সম্পাদকীয় ...
বিরল মানুষ
চিন রমেশ তেণ্ডুলকরের এক শত সেঞ্চুরি অবশেষে পূর্ণ হইয়াছে। এ জন্য তাঁহাকে ও তাঁহার অনুরাগীদের দীর্ঘ এক বছর এবং চৌত্রিশটি আন্তর্জাতিক ইনিংস অপেক্ষা করিতে হইয়াছে। তবে এই নজিরহীন মাইলফলকটিতে পৌঁছনো যে সচিনের পক্ষে কেবল সময়ের অপেক্ষা, সে বিষয়ে কাহারও কোনও সংশয় ছিল না, বিশেষত বারংবার যখন তিনি আশি বা নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছাইয়াও আউট হইতেছিলেন। ক্রিকেট ব্যাটিংয়ে এমন খুব বেশি রেকর্ড নাই, যাহা সচিন নূতন করিয়া গড়েন নাই। তবু একশোটি শত রানের রেকর্ড এক অনুপম সাধনারই সিদ্ধি। ইহা এমন এক মাইলফলক, যাহা ভবিষ্যতেও কেহ সহসা স্পর্শ করিতে পারিবেন বলিয়া মনে হয় না।
সচিন তেণ্ডুলকরের পক্ষে যে তাহা সম্ভব হইয়াছে, তাহার কারণ তাঁহার নিষ্ঠা, অধ্যবসায়, হার-না-মানা মানসিকতা। ৩৯ বছরে খুব কম ক্রিকেটারই ব্যাট হাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইশ গজে নামিতে সমর্থ। ক্রিকেটের মতো একদা রাজসিক খেলাও এখন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। শীতকালীন অবসরযাপনের ক্রিকেট আর নাই, এখন সম্বৎসর ক্রীড়াসূচি এমন ভাবে ঠাসা থাকে যে, বিশ্রাম কিংবা আহত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যথাযথ শুশ্রূষার অবকাশটুকুও মেলে না। তাই বহু প্রতিভাবান ক্রিকেটারও সাফল্য অর্জনের প্রবল চাপ ধারাবাহিক ভাবে সহ্য করিতে পারেন না। কিছু কাল খেলিবার পরেই ক্লান্ত, বিধ্বস্ত হইয়া পড়েন এবং উপর্যুপরি চোট-আঘাতের সমস্যা এবং সর্বোচ্চ স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জনের ব্যর্থতা তাঁহাদের ক্রীড়াঙ্গন হইতে সরাইয়া লয়। তাঁহারা অবসর গ্রহণ করেন। আবির্ভাবের লগ্ন হইতে সচিন তেণ্ডুলকর কিন্তু দুই দশকেরও অধিক কাল ধরিয়া সর্বোচ্চ স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আসর মাতাইয়া চলিয়াছেন।
এবং এখনও তাঁহার রান-ক্ষুধা অফুরান। তাঁহাকে কখনও ক্লান্ত দেখায় না। মাঝেমধ্যে চোট-আঘাত পাইলেও অল্প কাল বিশ্রামের পরই তিনি স্বমহিমায় মাঠে হাজির। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলার এই জেদ, তাহাকে কার্যকর করিতে নিরন্তর অনুশীলন, নিজেকে ক্রমাগত প্রতিপক্ষ বোলারের নিত্যনূতন মারণাস্ত্রের মোকাবিলার উপযুক্ত রক্ষণে প্রস্তুত করিয়া তোলা, প্রয়োজনে খেলার ধরন ও শৈলী পাল্টাইয়া ফেলার নমনীয়তা এই সব কিছুই সচিন তেণ্ডুলকরকে নির্মাণ করিয়াছে। আর একের পর এক কীর্তি স্থাপন করিয়া ব্যাটিংয়ের অধিকাংশ রেকর্ড হস্তগত করার পরেও তিনি মাঠের উপর দর্শকদের সামনে কিংবা ভিতরে ড্রেসিং রুমের অন্তরালে খেলোয়াড়োচিত মনোভাবের আদর্শ স্থাপন করিয়া গিয়াছেন। তরুণ প্রজন্মের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করা কিংবা সমবয়সী ক্রিকেটারদের সম্মান প্রদর্শনে তিনি অকুণ্ঠ। দীর্ঘ খেলোয়াড় জীবনে তাঁহাকে কদাচিৎ মাথা গরম করিতে, ধৈর্য হারাইতে কিংবা উগ্র, আক্রমণাত্মক আচরণ করিতে দেখা গিয়াছে। তাই দেশের তরুণ সমাজের কাছেও তিনি এক আদর্শ হইয়া উঠিতে পারিয়াছেন। শততম শতরানের পরে সচিন তেন্ডুলকর বলিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর নহেন, মানুষ। ইহা সত্য, কিন্তু অর্ধসত্য। তিনি বিরল মানুষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.