বেহাল বাসস্টপ
যন্ত্রণার প্রতীক্ষা
বাসের জন্য ক্যারি রোডের মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৬০ বছরের অমল নস্কর। এই বাসস্টপে কোনও ছাউনি নেই। কড়া রোদে দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়ানো পরে মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্থানীয় মানুষজন চোখে-মুখে জল দিয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
কাজিপাড়ার মোড়ে এসে বালির বাসিন্দা রাজু ঘোষ ঠিক করতে পারছিলেন না কোথায় বাস দাঁড়াবে। কারণ, গোটা রাস্তা জুড়েই যাত্রীরা দাঁড়িয়ে।
শুধু এই দু’জনই নন, হাওড়া ও বালি পুর এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করা অধিকাংশ যাত্রীর অভিজ্ঞতা প্রায় একই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাসছাউনি নেই। কয়েকটি জায়গায় থাকলেও ভাঙাচোরা বা জবরদখল হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও জায়গায় আবার বাস কোথায় দাঁড়াবে তা-ই বোঝা দায়।
বালি থানা
সাত মাস আগে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট তৈরির পরে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে উদ্যোগী হয়েছিল পুলিশ। মিলেছে সুফলও। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যানজট অনেক কমেছে। কিন্তু অভিযোগ, শহরের অনেক জায়গাতেই ঠিকমতো বাসস্টপ নেই। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়। যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “বাসস্টপে ছাউনি তৈরির জন্য পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যেখানে-সেখানে বাস থামা বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যেই কেস দেওয়া শুরু হয়েছে।”
দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে নেমে ক্যারি রোড থেকে মুম্বই রোড পর্যন্ত কোনা এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তায় রয়েছে আটটি বাসস্টপ। ক্যারি রোড, গড়ফা, বেলেপোল, বাকসাড়া, জানা গেট, সাঁত্রাগাছির মতো বাসস্টপ থেকে অনেকে বাস ধরেন। অভিযোগ, বেশির ভাগ জায়গায় নির্দিষ্ট কোনও বাসস্টপই নেই। যেখানে খুশি বাস দাঁড়ায়। নেই ছাউনির ব্যবস্থাও।
হাওড়া কোর্ট
একই ছবি আন্দুল রোড ও হাওড়া-আমতা রোডের। অনেক জায়গায় নির্দিষ্ট বাসস্টপ নেই। হাঁসখালি পোল এলাকার বাসিন্দা সুবীর রায় বলেন, “আন্দুল রোডে নির্দিষ্ট বাস দাঁড়ানোর জায়গা নেই। যাত্রীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।” অধিকাংশ জায়গায় নেই ছাউনিও। কোথাও আবার টিনের ছাউনি ভেঙে পড়ছে। কোথাও দখল করে গুমটি তৈরি হয়ে গিয়েছে, কিংবা ভবঘুরেদের আস্তানা। হাওড়া পুরসভার সামনে হাওড়া আদালতের দিকের ফুটপাথের উপরে বাসস্টপ বানিয়েছে হাওড়া পুরসভা। কিন্তু সেখানে বাস দাঁড়ায় না। এখানে প্রায় রোজই কাজে আসেন ডানকুনির দীপশঙ্কর রায়। তাঁর কথায়: “বাসস্টপের সামনে রেলিং দিয়ে ঘেরা। মোটরসাইকেলের পার্কিং। হকাররা বসে থাকেন। যাত্রীরা দাঁড়াবেন কী ভাবে?”
জয়সোয়াল হাসপাতাল কাজিপাড়া
জিটি রোডের অবস্থা আরও খারাপ। দক্ষিণে শিবপুর থেকে উত্তরে বালি পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিমি রাস্তায় রয়েছে বেশ কয়েকটি বাসস্টপ। দক্ষিণে ব্যাতাইতলা মোড় থেকে শুরু করে কাজিপাড়ার মোড়, শিবপুর বাজার, শিবপুর ট্রাম ডিপো, কাউসঘাট রোড, ফজির বাজার, সন্ধ্যাবাজার, মল্লিক ফটক, বঙ্গবাসী, পিলখানা, সালকিয়া চৌরাস্তা, জয়সোয়াল মোড়, লিলুয়া ছোট গেট, বড় গেট, বেলুড় বাজার, বেলুড় মঠ-সহ বালি খাল পর্যন্ত এই বাসস্টপগুলিতে কোনও ‘স্টপ লাইন’ মার্কিং নেই। অধিকাংশ জায়গায় ছাউনি নেই।
যাত্রী শেডের বিষয়ে বালি পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “বালি পুর এলাকার মধ্যে প্রতিটি বাসস্টপকে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সে জন্য বিজ্ঞাপন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তাতে পুরসভারও আয় বাড়বে।” পাশাপাশি, হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়ালের কথায়: “ইতিমধ্যেই বেশ কিছু যাত্রী শেড আমরা তৈরি করেছি। কিন্তু, ওই সুন্দর যাত্রী শেডগুলি থেকে স্টিলের রেলিং প্রায়ই চুরি হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশকে আমরা বাসস্টপগুলি চিহ্নিত করে দিতে বলেছি। সেখানেই পুরসভা বাসস্টপ তৈরি করবে।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী

আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ৪৪তম ‘হাওড়া কালার সালঁ ২০১২’। হাওড়া মেডিক্যাল ক্লাবের সেমিনার হলে পাঁচ দিনের এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন ২৬টি দেশের ৩৯৫জন আলোকচিত্রী। ২২৮০টি আলোকচিত্রের মধ্যে থেকে বিচারকদের নির্বাচিত ৩৪০টি ছবি নিয়ে প্রদর্শনী হয়।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.