|
|
|
|
|
|
দেশের জন্য |
লেগে থাকাটাই আসল চ্যালেঞ্জ |
সৌরজিৎ দাস |
আমাদের দেশে সরকারি চাকরির দুনিয়ায় মানমর্যাদার দিক থেকে শ্রেষ্ঠ আসনটি যার জন্য বাঁধা, তার নাম ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস বা আই এ এস। জেনারেল স্ট্রিম তো বটেই ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, গবেষণা বা ম্যানেজেমন্ট পাশ করেও অনেক ছাত্রছাত্রী স্বপ্ন দেখেন সব চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন সরকারি পেশায় যোগ দেওয়ার। আর এ রকম একটা ‘এলিট সার্ভিস’-এ ঢোকার জন্য যে পরীক্ষাটি দিতে হয়, সেটি স্বভাবতই সোজা হয় না। তাই প্রতিযোগিতাটাও হয় জোরদার। তবে কথায় বলে, ‘নো মাউন্টেন ইজ টু বিগ টু ক্লাইম্ব’। তাই যারা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পর সরকারি চাকরি করবে বলে ভাবছ, তারা এই পরীক্ষা দিতে চাইলে সাহসে বুক বেঁধে প্রস্তুতি শুরু করো।
|
যোগ্যতা |
যোগ্যতার নিরিখে যে কোনও স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকই বসতে পারেন এই পরীক্ষায়। শর্ত হল, যে বছর পরীক্ষা, সেই বছরের ১ অগস্ট পরীক্ষার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তবে তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৫ বছর ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য ৩ বছরের ছাড় রয়েছে। পূর্ব-চাকুরিরত এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ছাড় রয়েছে যথাক্রমে ৫ বছর ও ১০ বছর। সাধারণ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় চার বার বসার সুযোগ পাবে। তবে তফসিলি জাতি ও জনজাতির ক্ষেত্রে সে রকম কোনও সীমা নেই। তবে অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি এবং প্রতিবন্ধী প্রার্থীরা সাত বার সুযোগ পাবেন পরীক্ষায় বসার।
|
পরীক্ষার খুঁটিনাটি |
আই এ এস-এর বাছাই প্রক্রিয়াটি হয় তিনটি ধাপ:
১) প্রিলিমিনারি
২) মেনস্
এবং
৩) ইন্টারভিউ।
আগে প্রিলিমিনারিতে দ্বিতীয় পেপারে যে ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা হত, গত বছর থেকে তা উঠে গিয়েছে। তবে প্রথম পেপার অর্থাৎ জেনারেল স্টাডিজ (জি এস)-এর পেপারটি যেমন ছিল তেমনই রয়েছে। এই পেপারে যে সব বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে সেগুলি হল ভারতের ইতিহাস (প্রাচীন, মধ্য ও আধুনিক) এবং ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন, ভারতীয় সংবিধান এবং শাসনপ্রক্রিয়া, সাধারণ বিজ্ঞান, ভারত ও পৃথিবীর ভূগোল, আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়ন (সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট বা সুস্থায়ী উন্নয়ন, দারিদ্র, জনতত্ত্ব বা ডেমোগ্রাফি ইত্যাদি), পরিবেশ, আবহাওয়া পরিবর্তন, বায়োডাইভার্সিটি বা জীব-বৈচিত্র্যের মতো বিষয় নিয়ে আমাদের চারপাশে এখন যা ঘটছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাক্রম।
আর দ্বিতীয় পেপারে থাকছে কম্প্রিহেনশন, কমিউনিকেশন স্কিলস সহ ইন্টারপার্সোনাল স্কিলস, ডিসিশন মেকিং অ্যান্ড প্রবলেম সলভিং, লজিক্যাল রিজনিং অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল এবিলিটি, জেনারেল মেন্টাল এবিলিটি, বেসিক নিউমারেসি (গণিত সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান), ডেটা ইন্টারপ্রিটেশন (চার্ট, গ্রাফ, টেবিল, ডেটা সাফিসিয়েন্সি ইত্যাদি এবং ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ কম্প্রিহেনশন স্কিলস-এর মতো বিষয়ের ওপর প্রশ্ন। বেসিক নিউমারেসি ও ডেটা ইন্টারপ্রিটেশন এবং ইংলিশ ল্যাঙ্গোয়েজ কম্প্রিহেনশন স্কিলস-এর প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণির পর্যায়ের হবে।
পরীক্ষায় এম সি কিউ অর্থাৎ মাল্টিপল চয়েস, অবজেকটিভ ধরনের প্রশ্ন থাকে। দুটো পেপারেই মোট নম্বর থাকবে ২০০। সময় থাকবে দু’ঘন্টা করে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নেগেটিভ মার্কিং। মানে, কোনও প্রশ্ন ভুল উত্তর করলে নম্বরের কিছুটা অংশ কেটে নেওয়া হবে। মনে রেখো, প্রিলি পরীক্ষা শুধু একটা কোয়ালিফাইং টেস্ট। এর নম্বর মেনস্-এর নম্বরের সঙ্গে যোগ হয় না।
মেনস্-এর পরীক্ষা প্রিলির চার থেকে পাঁচ মাস পরেই হয়। মোট ন’টি পেপারে প্রবন্ধ আকারের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। যে কোনও বিষয়ের ওপর প্রার্থীর ধারণার স্বচ্ছতা এবং বিচারশক্তির ক্ষমতা যাচাই করা হয় এই পরীক্ষায়। |
|
পেপার ১ (৩০০ নম্বর)
ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলযুক্ত যে কোনও একটি ভাষায় পরীক্ষা নেওয়া হবে।
পেপার ২ (৩০০ নম্বর)
ইংরেজি। প্রথম দুটি পেপারে প্রশ্নের ধাঁচ একই রকমের। থাকবে প্যাসেজ থেকে কম্প্রিহেনশন করা, সংক্ষিপ্তসার, শব্দের ব্যবহার, শব্দের অর্থ এবং ছোট প্রবন্ধ।
পেপার ৩ (২০০ নম্বর)
সামাজিক থেকে শুরু করে আধ্যাত্মিক যে কোনও বিষয়ের উপরই প্রবন্ধ রচনা করতে হতে পারে।
পেপার ৪ (৩০০ নম্বর)
জেনারেল স্টাডিজ প্রথম পত্র। প্রশ্ন থাকবে আধুনিক ভারত ও ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাস, ভারতের ভৌগোলিক বিবরণ, ভারতের সংবিধান ও রাজনীতি, ভারতের সাম্প্রতিক কালের উল্লেখযোগ্য
ঘটনাক্রমের ওপর।
পেপার ৫ (৩০০ নম্বর)
জেনারেল স্টাডিজ-এর দ্বিতীয় পত্র। প্রশ্ন আসে বিশ্ববাজারের সঙ্গে ভারতীয় অর্থনীতির যোগাযোগ, ভারত ও বহির্বিশ্ব, আন্তর্জাতিক সংগঠন ও ঘটনাবলি, বিজ্ঞান কারিগরি, যোগাযোগ ব্যবস্থা আর মহাকাশ বিজ্ঞানে সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং স্ট্যাটিসটিকাল অ্যানালিসিস, গ্রাফ এবং ডায়াগ্রাম থেকে।
পেপার ৬ এবং ৭ (প্রত্যেকটি ৩০০ নম্বর করে)
প্রথম ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ।
পেপার ৮ এবং ৯ (প্রত্যেকটি ৩০০ নম্বর করে)
দ্বিতীয় ঐচ্ছিক বিষয়ের প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ।
ইউ পি এস সি অনুমোদিত মোট ২৬টি বিষয়ের মধ্যে যে কোনও দু’টি ঐচ্ছিক বিষয় বেছে নিতে হয়। সেগুলি হল এগ্রিকালচার, অ্যানিমাল হাসব্যান্ড্রি ও ভেটারিনারি সায়েন্স, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, অ্যানথ্রপোলজি, বটানি, কেমিস্ট্রি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কমার্স ও অ্যাকাউনটেন্সি, ইকনমিক্স, ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, জিয়োগ্রাফি, জিয়োলজি, হিস্ট্রি, ল, ম্যানেজমেন্ট, ম্যাথমেটিক্স, মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল সায়েন্স, ফিলোজফি, ফিজিক্স, পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সাইকলজি, সোশিয়োলজি, স্ট্যাটিসটিক্স এবং জুঅলজি। তবে, কয়েকটি ক্ষেত্রে ঐচ্ছিকের জোড় নেওয়ায় বিষয়ে নিয়ম রয়েছে ইউ পি এস সি- তে। যেমন ধরো,
১) পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
২) কমার্স ও অ্যাকাউন্ট্যান্সির সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট
৩) অঙ্ক-র সঙ্গে স্ট্যাটিস্টিক্স
৪) এগ্রিকালচার-এর সঙ্গে অ্যানিমাল হাজব্যান্ড্রি ও ভেটারিনারি সায়েন্স
৫) ম্যানেজমেন্ট-এর সঙ্গে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
৬) অ্যানিমাল হাজব্যান্ড্রি ও ভেটারিনারি সায়েন্স-এর সঙ্গে মেডিক্যাল সায়েন্স
৭) সোশিয়োলজি ও অ্যানথ্রোপলজি প্রতিটি জোড় থেকে যে কোনও একটা সাবজেক্ট বেছে নিতে হবে।
এ ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে যে কোনও একটি নিতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
প্রথম দুটি পেপার (পেপার ১ এবং ২) কিন্তু কোয়ালিফাইং পেপার। তবে এই দুটি পেপারেই কিন্তু পাশ অবশ্যই করতে হবে। যে কোনও একটিতে ফেল করলেও বাকি পেপারগুলো আর দেখাই হবে না।
মেনস্ পার হলে আসে মৌখিক পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ। হয় ইংরেজি অথবা যে ভাষায় প্রার্থী লিখিত পরীক্ষা (মেনস্) দিয়েছে সেই ভাষায়। এখানে মোট ৩০০ নম্বর থাকে।
ওয়েবসাইট: http://www.upsc.gov.in/ |
|
|
|
|
|