|
|
|
|
কাফে-মালিক খুন, আটক ৭ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
সাইবার কাফের মধ্যেই খুন হলেন ওই কাফের মালিক। মৃতের নাম প্রতুল চট্টোপাধ্যায় (৬২)। বুধবার রাতে সিউড়ির ইন্দিরাপল্লি এলাকায় তিনি খুন হন। তবে ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব খুবই কম। স্বাভাবিক ভাবে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সিউড়ি শহরে।
|
নিহত প্রতুলবাবু। |
বুধবার রাত পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, গলায় বার বার ধারালো অস্ত্রের কোপ মারা হয়েছে। পেটেও অস্ত্রের কোপ রয়েছে। ওই অবস্থায় প্রতুলবাবুকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। তাঁর পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার রাতে কয়েক জন প্রতুলবাবুর কাছে চাঁদা চাইতে এসেছিল। তাঁদের দাবি মতো তিনি চাঁদা দিতে রাজি হননি। সেই কারণে চাঁদা আদায়কারীরা তাঁকে খুন করেছে। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগেও সেই দাবি করেছেন তাঁরা। তাই পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন প্রতুলবাবুর পরিবার। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। অতিরিক্ত বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার ফারহাত আব্বাস বলেন, “পুলিশ কুকুর এনে আর কোনও লাভ হবে না। প্রতুলবাবুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এলাকার ৭ জন চাঁদা আদায়কারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”
এ দিকে, এলাকার বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী সন্তোষ চৌধুরী, রত্না চট্টোপাধ্যায়, অর্চনা হাজরা বলেন, “এমনিতে রাত সাড়ে ৯টা-১০টার মধ্যে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। তাই রাতে বাড়ির বাইরে যেতে ভয় হয়। বুধবারের ঘটনা আমাদের আরও আতঙ্কিত করে তুলেছে।” নাট্যকর্মী বরুণ দাস, অধ্যক্ষ পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “সিউড়িতে চাঁদার জুলুম দীর্ঘদিন ধরে আছে। দাবি মতো চাঁদা না দিলে নানা রকম হুমকি দেওয়া হয়। তাই বলে খুন, ভাবতে পারছি না। এই খুন সিউড়ি শহরে প্রথম হল। প্রশাসন যাতে আরও সক্রিয় হয়, সে জন্য অনুরোধ করব।” সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “চাঁদা নিয়ে জুলুমবাজির অভিযোগ এর আগে কখনও পাইনি। এই ঘটনা কাম্য নয়। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব।” নিরাপত্তার ব্যাপারে বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “চাঁদা-সহ যে কোনও জুলুমবাজির ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। অভিযোগ পেলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগকারীর নাম পুলিশ গোপন রাখবে।” |
|
এখানেই খুন হন তিনি। |
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়র প্রতুলবাবু রাঁচিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বছর চারেক আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন। তার পরে সিউড়িতে সাইবার কাফের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী কাঞ্চনাদেবী জানান, তাঁদের আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদে। কর্মসূত্রে রাঁচিতে থাকতেন। তাঁর দিদির বাড়ি সিউড়িতে। আত্মীয়তার সূত্র ধরে ২০০৭ সালে ছেলেকে নিয়ে কাঞ্চনাদেবী সিউড়িতে চলে আসেন। প্রথম থেকেই ঘটনাস্থল থেকে ১-এর পল্লিতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি বলেন, “বাবা-ছেলে মিলে কাফে চালাত। স্বামী কাফেতে বেশি বসতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য উনি প্রতিদিন সকালে কাজে যেতেন। দুপুরে ফিরে এসে বিকেল ৩টে নাগাদ বেরিয়ে যেতেন এবং সাড়ে ৯টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসতেন।” তাঁর দাবি, “মঙ্গলবার রাতে উনি বাড়ি ফিরে বলেছিলেন, কয়েক জন ছেলে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। এত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল তারা। তখন আমি বলেছিলাম, সিউড়িতে এ সব হয় না। মুখেই হুমকি দেয়।” কাঞ্চনাদেবী বলেন, “বুধবার রাতে বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে পৌনে ১১টা নাগাদ ছেলেকে ফোন করে খোঁজ নিতে বলি। খবর পেয়ে আমিও কাফে ছুটতে ছুটতে পৌঁছই। ততক্ষণে ছেলের বন্ধুরা মোটরবাইকে করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দাবি মতো চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় এমন ভাবে খুন করা হবে ভাবতে পারিনি।” ফারহাত আব্বাস বলেন, “ঘটনার তদন্ত না শেষ হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”
|
ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|