শিবিরের সংখ্যা সে ভাবে বাড়ছে না। উল্টে শিবিরে রক্তদাতার সংখ্যা কমছে। এই পরিস্থিতিতে গরম বাড়লে জেলা জুড়ে রক্তের সঙ্কট আরও বাড়ারই আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল। এমনিতেই প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন, গরমের এই সময়টায় রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়। গরম পড়তে না পড়তেই রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমতে শুরু করায় এ বার সঙ্কট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা। কেননা শিবির-প্রতি দাতার সংখ্যাও যে দিনকে দিনকে কমছে।
ঠিক কী হারে শিবিরে দাতার সংখ্যা কমছে? মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০১০-এ যেখানে শিবির-প্রতি গড়ে ৫৫ জন রক্ত দিয়েছেন, ২০১১-য় সেখানে গড়ে ৪৯ জন রক্ত দিয়েছেন। মেদিনীপুর ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার বাঁশরিমোহন মাইতির মতে, “শিবিরের সংখ্যা সে ভাবে না কমলেও সেখানে রক্তদাতাদের সংখ্যা কমছে। এটাই উদ্বেগের।”
ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল, মেদিনীপুর থেকে খড়্গপুর-পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় সব হাসপাতালেই রক্তের সঙ্কট চলে গরমে। ব্লাডব্যাঙ্কে একাধিক গ্রুপের এক বোতলও রক্ত থাকে না অনেক সময়ে। রক্তের অভাবে অনেক সময়ে চিকিৎসা ব্যাহত হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন। এক বোতল রক্তের জন্যই তাঁরা হন্যে হয়ে ঘোরেন। জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি ‘চাপ’ থাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালেই। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, পাশের জেলা থেকেও অনেকে এসে এখানে ভর্তি হন।
গত কয়েক বছরে ঠিক কতগুলি শিবির হয়েছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহর ও তার আশপাশের এলাকায়? খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ২০০৯-এ খড়্গপুর ব্লাডব্যাঙ্ক ১৪৪টি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। রক্ত দিয়েছিলেন ৬ হাজার ৪৬৪ জন। ২০১০ সালে ১৫৯টি শিবির হয়। রক্ত দেন ৭ হাজার ১৩৯ জন। গত বছরে শিবিরের সংখ্যা কিছুটা কমে যায়। ১৪৬টি শিবিরে ৬ হাজার ৩৩৮ জন রক্ত দেন। খড়্গপুর ব্লাডব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার ঝুমা মুখোপাধ্যায়ের মতে, “শিবিরের সংখ্যা আরও বেশি হলে ভাল হয়।” আর হাসপাতাল সুপার দেবাশিস পাল বলেন, “গরম পড়লে শিবিরের সংখ্যা কমে যায়। স্বাভাবিক ভাবে তখন রক্তের সঙ্কট দেখা দেয়।” পরিসংখ্যান থেকেও স্পষ্ট, শিবিরে রক্তদাতাদের সংখ্যাও কমছে। কারণ, ২০১০ সালে যেখানে শিবির-প্রতি গড়ে ৪৫ জন রক্ত দিয়েছেন, ২০১১-য় সেখানে গড়ে ৪৩ জন রক্ত দেন।
একই ছবি মেদিনীপুরে। ২০০৯ সালে মেদিনীপুর মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্ক ২০৭টি শিবির থেকে রক্ত সংগ্রহ করে। রক্ত দিয়েছিলেন ১০ হাজার ২১১ জন। ২০১০ সালে ২২৪টি শিবির হয়। রক্ত দেন ১২ হাজার ২৬৫ জন। গত বছরে ২৬৬টি শিবির হলেও রক্ত দেন মাত্র ১২ হাজার ৯৫৯ জন। অর্থাৎ শিবির বেশি হলেও রক্ত-সংগ্রহ সে ভাবে বাড়েনি। দাতা কমেছে। সাধারণত, অগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত রক্তদান শিবির হয়। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে শিবিরের সংখ্যা কমে যায়। সাধারণ মানুষ উৎসবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ বছর জানুয়ারি মাসে মেদিনীপুর ব্লাডব্যাঙ্ক ৩৪টি শিবির থেকে রক্ত-সংগ্রহ করেছে। রক্ত দেন ১ হাজার ৫৭৯ জন। অর্থাৎ শিবির প্রতি গড়ে ৪৬ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে একই সংখ্যক শিবিরে রক্ত দেন ১ হাজার ৬২৪ জন। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় সামান্যই বেশি। এক আধিকারিকের বক্তব্য, শিবির প্রতি গড়ে ৫০ জন রক্ত দিলে ভাল হয়। রক্তদান শিবিরের সংখ্যা সে ভাবে না বাড়ায় এবং শিবির-প্রতি দাতার সংখ্যা কমায় উদ্বেগ তাই সব মহলেই। |