ক্রমেই ঘোরালো হয়ে উঠছে কাটোয়ায় প্রৌঢ়ার হত্যাকাণ্ডের রহস্য। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন।
বাড়ির পিছনের বাগানে যাওয়ার দরজা কি বন্ধ ছিল?
যে ঘরে প্রৌঢ়া খুন হয়েছেন, সেই ঘরে পাখার ব্লেড তুবড়ে গেল কী ভাবে?
এমনই বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না কাটোয়া মহকুমা পুলিশের কর্তারা। ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসকের কাছে ৪টি বিষয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা আসেনি। ফলে কাটোয়ার কাছারিপাড়ায় নিহত বিজলি দাসের খুনিকে এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস বলেন, “ময়না তদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট আমাদের হাতে এখনও আসেনি। তা পেলে অনেক সুবিধা হবে।”
গত শুক্রবার রাতে বাড়ির দোতলার ঘরে গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগানো অবস্থায় প্রৌঢ়ার দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও পুলিশ কার্যত ধাঁধায়। বারবার বাড়ির সদস্যদের জেরা করেও জট ছাড়ানো যায়নি। |
বিজলীদেবীর বাড়িতে তালা। নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতকে প্রথমে দেখতে পান জামাই মিঠু মণ্ডল। তিনিই পাশের ঘরে থাকা খুড়শ্বশুর অশোক দাসকে ডেকে তোলেন। তার পরে তাঁরা নিহতের ছেলে সন্দীপকে খবর দিলে তিনি বাড়ি ফেরেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছিল, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মৃতার গায়ে কাপড় ঢাকা দিয়ে দেয় খুনি। তার পরে বাইরে থেকে দরজায় শিকল তুলে দেয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, বিজলিদেবীর মাথার পিছনে আঘাত রয়েছে। রয়েছে ধস্তাধস্তির চিহ্ন। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে খুনের নির্দিষ্ট সময়, মাথার পিছনে আঘাত কী ভাবে লাগল-সহ চারটি প্রশ্নের জবাব চেয়ে কাটোয়া হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী অফিসারের কাছে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই জবাবগুলি পেলে আমাদের অনেক প্রশ্নের জবাব মিলে যাবে। খুনিকেও চিহ্নিত করা সহজ হবে।”
কিন্তু খুনি চিহ্নিত না হওয়ায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন কাছারিপাড়ার বাসিন্দারা। বুধবারই নিরাপত্তা এবং প্রৌঢ়ার খুনিকে ধরার দাবিতে কাছারি তাঁদের একাংশ কাটোয়া থানায় বিক্ষোভ দেখান। সজল চট্টরাজ, রাজকুমার রায়চৌধুরীরা বলেন, “বুধবার নিয়মভঙ্গ হওয়ার পরেই নিহতের পরিবার বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তাই আমরা পুলিশের কাছে খুনিকে ধরার দাবি জানালাম।” এলাকারই কল্পনা মণ্ডল, মানসী সিংহেরা বলেন, “খুনি কে আমরা জানি না। আমাদেরও বাড়িতে একা থাকতে হয়। বাইরের কেউ খুনি হলে আমাদেরও তো একই দশা হতে পারে।” তবে, বাসিন্দাদের দাবি মতো বুধবার রাত থেকেই এলাকায় টহল দিতে শুরু করেছে পুলিশ।
নিহতের ছেলে সন্দীপ ও তাঁর স্ত্রী বর্তমানে দিদি-জামাইবাবুর বাড়িতে রয়েছেন। স্কুল কম্পাউন্ড রোডে নিজের বাড়ি থাকলেও প্রতি দিন রাতে যিনি পৈত্রিক বাড়িতে শুতে যেতেন, সেই অশোকবাবুও আর ওই বাড়ি যাননি। বৃহস্পতিবার বিকেলে সন্দীপবাবু বলেন, “পুলিশ আর একটু সক্রিয় হোক। নির্দোষ ব্যক্তিকে না ধরে ঠিক লোককে ধরুক। যাতে সে আইনের ফাঁক গলে না বেরিয়ে যায়। তবেই একটু নিশ্চিন্ত হতে পারব।” তিনি আরও জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণেই বাড়ি ছেড়ে দিদি-জামাইবাবুর কাছে চলে এসেছেন তাঁরা।
তিন বছর আগে নবমীর দিন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান বিজলিদেবীর ভাসুর অনিলরঞ্জন দাস। তাঁর এখনও খোঁজ মেলেনি। এই খুনের সঙ্গে সেই ঘটনার কোনও যোগ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |