|
|
|
|
|
|
দেশের জন্য
| এই পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট
খুব গুরুত্বপূর্ণ
বিবেক এস রাজ
সম্পাদক, সিভিল সার্ভিসেস টাইমস্ |
|
সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় কিন্তু নোট বা টেক্সট বই মুখস্থ করে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। তুমি যখন কোনও প্রশ্ন উত্তর করছ তখন সেই বিষয়টির সব দিক তুমি বিবেচনা করছ কি না, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়ের সঙ্গে কী ভাবে তার যোগ রয়েছে, তোমার নিজের ধারণা সেই বিষয়ে স্বচ্ছ কি না এগুলি দেখা হয়। একটা দিক ছেড়ে গেলে হয়ত গোটা ব্যাপারটাই ঠিকমত দাঁড়াবে না। ফলে তোমাকে যে কোনও বিষয়ই সব দিক থেকে জানতে হবে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির তিনটি ধাপ রয়েছে:
১) বিভিন্ন তথ্য এবং পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা,
২) তথ্যগুলিকে নিজের মতো করে বুঝে নিয়ে আত্মস্থ করা যাতে বিভিন্ন বিষয়ে তোমার ধারণাগুলো পরিষ্কার হয়
এবং
৩) বিষয়গুলি বার বার লিখে অনুশীলন করা যাতে এক সময় বিষয়টির ওপর তোমার দক্ষতা তৈরি হয়ে যায়।
এই পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল টাইম ম্যানেজমেন্ট। তবে সেটা শুধু পরীক্ষার হলেই নয় তার আগে প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও। পরীক্ষার গত কুড়ি বছরের প্রশ্নপত্র ভাল দেখে নাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে প্রশ্ন পাল্টায়, কোন কোন বছর কোন কোন বিষয়ে প্রশ্ন বেশি আসছে এগুলি খুঁটিয়ে বার করতে পারলে পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তোমার বেশ কিছুটা সুবিধে হবে। আর প্রথম থেকেই মেনস্ পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করা শুরু করো। তার সঙ্গে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নিতে থাকো। আগে প্রিলিমিনারি পাশ করি, তার পর মেনস্-এর জন্য পড়ব এ ভাবে এগোলে কখনওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে না।
গত বছর থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ঐচ্ছিক বিষয়ের পেপারটি উঠে গিয়ে অন্য বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে জেনারেল স্টাডিজের (জি এস) পেপারের ক্ষেত্রে সেই রকম কোনও রকম ফের হয়নি। জি এস-এর নানান বিষয়গুলি কী ভাবে তৈরি হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করা যাক। জি এস-এর ইতিহাসের প্রশ্ন তৈরি করার ক্ষেত্রে এনসিইআরটি-র নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বই ছাড়াও বিপান চন্দ্র, গ্রোভার ও মেহতা এবং সুমিত সরকারের বই দেখা যেতে পারে। ভারত এবং বিশ্বের ভূগোল পড়ার ক্ষেত্রে খুল্লারের ইন্ডিয়া আ কম্প্রিহেনসিভ জিয়োগ্রাফি, আর সি তেওয়ারির ইন্ডিয়ান জিয়োগ্রাফি এবং জি সি লিওয়ং-এর ফিজিকাল জিয়োগ্রাফি বইগুলি দেখতে পারো। সেই সঙ্গে অবশ্যই একটা স্কুলের অ্যাটলাসের বই থাকা চাই। ভারতীয় সংবিধান পড়ার জন্য ডি ডি বসু (ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন), পি এম বক্সি (ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন) ও সুভাষ সি কশ্যপের (আওয়ার কনস্টিটিউশন অ্যান্ড আওয়ার পার্লামেন্ট) বইগুলি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতি এবং সামাজিক বিষয়ের প্রশ্নগুলি অনেক সময়েই ছেলেমেয়েরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জাতীয় নীতি, সামাজিক গুরুত্বের বিষয়, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা, আন্তর্জাতিক সংস্থার (যেমন ডব্লিউ এইচ ও, আই এম এফ ইত্যাদি) কাজকর্মের ওপর এখানে বেশ ভালই প্রশ্ন আসে বা আসতে পারে। এই বিষয়গুলি এড়িয়ে গেলে পরে মেনস্-এ জেনারেল স্টাডিজ পরীক্ষায় অনেক সময় ছাত্রছাত্রীদের মুশকিলে পড়তে হয়। ফলে এই অংশটি তৈরি করতে আই সি ধিংরা-র ইভলিউশন অব ইন্ডিয়ান ইকনমি (এনসিইআরটি), উমা কপিলা, দত্ত অ্যান্ড সুন্দরম বা মিশ্র অ্যান্ড পুরির ইন্ডিয়ান ইকনমি-র বই, ইকনমিক সার্ভে, দ্য ইকনমিক টাইমস সংবাদপত্র এবং যোজনা বা কুরুক্ষেত্র পত্রিকা সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। প্রিলিমিনারিতে পরিবেশ পরিবর্তন, ইকোলজি ও বায়োডায়ভার্সিটির উপর সে সমস্ত প্রশ্ন আসে সেগুলির অধিকাংশ পাওয়া যাবে ইন্টারনেট, বিভিন্ন খবরের কাগজ বা পত্রিকায়। তাই যখনই কোথাও এই ধরনের খবর দেখবে বা পাবে সেগুলি একটা খাতা বানিয়ে নোট করে রাখবে অথবা কোনও ফাইলে কেটে রেখে দেবে। সায়েন্স-এর অংশটির জন্য তো এনসিইআরটি-র দশম বা দ্বাদশ স্তরের বইগুলি দেখলেই চলবে। আর রইল কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স। এখন এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, বই বা প্রতিষ্ঠানের ওপর তথ্যের তুলনায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কারণ, তার প্রভাব এবং অন্যান্য আনুসঙ্গিক বিষয়েরও ওপর প্রশ্ন করার সম্ভাবনা বেশি। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স তৈরি করতে একটা জাতীয় সংবাদপত্র, মনোরমা ইয়ার বুক, ইন্ডিয়া ইয়ার বুক-এর মতো বইগুলি কনসাল্ট করতে হবে।
ঐচ্ছিক বিষয়ের বদলে দ্বিতীয় পেপারে কম্প্রিহেনশন বিভাগটির জন্য ইংরেজি ভাল করে ঝালিয়ে নিতে হবে। শব্দভান্ডার তৈরি করতে প্রতি দিন ডিকশনারি দেখ। দরকার হলে সঙ্গে একটা পকেট ডিকশনারি রাখতে পারো। পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদপত্র, পত্রিকা বা বই পড়ে খুব তাড়াতাড়ি কোনও বিষয় বোঝার অভ্যাস করো। ইংরেজি প্র্যাকটিসের জন্য ইংলিশ প্রফিশিয়েন্সি আইএমএস ইন্ডিয়া, রেন অ্যান্ড মার্টিনের ইংলিশ গ্রামার, নরম্যান লিউইস-এর ওয়ার্ড পাওয়ার মেড ইজি, অরুণ শর্মার ভার্বাল এবিলিটি বইগুলির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কমিউনিকেশন স্কিলস সহ ইন্টারপার্সোনাল স্কিলস-এ অংশটি অনেকাংশেই মনস্তাত্ত্বিক। অন্য দিকে, লজিকাল রিজনিং এবং অ্যানালিটিকাল এবিলিটির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অঙ্কের উপর ভাল দখল ও একটি বিষয়কে মূল্যায়নের ক্ষমতা থাকতে হবে। এর জন্য বি এস সিজওয়ালির অ্যানালিটিক্যাল অ্যান্ড লজিক্যাল রিজনিং, আর এস অগ্রবালের আ মডার্ন অ্যাপ্রোচ টু লজিকাল রিজনিং, অভিজিৎ গুহ-র কোয়ান্টিটেটিভ অ্যাপটিটিউড ফর কম্পিটিটিভ এগজ্যামস্ মতো প্র্যাকটিসের বই বাজারে পাওয়া যায়। জেনারেল মেন্টাল এবিলিটি-তে প্রচুর নম্বর উঠতে পারে। এর জন্য আগের বছরের প্রিলিমিনারির প্রশ্নপত্র দেখ। সঙ্গে থর্প অ্যান্ড এডগার-এর কোর্স ইন জেনারেল মেন্টাল এবিলিট অ্যান্ড কোয়ান্টিটেটিভ অ্যাপটিটিউড প্র্যাকটিস করতে পারো। আর বেসিক নিউমারেসির জন্য দশম শ্রেণির স্ট্যাটিসটিক্সের অংশগুলি ভাল করে দেখে নিতে হবে। একই সঙ্গে এই শ্রেণিরই ডেটা ইন্টারপ্রিটেশনের চার্ট, টেবিল, গ্রাফ-এর অংশগুলি সম্পর্কে ভাল ধারণা তৈরি করে রাখতে হবে।
দেখবে, প্রিলিমিনারির অধিকাংশ বই-ই কিন্তু মেনস্-এর সময়েও কাজে লেগে যাবে। মনে রাখবে, মেনস্-এ অনেক প্রশ্নেই শব্দসংখ্যা দেওয়া থাকে। তোমরা কিন্তু সেই শব্দ সংখ্যার মধ্যেই উত্তর করতে চেষ্টা করবে। তবে অবশ্যই সেই শব্দ সংখ্যার মধ্যে যথাযোগ্য উত্তর দিতে হবে। এখানে অনেক তথ্য মুখস্থ করতে হলেও প্রশ্ন করার সময় বুঝে উত্তর করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর, তুমি যখন কারেন্ট বা জেনারেল ইস্যুর কোনও মতামত ভিত্তিক প্রশ্ন লিখবে, তখন সেই বিষয়ের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলি লিখে তার পর নিরপেক্ষভাবে সেটিকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করবে।
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা হল ধৈর্যের পরীক্ষা। পরীক্ষার কোনও পর্যায়ে অসফল হলে ভেঙে পড়ে হাল ছেড়ে দিও না। লেগে থাকলে এই পরীক্ষায় সফল হওয়ার চান্স বেশি, এটা আমি হলফ করে বলতে পারি। |
|
|
|
|
|