দেশের জন্য
কোনও বিষয় বাদ দিয়ে পড়তে যেয়ো না
আই এ এস, র‌্যাঙ্ক ৪২, ২০০৯-এর পরীক্ষার্থী
মি যে বার আই এ এস পেলাম সেটা ছিল আমার তৃতীয় প্রচেষ্টা। রেজাল্ট বেরোনোর আগে পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলাম না যে পরীক্ষায় পাব কি না। তাই চতুর্থ বার পরীক্ষা দেব বলে জোরকদমে পড়াশোনাও শুরু করে ফেলেছিলাম। যদিও আমি তখন নেট পাশ করে ইতিমধ্যেই একটা কলেজে অধ্যাপনা করছি। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে যোগ দেওয়ার। ফলে অধ্যাপনা করলেও আই এ এস হওয়ার ইচ্ছেটা ছাড়িনি কখনও। সত্যি বলতে, সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় বসে এক বারেই পেয়ে যাওয়াটা খুব দুর্লভ ঘটনা। তাই এই পরীক্ষার সব থেকে বড় স্ট্র্যাটেজি হল হাল না ছেড়ে লেগে থাকা। যদি না পাও, তা হলে খুঁজে দেখ তোমার কোথায় কোথায় খামতি ছিল যার ফলে তুমি অকৃতকার্য হলে। এই খামতিগুলোকে খুঁজে বার করতে পারাটা কিন্তু খুব জরুরি। আর সেটা করতে পারলে পরীক্ষায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে তুমি কিন্তু এক ধাপ এগিয়ে গেলে।
এই পরীক্ষার জন্য এক বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। আই এ এস-র মেনস্ পরীক্ষাটা হয় মোটামুটি অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ। আমিও ঠিক এই রকম সময় থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। আগে শুরু করি মেনস-এর প্রস্তুতি দিয়ে। কারণ আমার মনে হয় মেনস্-এর প্রস্তুতিটা ভাল করে নেওয়া খুব জরুরি। অনেকেই মনে করে প্রিলিমিনারি পাশ করে তবে মেনস্-এর জন্য পড়াশোনা করবে। কিন্তু মুশকিলটা হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরে যে সময় থাকে তাতে পুরো মেনস্-এর সিলেবাস সম্পূর্ণ করা একটু কঠিন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সাধারণত মে মাস নাগাদ হয়। তাই এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে ফেব্রুয়ারি থেকে। আমি তাই-ই করেছিলাম। আর প্রিলি হয়ে যাওয়ার পর আবার পড়াশোনা শুরু করে দিই মেনস্-এর জন্য।
এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে একটা জিনিস সব সময় মাথায় রাখতে হবে যে এটা কিন্তু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব পরীক্ষা তোমরা এত দিন দিয়ে এসেছ, তার মতো নয়। এখানে এই বিষয়টা পড়ে যাব, ওটা ছেড়ে দেব এটা একেবারেই চলে না। মেনস্-এ যে দুটো অপশনাল পেপার থাকে তাতে কোনও কিছু বাদ দিতে যেয়ো না। তাতে আখেরে ক্ষতি তোমারই হবে। অপশনাল-এর জন্য যে বিষয়ই নাও, সেটার কোনও স্ট্যান্ডার্ড ভাল টেক্সট বই পড়ে ফেল। এ ছাড়া ইন্দিরা গাঁধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি-র সাবজেক্ট মেটিরিয়াল পাওয়া যায়। সেগুলি দেখতে পারো। আমার মতে, এগুলি তোমাদের খুব কাজে দেবে। অপশনাল-এর ক্ষেত্রে অনেকের ধারণা থাকে যে এই সাবজেক্টটা নিলে ভাল নম্বর উঠতে পারে বা ওই বিষয়টা খুব স্কোরিং। আমার মতে সব বিষয়ই স্কোরিং, নির্ভর করছে বিষয়টা তুমি কতটা ভাল করে বুঝতে পেরেছ তার ওপর। আমি যেমন ফিজিক্সের ছাত্রী। সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাতেও আমার একটা অপশনাল ফিজিক্স ছিল। অন্যটা ছিল হিস্ট্রি। আমি হিস্ট্রি শেষ মাধ্যমিকে পড়েছিলাম। তার পর একেবারে সিভিল সার্ভিসের অপশনালের জন্য বিষয়টি নিই। নেওয়ার আগে আমি কিন্তু ভাল করে পড়ে দেখে নিয়েছিলাম যে হিস্ট্রিতে আমি ইন্টারেস্ট পাচ্ছি কি না। অপশনাল বিষয় কিন্তু এক দু’দিনেই বাছা যায় না। বিষয় বাছতে তোমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে। সেই বিষয়ের বই পড়ে দেখতে হবে যে তুমি বিষয়টি বুঝতে পারছ কি না।
লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মুসৌরি
জেনারেল স্টাডিজ-এর জন্য একটা সর্বভারতীয় পত্রিকা ভাল করে পড়তে হবে। যেগুলি গুরুত্বপূর্ণ খবর যেমন ধরো, ভারতের সঙ্গে কোনও দেশের নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি হল, কোনও বড় নদীর ওপর নতুন বাঁধ তৈরি হওয়া এবং তার পরোক্ষ প্রভাব ইত্যাদি একটা ডায়রিতে টুকে রাখতাম। এবং কয়েক দিন অন্তর অন্তর সেগুলি চোখ বোলাতাম। প্রিলি ও মেনস্-এর অর্থনীতি অংশের জন্য আমি দেখতাম ইকনমিক সার্ভে অব ইন্ডিয়া। এখান থেকে বিভিন্ন বিষয়ের পরিসংখ্যান নোট করে রাখতাম। কেন্দ্রীয় বাজেট ভাল করে নজর করতাম। ইকনমিক টাইমস, ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস-এ মতো সংবাদপত্রে বাজেট সম্পর্কে যা খবর দিত সব খুঁটিয়ে পড়তাম। অর্থনীতির কোনও কথা বুঝতে অসুবিধে হলে আমি একটা সাইট দেখতাম investopedia. অর্থনীতির নানা ধরনের বিষয় এখানে দেওয়া থাকে। সায়েন্স-এ যেমন সেই বছর যাঁরা নোবেল পেয়েছেন তাঁদের নাম, কী কাজের জন্য পেয়েছেন সেগুলি দেখে রাখতাম। আর পড়তাম ‘ফ্রন্টলাইন’ পত্রিকার সায়েন্স বিভাগের খবরগুলি। ইতিহাস এবং ভূগোলের জন্য এনসিইআরটি-র একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির বইগুলি যথেষ্ট। স্ট্যাটিসটিক্সের ক্ষেত্রেও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বইগুলিই কাজে লাগবে। ইন্ডিয়ান কনস্টিটিউশন-এর জন্য সুভাষ কশ্যপ-এর ‘কনস্টিটিউশন’ এবং ‘আওয়ার পার্লামেন্ট’ বইগুলি কনসাল্ট করতাম। মেনস-এর জেনারেল স্টাডিজে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর প্রশ্ন থাকে। এর জন্য আমি দেখতাম ‘ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ’-এর ওয়েবসাইট (http://www.ipcs.org/)। এখানে অনেক লেখা থাকে এই ধরনের বিষয়ের ওপর। সেগুলি ভাল করে পড়ে নিতাম। যদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাও তা হলে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটে (http://pib.nic.in/newsite/mainpage.aspx) অনেক খবর পেয়ে যাবে।
প্রথম দুটো পেপারের (ল্যাঙ্গোয়েজ পেপার) ক্ষেত্রে সে ভাবে কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার নেই। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জ্ঞান থাকলেই পাশ করা যায়।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস্ রইল
১) গত দশ থেকে পনেরো বছরের পরীক্ষার প্রশ্ন (প্রিলি এবং মেনস্, দুটোই) সলভ করবে ঘড়ি ধরে।
আর
২) মেনস্-এ যতটা শব্দ সংখ্যা দেওয়া থাকবে ততটাই লিখবে।
৩) মেনস্-এ কোনও প্রশ্ন ছেড়ে আসবে না। যদি কিছুই না জানো তা হলে আজে বাজে লেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে যদি সামান্য কিছুও জানা থাকে তা হলে সেটাই লেখো।

আর ইন্টারভিউ-এর সময় যেটা জানবে না সেটা সোজাসুজি ‘জানি না’ বলতে কোনও ক্ষতি নেই। তাতে বরং ইন্টারভিউয়াররা খুশি হন। আর তুমি কতটা জানো-র থেকেও বেশি ইন্টারভিউয়াররা দেখতে চান যে কোনও পরিস্থিতিতে তুমি কেমন থাকো, বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতা তোমার আছে।
এমনিতে আমি কোনও বাইরের সাহায্য না নিলেও সল্টলেকের ইনস্টিটিউট অব সিভিল সার্ভিস অ্যাস্পির‌্যান্টস-এ সাপ্তাহিক টেস্ট দিতে যেতাম নিজেকে যাচাই করা ও খামতিগুলি জানার জন্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.