নদিয়ার পরে মুর্শিদাবাদ। দলীয় নেতৃত্বের রাশ মন্ত্রীদের হাত থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল তৃণমূল। সেই সিদ্ধান্তের জেরে মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল সভাপতি হলেন মহম্মদ আলি। রাজ্যের মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহাকে সরিয়ে তরুণ এই নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হল। এর আগে নদিয়ায় উদ্যানপালণ দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসকে সরিয়ে পুণ্ডরীকাক্ষ সাহাকে (নন্দ) দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুক্রবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহম্মদ আলিকে সভাপতি করা হয়েছে।”
|
মহম্মদ আলি। নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূল নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, মন্ত্রী হওয়ার জন্য সুব্রতবাবু দলের কাজে পুরো সময় দিতে পারছিলেন না। কিন্তু মুর্শিদাবাদে দলের কাজ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি সিদ্দিকা বেগম, জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা বাণী ইসরায়েল-সহ বেশ কয়েক জন জেলা পরিষদ সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি পুরসভার কংগ্রেসের সদস্যেরা তৃণমূল ভবনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। অধীর-দূর্গে ধস নামাতে উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সে কারণে দলের ঐক্য রেখে সিপিএম এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উপযুক্ত সেনাপতি খোঁজার কাজ শুরু হয়েছিল।
পাশপাশি সংখ্যালঘু প্রধান জেলায় সেই সম্প্রদায়ের কাউকে সভাপতি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের আশা। লালবাগ সিংঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ আলি দলের জেলা সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর বাবা প্রয়াত ইদ্রিশ আলি ছিলেন কংগ্রেসের মুর্শিদাবাদের সাংসদ। শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে ভাগীরথী এক্সপ্রেসে মুর্শিদাবাদ ফেরার পথে ফোনে মহম্মদ আলি বলেন, “দলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি পদের নিয়োগপত্র এ দিন আমার হাতে তুলে দেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মজবুত সংগঠন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন নেত্রী। ওই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।”
মহম্মদ আলির সভাপতি পদে নিয়োগ মেনে নিয়েছে জেলায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীই। সদ্য প্রাক্তন সভাপতি সুব্রত সাহা বলেন, “আমার তুলনায় বয়সে তরুণ মহম্মদ আলিকে জেলা সভাপতি করে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মহম্মদ আলি নিজেও ভাল রাজনীতিক। তাঁকে দলের জেলা সভাপতি করায় সংগঠন আরও মজবুত হবে।” সুব্রতবাবুর বিরোধী শিবিরের নেতা তথা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সাগির হোসেন বলেন, “আমাদের দলে নেত্রীর কথাই চূড়াম্ত। তিনি ভাল মনে করেছেন বলেই মহম্মদ আলিকে জেলা সভাপতি করা হয়েছে। আমরাও ওই সিদ্ধান্ত হাসি মুখে মেনে নিয়েছি”
তবে সুব্রত ও সাগির দুই নেতার অনুগামীরাই জানিয়েছেন, সাগির হোসেন ও সুব্রত সাহার মধ্যে কাজিয়া এতটা তীব্র আকার নিয়েছে যে, গত ২ মার্চ বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সামনেই দু’পক্ষের লাঠালাঠি হয়েছে। তারও আগে গত ১ ডিসেম্বর বহরমপুর ওয়াইএমএ মাঠে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য যুব সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর সমাবেশে দু’পক্ষের মধ্যে কোনও মতে লাঠালাঠি আটকানো গেলেও মারমুখি পরিস্থিতি সবাই দেখেছেন। তারও আগে রানিতলায় সাগির হোসেনের অনুগামীদের আক্রমণে সভা ভণ্ডুল হয়ে যায়। সে সময়ে কোনও মতে সুব্রত সাহারা প্রাণ হাতে করে বাড়ি ফেরেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মৎস্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রতবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেই দলীয় নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশপাশি ২ মার্চ রবীন্দ্র সদনে শ্রম মন্ত্রীর সামনে ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড়-সফরে থাকার সময়ে এমন ঘটনায় তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন দলীয় শৃঙ্খলা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই দিনের প্রেক্ষিতে সাগির হোসেনকে সর্তক করা হয়েছিল। দলের প্রথম দিন থেকে সঙ্গে থাকায় সাগির হোসেনকে শুধু সর্তক করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সদ্য তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, “আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে সব দিক বিবেচনা করে দলনেত্রী সংখালঘু সম্প্রদায়ের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এক জন শিক্ষককে মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি পদে বসালেন।” |