সারেঙ্গায় ট্রাক-ট্রেকারের সংঘর্ষে ১১ জনের মৃত্যু
ট্রাকের সঙ্গে যাত্রী বোঝাই একটি ট্রেকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হল ট্রেকার চালক-সহ ১১ জনের। তাঁদের মধ্যে ছ’জন মহিলা। জখম পাঁচ জন। শনিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানার বড়গাড়রা মোড়ের কাছে, সারেঙ্গা-গোয়ালতোড় রাস্তায়। দুর্ঘটনার পরেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবিতে উত্তেজিত জনতা দুর্ঘটনাস্থলে দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করে। পুলিশের আশ্বাসে বিকেলে অবরোধ ওঠে।
আহতদের মধ্যে এক জনকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাকি চার জনের চিকিৎসা চলছে সারেঙ্গা মিশন হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে দু’টি পরিবারের পাঁচ জন রয়েছেন। মৃতদের অধিকাংশই দিনমজুর। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে পাঁচ জনের বাড়ি সারেঙ্গার গোপালডাঙা গ্রামে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গৌর মল্ল (৪৮), তাঁর স্ত্রী জবা মল্ল (৪০) ও তাঁদের ছেলে সুভাষ মল্ল (১৪)। এ ছাড়া ওই গ্রামের কমলা মল্ল (৪০) ও যতীন মল্ল (১২) রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন সারেঙ্গার গাড়রা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে মা ভক্তি আহিদ (৫৮) ও তাঁর ছেলে মনসারাম আহিদ (২৪) আছেন। ওই গ্রামেরই বন্দনা কর্মকার (১৬) নমিতা কর্মকার (৩৫) ও সুমিত্রা আহিদের (২৫) মৃত্যু হয়েছে। ট্রেকার চালক সারেঙ্গার কুলডিহা গ্রামের আকাশ দুলে (২৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালডাঙা ও গাড়রা গ্রামের কয়েকটি পরিবার প্রতিদিন গড়গড়িয়া পঞ্চায়েতের নিবড়া গ্রামে ইটভাটায় কাজ করতে যান।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রাক ও ট্রেকার। নিজস্ব চিত্র।
এ দিন দুপুরে তাঁরাই ট্রেকারে বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিলেন এলাকার আরও কিছু বাসিন্দা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা সহদেব কর্মকারের কথায়, “দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ যাত্রী বোঝাই ট্রেকারটা সারেঙ্গা থেকে গাড়রার দিকে যাচ্ছিল। উল্টো দিক থেকে একটি খালি ট্রাক ঝড়ের গতিতে এসে ট্রেকারের সামনে ধাক্কা মারে। ট্রেকারটা রাস্তার পাশের জমিতে ছিটকে পড়ে। ট্রাকটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে গড়িয়ে জমিতে নেমে যায়। এর পরেই ট্রাকচালক ও কর্মী পালিয়ে যায়।”
আহতদের আর্তনাদ শুনে গাড়রার বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন। আসে পুলিশ। ট্রেকারের তলায় কয়েক জন যাত্রী চাপা পড়ে ছিলেন। স্থানীয়দের সাহায্যে পুলিশকর্মীরা যাত্রীদের উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলেই ছ’জনের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১০ জনকে স্থানীয় সারেঙ্গা মিশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে এক জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরও চার জনের।
এ দিন দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সারেঙ্গা থেকে গোয়ালতোড় যাওয়ার রাস্তার ডান দিকে মাঠের উপরে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে রয়েছে ট্রেকারটি। ভিতরে জায়গায় জায়গায় রক্ত। গোপালডাঙা, গাড়রা, খয়েরপাহাড়ি-সহ আশপাশের কয়েক হাজার বাসিন্দা ভেঙে পড়েছিলেন। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বেপরোয়া ভাবে ওই রাস্তায় বালি বোঝাই ট্রাক চলছে, কিন্তু পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাঁরা রাস্তা অবরোধ শুরু করে দেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সারেঙ্গার হাসপাতালে এসেছিলেন মৃতদের আত্মীয়েরা। দাদা-বৌদি ও ভাইপোকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন গোপালডাঙার গৌর মল্লের সম্পর্কিত ভাই সহদেব মল্ল। তিনি বলেন, “স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে গৌরদার সংসার। প্রতিদিনের মতো দাদা-বৌদি ইটভাটায় কাজে গিয়েছিল। ভাইপো ওই এলাকায় আলু কুড়োতে গিয়েছিল। ওদের সংসারটা শেষ হয়ে গেল।” ওই একই ইটভাটায় ছেলের সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন গাড়রা গ্রামের ভক্তিদেবী। দুর্ঘটনা তাঁদেরও কেড়ে নিয়েছে। স্ত্রী ও ছেলেকে হারিয়ে বৃদ্ধ ভানু আহিদ হাসপাতাল চত্বরে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন।
এসডিপিও (খাতড়া) নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ট্রাকটি বেপরোয়া ভাবে যাচ্ছিল। চালকের সন্ধান চলছে।” জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “মৃতদের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অন্য সহায়তাও করা হবে।” সন্ধ্যায় সারেঙ্গা হাসপাতালে যান রাজ্যের শিশুকল্যাণমন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মৃত ও আহতরা দরিদ্র পরিবারের। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.