিয়ে অভিযোগগুলি তুলেছে এলাকারই প্রান্তিক (পশ্চিম) আবাসিকদের ফোরাম। ফোরাম সম্পাদক, পেশায় চিকিৎসক পি কে সরকারের অভিযোগ, “প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার ওই প্রকল্পে অত্যন্ত নিম্নমানের মালমশলা ব্যবহার করে ওই মোরাম রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। একশ্রেণির দালাল চক্রের মদতে ওই রাস্তা ও কালভার্ট তৈরিতে আর্থিক নয়ছয় করা হয়েছে।” ওই ফোরাম গ্রামোন্নয়ন কমিটির দিকে সরাসরি অভিযোগ তুলেছে। প্রসঙ্গত, স্থানীয় গ্রামোন্নয়ন কমিটি ওই কাজে ঠিকাদার সংস্থাটিকে নিয়োগ করেছে। তাদের তত্ত্বাবধানেই কাজটি হয়েছে। ফোরাম সম্পাদকের অভিযোগ, “গ্রামোন্নয়ন কমিটির একাংশ এবং ঠিকাদার সংস্থার যোগসাজশে ওই নিম্নমানের কাজ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘টাউট’ এবং প্রশাসনের একাংশের খামখেয়ালিপনায় আমজনতা সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।” তাঁর দাবি, “স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন আমাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।” এই অবস্থায় তাঁরা জেলাশাসকেরও দ্বারস্থ হয়েছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২২০০ মিটার রাস্তায় মোরাম ফেলা-সহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ওই গ্রামোন্নয়ন কমিটি একটি ঠিকাদার সংস্থাকে নিযুক্ত করে। মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প তহবিল থেকে ওই কাজের জন্য ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে ১৪ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়। ওই কাজের মধ্যে ৫ মিটার লম্বা একটি কালভার্ট তৈরি করার কথাও উল্লেখ ছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিম্নমানের মালমশলা দিয়ে তৈরি হওয়ার জন্যই কয়েকদিনের মধ্যেই ওই কালভার্টটি বসে গিয়েছে। সরকারি নিয়মানুযায়ী কাজটি করা হলে এত দ্রুত তা বসে যেত না। ওই প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ২০,২০০ টাকা, মালমশলা বাবদ ১১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৩৮ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ১৩, ৮৬২ টাকা ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু তার নিরিখে ওই কাজের মান উপযুক্ত হয়নি বলেই অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ওই গ্রামোন্নয়ন কমিটির সচিব উদয় লোহার অবশ্য ফোরামের অভিযোগ ‘অসত্য’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “প্রান্তিক (পশ্চিম) আবাসিক ফোরামের সম্পাদক, চিকিৎসক সরকারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় রাস্তায় মোরাম ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি তালতোড় এলাকার বনডাঙা এবং সংলগ্ন আদিবাসী এলাকাতেও মোরাম দেওয়া হয়েছে। নিম্নমানের মালমশলা দেওয়ার অভিযোগটি ঠিক নয়।” কালভার্ট বসে যাওয়ার পেছনে তাঁর যুক্তি, “বেশি ওজনের মালবাহী গাড়ি ওই রাস্তায় আসা-যাওয়া করায় কালভার্টটি বসেছে।” ওই কালভার্টের প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ওই রাস্তা দিয়ে প্রায় সবরকমেরই গাড়ি যাতায়াত করে। তাহলে প্রথম থেকেই কেন কালভার্টের প্রয়োজনীয় ধারণ ক্ষমতানুযায়ী উপযুক্ত কাজ করা হয়নি? আর ঠিক এই জায়গাটিতেই ওই প্রকল্পের কাজটি ঘিরে স্থানীয় মানুষের মনে আর্থিক নয়ছয়ের নানা সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের বিডিও অমল সাহা এলাকায় পর্যবেক্ষণে যান। অমলবাবু বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে।” অমলবাবুও স্বীকার করেছেন, ভারি গাড়ি ও মালবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য কালভার্টের কিছু অংশ বসে গিয়েছে বলে শুনেছি। তাঁর আশ্বাস, “রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবো। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”
এ দিকে জেলা মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চিতকরণ প্রকল্প আধিকারিক সুপ্রিয় অধিকারী বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বোলপুরের বিডিও-র সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও হয়েছে। প্রয়োজনীয় তদন্ত করে রিপোর্ট জানাতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|