তৃণমূল নেতাকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল দলেরই ৯ জনকে। নেতা মার খাওয়ার পরে কিছু বাড়িতে পাল্টা ভাঙচুরও চালানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সে ব্যাপারে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। কেউ গ্রেফতারও হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে বর্ধমানের কালনায়। প্রহৃত নেতা, তৃণমূলের কালনা ২ ব্লক সভাপতি প্রণব রায় মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁকে মারধরের ঘটনায় যে ১৫ জনের বিরুদ্ধে কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁরা সকলেই এলাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মী বলে পরিচিত। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন কালনা বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য কবিতা চক্রবর্তী, তাঁর স্বামী অভিজিৎ চক্রবর্তী এবং দলের ব্লক শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান নীলকমল মুখোপাধ্যায়। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ প্রসঙ্গে এড়িয়ে আজ বলেন, “প্রণববাবুকে যারা মারধর করেছে তারা যাতে শাস্তি পায়, প্রশাসনকে তা দেখতে বলেছি।”
আহত প্রণব রায়।
ছবি: কেদারেশ্বর ভট্টাচার্য |
তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ প্রণববাবু সিঙ্গেরকোণের দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে কাছাকাছি টোলা গ্রামে রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী আব্দুস সাত্তারের ছেলে আলমগীর সাত্তারের সঙ্গে দেখা করতে যান। ফোনে ডেকে নিয়েছিলেন স্থানীয় বড় ধামাস পঞ্চায়েতের তৃণমূল সভাপতি বনমালী মণ্ডল এবং দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পলাশ মণ্ডলকেও। তাঁরা নেতার কিছুটা পিছনে মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন। পলাশবাবুর কথায়, “কিছু দূর গিয়ে দেখি, প্রণবদা মাটিতে পড়ে আছেন। এক পাশে পড়ে তাঁর সাইকেলটি। কিছু লোকজন ভিড় করে হম্বিতম্বি করছে। আমরা লোকজন ডাকতেই ওরা পালায়।”
প্রণববাবুর অভিযোগ, “আলমগীরের বাড়ির কাছেই এক জন আমার নাম ধরে ডাকে। তা শুনে আমি সাইকেল থেকে নামতেই লাথি, ঘুঁষি, কিল মারতে থাকে কয়েক জন। কয়েক জনকে চিনতেও পেরেছি।” নেতার মার খাওয়ার খবর পেয়ে রাতেই তাঁর কিছু অনুগামী টোলা ও মিরহাটে কয়েক জনের বাড়ি ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। সবচেয়ে ক্ষতি হয় মিরহাটে অভিজিৎবাবুর বাড়ির। যদিও তাঁর পড়শি হীরেন্দ্রনাথ কোঙারের দাবি, “অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রী কোনও ভাবেই হামলায় জড়িত নয়।” ধৃত নীলকমলবাবুরও দাবি, “ঘটনার সময়ে আমি বাড়িতে ছিলাম। অকারণে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই ব্লকে সংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন প্রণববাবু। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের সময়ে দলের দ্রুত কলেবর বৃদ্ধির পরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়। প্রণববাবুকে ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য দলের উচ্চস্তরে আবেদনও জানানো হয়েছিল। পৃথক কার্যালয়ও তৈরি করা হয়। সামনে সম্মেলন থাকায় সম্প্রতি ব্লক কমিটি তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়েও প্রণববাবুর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর ক্ষোভ ছিল। এ দিন প্রণববাবু অবশ্য দাবি করেন, “জেলা নেতারা ব্লক কমিটি গড়েছেন। আমার কোনও ভূমিকা ছিল না।” কালনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি দেবু টুডুর মতে, ‘‘যারা ওঁকে মেরেছে, তাদের জন্য কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়।” |