পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সময়ে ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীর। জখম হলেন আরেক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এবং তাঁর স্বামী। শুক্রবার সকালে করণদিঘি থানার পিছলা এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম শ্যামলী পাল (১৮)। জখম ছাত্রী এবং তাঁর স্বামীর নাম রবিতা সিংহ এবং গোবিন্দ সিংহ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দম্পতিকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। শ্যামলীর বাড়ি পিছলা এলাকায়। জখম রবিতা তাঁর বান্ধবী। রবিতার বাপের বাড়ি ওই এলাকাতেই। মাসখানেক আগে স্থানীয় কাছনা এলাকার বাসিন্দা পেশায় চাষি গোবিন্দবাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে। রবিতা বাপের বাড়ি থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ট্রাকটিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। চালক ও খালাসি পলাতক। ঘটনার পর ওই এলাকার জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের দাবিতে কয়েকশো বাসিন্দা প্রায় একঘন্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। করণদিঘি থানার আইসি সুকুমার মিশ্র বলেন, “ট্রাকের চালক ও খালাসির খোঁজে তল্লাশি চলছে। ওই এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।” মৃত শ্যামলী ও জখম রবিতা পড়শি হওয়ার সুবাদে খুব ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। দুজনেই করণদিঘি হাইস্কুলের ছাত্রী। এবার তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছিল করণদিঘি গার্লস হাইস্কুলে। তাঁদের বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। এদিন রবিতা’র স্বামী গোবিন্দবাবুর মোটরবাইকে চেপে দুই জনের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা ছিল। সেইমতো বাড়ির সামনের রাস্তার ধারে বাইক নিয়ে গোবিন্দবাবু অপেক্ষা করছিলেন। শ্যামলী ও রবিতা রাস্তা পার হয়ে বাইকের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সেইসময় ডালখোলা থেকে রায়গঞ্জগামী একটি দশচাকার ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শ্যামলীকে পিষে দিয়ে রবিতাকে ধাক্কা মারে। তার পরেই ট্রাকটি বাইকটিকেও ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই শ্যামলীর মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাসিন্দারা রবিতা ও গোবিন্দবাবুকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুর্ঘটনার পর শ্যামলীর মা নিশাদেবী বলেন, “স্বামী নেই। পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাই। খুব কষ্টে একমাত্র মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছিলাম। মেয়ে এই ভাবে চলে যাবে ভাবতেও পারছি না। পুলিশের কাছে অভিযুক্ত চালকের কঠোর শাস্তির দাবি করেছি।” দুর্ঘটনায় রবিতার মাথায়, পিঠে ও কোমড়ে চোট লেগেছে। তাঁর আত্মীয় অমরকুমার সিংহ বলেন, “পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে দুই জনই বার হল। আর কিছুক্ষণের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে গেল, ভাবাই যাচ্ছে না। করণদিঘি গার্লস হাইস্কুল কতৃর্পক্ষ এদিন পরীক্ষার পর এক মিনিট নিরাবতাও পালন করেছেন। |