কবিয়াল সম্রাটের জন্মভিটে সাগরদিঘি থানার জিনদিঘি গ্রামে গত ৫ মাচর্র্ (২১ ফাল্গুন) থেকে শুরু করে ৭ দিনের ‘গুমানি দেওয়ান মেলা’ সম্পন্ন হল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যধন্য কবিয়াল সম্রাট গুমানি দেওয়ানের ১১৬তম জন্ম দিবসের ওই অনুষ্ঠান আসলে আর পাঁচটি সরকারি অনুষ্ঠানের মতোই নিয়মরক্ষার সামিল মাত্র। ফলে লোকসংস্কৃতি জগতের ওই বিরল ব্যক্তিত্বের বিষয়ে বর্তমান প্রজন্ম আজও অন্ধকারেই রয়ে গেল। ১৩০২ বঙ্গাব্দের ২১ ফাল্গুন তাঁর জন্ম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনও ঝোঁক ছিল না। মুখে মুখে মাটির গন্ধমাখা ছড়া তৈরির দুর্লভ ক্ষমতার তিনি অধিকারী ছিলেন।
যেমন
‘একলা পথে চলছি আমি কেউ নেই আমার সাথে।
বাপ ছিলেন না ঘোড়া কিনে চলব কেমনেতে॥
বাঁশের ঝাড়ে, গাছের ডালে, শালিখ পাখির ছা।
মাঠে মাঠে বগের পাল, দিঘল দিঘল পা॥
মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি কবিগানের দলে যোগ দেন। তখন থেকেই তাঁকে ফরমায়েসি পালাগান রচনা করতে হয়। রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ থেকে কাহিনি নিয়ে তিনি কবিগান রচনা করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি দুর্যোধন, কংস, রাবণের মতো জনমানসে অশ্রদ্ধেয় খলনায়কের চরিত্রে অবতীর্ণ হতেন। বলিষ্ঠ যুক্তি ও মনোরম বাচন ভঙ্গিতে তিনি ওই সব চরিত্রগুলিকে মনোগ্রাহী ও আকর্ষণীয় করে তুলতেন। মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম ও পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষজন রাতের পর রাত জেগে গুমানি দেওয়ানের কবিগান শুনে মোহিত হতেন। কবিয়াল বসন্ত সরকার ও লম্বোদর চক্রবর্তীর সঙ্গে গুমানি দেওয়ানের কবিগানের পালা এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে, মানুষজন এক সঙ্গে উচ্চারণ করতেন ‘গুমানি-বসন্ত’, গুমানি-লম্বোদর’এ এবং তাঁদের মধ্যে কবিগানের লড়াই আছে শুনলেই রোমাঞ্চ অনুভব করতেন। জীবনের শেষপর্বে ‘বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন’-এ তিনি নিয়মিত আমন্ত্রিত ছিলেন। ১৯৪৫ সালে ওই সম্মেলনের ‘শিল্পী’ বিভাগে সভাপতি পদে তিনি মনোনীত হয়েছিলেন। আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত কবিগান পরিবেশন করে ওই লোকশিল্পের প্রতি শিক্ষিত মহলের আগ্রহ সৃষ্টি করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমন্ত্রণে ওই চারণ কবি বারবার শান্তিনিকেতন গিয়ে কবিগুরুর সামনে কবিগান পরিবেশন করেছেন। শেষ বয়সে গুমানি দেওয়ান ‘পশ্চিমবঙ্গীয় চারণ কবি সমিতি’ গঠন করেছিলেন এবং জিনদিঘিতে তাঁর জন্মভিটেয় ‘কবি-শিক্ষাগার’ স্থাপন করেন। ‘শ্রীশ্রী রাজ্যেশ্বর শিব মাহাত্ম্য’ ও ‘ছিন্নকুসুম’ নামে দু’টি গ্রন্থ রচনা করে তিনি তাঁর লিখিত সাহিত্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। আমাদের উদাসীনতা ও অবহেলায় ওই সব কীর্তি ঠিক মতো সংরক্ষণ করা হয়নি। সরকারি উদ্যোগে জন্মদিন থেকে সাত দিনের একটি মেলা অনুষ্ঠান করেই দায়সারা ভাবে সব দায়িত্ব পালন করা হয়।
সাধন দাস, ভৈরবতলা-লবনচোঁয়া, সুতি।
|
রঘুনাথগঞ্জ শহরে পলিথিনের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে রমরমিয়ে। অথচ পুরসভা ও প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। পুরসভার পক্ষ থেকে গত বছরের ১৫ অগস্ট পর্যন্ত এই ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পর সাত মাস অতিক্রান্ত হতে চলল। তবুও ক্যারিব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। মিষ্টির দোকান ও মাছের বাজার-সহ রঘুনাথগঞ্জের প্রায় সব দোকানে ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে আগের মতোই। তাই পুরসভা ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, বহরমপুর শহরের মতো রঘুনাথগঞ্জেও কঠোর পদক্ষেপ করে ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হোক।
কালু দাস, গনকর, রঘুনাথগঞ্জ।
|
মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথীর পশ্চিমপাড় দিয়ে চলে গিয়েছে পূর্বরেলের হাওড়া বিভাগের কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখা। ৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই এলাকা থেকে সকাল বেলায় সড়কপথে কলকাতা যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী কোনও বাস পরিবহণের ব্যবস্থা নেই। ফলে রেলের ওই শাখার পথের দু’পাশের শতাধিক গ্রামের কয়েক লক্ষ মানুষের কলকাতায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ট্রেন। কিন্তু সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে রেলের ওই শাখা দিয়ে ট্রেনে চেপে সরাসরি কলকাতায় যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে দুপুরের আগে কলকাতায় পৌঁছে কাজ সেরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার কোনও ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। তার ফলে ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ওই সমস্যার সমাধানে সকালের দিকে কাটোয়া-আজিমগঞ্জ শাখা রেলপথ দিয়ে দ্রুতগামী কোনও ট্রেনে করে সরাসরি কলকাতা যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য রেলের কর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাই।
তারক মুখোপাধ্যায়, শক্তিপুর। |