আমি যেখানেই যাই সেখানেই আমাকে দুটি খুব সাধারণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, বিশেষত অল্পবয়সী বাবা মায়েদের কাছ থেকে। প্রশ্নগুলি হল এক, আমার সন্তান কী করে এক জন ভাল কুইজ মাস্টার হয়ে উঠতে পারবে? আর দুই, কী ভাবে সন্তানকে সুবক্তা করে তোলা যায়? আসলে দুটি প্রশ্নের মধ্যে একটা গভীর সংযোগ রয়েছে। এক জন ভাল কুইজ মাস্টার হতে হলে তোমাকে ভাল কথা বলতে জানতে হবে। তবে শুধু কুইজ মাস্টার কেন, সুন্দর ভাবে এবং প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা থাকলে, সেটা তোমাকে অনেক ক্ষেত্রেই সাহায্য করবে।
তা হলে? কী করে ভাল কথা বলার ক্ষমতা গড়ে তোলা যায়? তোমরা নিশ্চয়ই ডেমস্থেনেস-এর নাম শুনেছ। প্রাচীন গ্রিসের এই পণ্ডিত মানুষটি বাগ্মী হিসেবেও প্রসিদ্ধ ছিলেন। অথচ তিনি নাকি এক সময়ে ভীষণ তোতলা ছিলেন। বিশেষ করে ‘আর’ অক্ষরটি তিনি উচ্চারণই করতে পারতেন না। এই প্রতিবন্ধ দূর করতে তিনি মুখে কাচের গুলি পুরে কথা বলতেন। দৌড়তে দৌড়তে আবৃত্তিও করতেন। আমি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই, এই সব কৌশল ব্যবহার করে ডেমস্থেনেস সত্যই উপকৃত হয়েছিলেন কি না, তা আমি বলতে পারব না। তবে একটা উপদেশ অবশ্যই দেব, তোমরা ওই গুলির অনুশীলনটা বাড়িতে অভ্যেস করতে যেয়ো না। |
• অনেক লোকের জন্ম থেকেই বাচনভঙ্গির অসুবিধে থাকে। এবং অধিকাংশ লোকই সেটা নানা ভাবে ঢাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তাঁর এই সমস্যাটিকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলেন। যুদ্ধের সময় যখন চার্চিলের বক্তৃতা বেতার মাধ্যমে সম্প্রচার করা হত, তখন তাঁর কণ্ঠস্বর নিমেষেই চেনা যেত। তিনি একটু আধো আধো ভাষায় কথা বলতেন। এবং তাঁর এই বাচনভঙ্গিকে ধরে রাখার জন্য তিনি সেই ভাবেই একটি কৃত্রিম দাঁতের পাটি তৈরি করিয়েছিলেন। ডেরেক কাডলিপ নামে এক অল্পবয়সী ডেন্টাল টেকনিশিয়ান সেটি তৈরি করেন।
• বিখ্যাত ছবি ‘স্টার ওয়ার্স’-এ দুষ্ট ডার্থ ভেডার কিংবা ‘লায়ন কিং’-এ মুফাসা চরিত্রগুলির নেপথ্যে কার গলা ছিল জানো? খ্যাতনামা মার্কিন অভিনেতা জেমস আর্ল জোনস-এর। কিন্তু ছোটবেলায় তিনিও তোতলা ছিলেন। যখন সমস্যাটা ধরা পড়ে, সেই সময় তিনি মিশিগান-এ তাঁর দাদু-ঠাকুমার কাছে থাকতে যান। এক সময়ে সমস্যাটা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছয় যে জোনস আট বছর কার্যত মূক-ই হয়ে গিয়েছিলেন। যখন তিনি হাই স্কুলে গেলেন সেই সময় তাঁর ইংরেজি শিক্ষক তাঁকে এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে কবিতা আবৃত্তি এবং জনসমক্ষে বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলেন। এই ভাবেই ক্রমশ তাঁর তোতলামো কেটে যায়। সেই সময়ে তিনি অভিনয়ের প্রশিক্ষণও নেওয়া শুরু করেছিলেন। এবং পরে এখান থেকেই তিনি অভিনয়কে তাঁর কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন।
• ১৮৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে যখন ‘ওয়ার্ল্ড’স পার্লামেন্ট অব রিলিজিয়নস্’-এর সম্মেলন বসল তখন স্বামী বিবেকানন্দ সেখানে রীতিমত সাড়া ফেলে দিলেন। যেখানে অন্যান্য প্রতিনিধিরা শুধুই তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নীতির কথা বললেন, সেখানে বিবেকানন্দ বললেন সকল ধর্মের উৎস যিনি, সেই ঈশ্বরের কথা। তাঁর সকল ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সর্বধর্মসমন্বয়ের কথা সকলের প্রবল সমর্থন পেল। সম্মেলন শেষে সেখানকার মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল এবং পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভাষণ দিতে যান।
• প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডি তাঁর অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতার জন্য, এবং অনেক সময় কাব্যিক অভিব্যক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি তাঁর একটি নোটবুকে এই ধরনের প্রেরণামূলক উদ্ধৃতি লিখে রাখতেন এবং সময়ে সময়ে সেগুলি নিজের বক্তৃতায় কাজে লাগাতেন। ‘আমার প্রিয় আমেরিকাবাসী, এ প্রশ্ন কোরো না যে দেশ তোমার জন্য কী করতে পারে, বরং প্রশ্ন করো, তুমি দেশের জন্য কী করতে পারো’। এটি তাঁরই একটি বিখ্যাত উক্তি। কিন্তু তাঁর অনেক প্রসিদ্ধ উক্তিই তাঁর
নিজের ছিল না। |
১ কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এক বার সংসদের সমস্ত জানালা বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন যাতে বাইরের লোক তাঁর তোতলানো শুনতে না পান?
২ প্রাক্তন এক মার্কিন রাষ্ট্রপতি যে ভাবে জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলতেন বা ভাষণ দিতেন, সেই ধরনকে কয়েক জন গবেষক ‘স্মাইলিং আইজ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ইনি কে?
৩ এই প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অধিনায়কের নামে একটি খেলার মাঠ রয়েছে। ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি এখন ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে নতুন কেরিয়ার শুরু করেছেন। কে এই ক্রিকেটার?
৪ জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত ‘ট্রিস্ট উইথ ডেস্টিনি’ বক্তৃতার শেষ দুটি শব্দ কী ছিল? ৫ ইনি এক বিখ্যাত বক্তা। এক বার তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না, যতক্ষণ না ন্যায় জলের মতো এবং ন্যায্যতা শক্তিশালী ঝর্নার মতো বাধাহীন ভাবে বয়ে যাচ্ছে’। কে এই ব্যক্তি? |
১) আইজ্যাক নিউটন, ২) বিল ক্লিন্টন, ৩) মার্ক টেলর, ৪) জয় হিন্দ, ৫) মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র |