সচিনের একশোতম একশোর দিন অ্যান্টিগা থেকে বিশেষ কলাম লিখলেন ভিভিয়ান রিচার্ডস। |
সচিন, তোমাকে সম্মান। একশোটা আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে ব্যাটিংয়ের এভারেস্টে ওঠার পর সচিনকে গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরফ থেকে এটাই বলার আছে। আমি বিশ্বাস করি স্যর ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান বিশ্বের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। কিন্তু সচিন তেন্ডুলকরকে ওর সেরা ফর্মে ব্যাট করতে দেখার পরে নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানকে আমি দেখেছি।
সচিনের সম্পর্কে নতুন আর কী বলব? ক্ষমতার বিচারে ও জিনিয়াস। ক্রিকেটের প্রতি ওর মনোভাবের বিচারে সচিন ট্রোজান সৈন্যদের মনে পড়ায়। আর ফোকাসের কথা বললে বলতে হয়, পাগল। ক্রিকেটের উপর অদ্ভুত মনোযোগ। কিন্তু এ সব উৎকৃষ্ট বিশেষণের ভিড়ে কোথায় যেন আমরা সেই ছোটখাটো জিনিসগুলো হারিয়ে ফেলি, যে জিনিসগুলো সচিনকে একই সঙ্গে মানুষ আর অতিমানব করে দিয়েছে। এক জন ক্রীড়াবিদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলতে পারি, একটা চোট আমাদের কত বড় ক্ষতি করে দিতে পারে। এক জন ব্যাটসম্যানের কাছে কনুইয়ে চোট আর তার অস্ত্রোপচার মানে পেশাগত মৃত্যুর ডাক। কিন্তু সচিন যে ভাবে এই বাধা টপকে অতুলনীয় ভাবে সর্বোচ্চ স্তরে খেলে যাচ্ছে, সেটা খুব স্পেশ্যাল। |
এক-এক সময় মনে হয়, সব কিছু ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়াটা সবচেয়ে সহজ। ব্যথা, চোট, বয়স আর সমালোচনা সব কিছু উপেক্ষা করে লড়ে যাওয়া খুব সাহসী মানুষের পক্ষেই সম্ভব। অ্যান্টিগার সময়ে সকাল-সকাল যে সেঞ্চুরিটা দেখলাম, সেটা সচিনের আত্মবিশ্বাস এবং অনড় ফোকাসের প্রমাণ। আমি জানি প্রচুর ভারতীয় সমর্থক হালফিলে সচিনের ব্যাটিংয়ে পুরনো ঔদ্ধত্যটা মিস করে। আমি নিজেও সেটা উপভোগ করতাম। কিন্তু সচিন যে ভাবে নিজেকে একটা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছে, সেটাকেও আমি সম্মান করি। সচিন আজ নিজের শরীরটাকে বুদ্ধি করে ব্যবহার করতে পারে। বয়স আর চোটের জন্য যে ক্ষতিটা হয়েছে, সেটা ও নিজের ক্রিকেটদক্ষতা দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছে। সচিনের যে সব সমসাময়িক ক্রিকেটারদের নাম ওর সঙ্গে উচ্চারিত হত, তাদের অনেকেরই এই খিদে আর ফোকাসটা ছিল না। যার জন্য আজ এই শৃঙ্গে সচিন একা।
সচিন মোটেই ব্যাটসম্যান হিসেবে ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়নি। ওর শটে আজও উত্তেজনা আছে। ক্রিকেটভক্তদের সচিন যা বিনোদন দিয়েছে, তার তুলনা নেই। আর এটা করেছে নম্রতার সঙ্গে, কোটি কোটি ভক্তের প্রত্যাশার পাশাপাশি দলের ব্যাটিংয়ের দায়িত্বও একা কাঁধে নিয়ে। সচিন কবে ব্যাট তুলে রাখবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার ও উপার্জন করেছে। মানুষ হিসেবে যথেষ্ট বিচক্ষণ। ক্রিকেটার হিসেবে অহংকারী। সচিনের যদি মনে হয় নিজের মান অনুযায়ী আর খেলতে পারছে না, মনে হয় না খেলা চালিয়ে যাবে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে রাহুল দ্রাবিড়ের মতো ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে ভারত। সচিনও যদি এখন চলে যায়, তা হলে ভারতীয় ক্রিকেটে বিরাট...বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি হবে।
হালফিলে সচিনের ব্যাট সে ভাবে কথা বলছে না ঠিকই। কিন্তু একশোতম সেঞ্চুরির ফাঁড়া কেটে যাওয়ায় আগামী দিনে সচিন যে নতুন কোনও রেকর্ড করবে না, কে বলতে পারে? সচিনকে দেখে মনে হচ্ছে নিজের খেলাটা ও উপভোগ করছে। ফিল্ডিং করার সময়েও ওর মধ্যে একটা চনমনে ভাব খেয়াল করেছি। এক জন ক্রিকেটারের মনোভাব সবচেয়ে ভাল বিচার করা যায় তার ফিল্ডিং দেখে।
আমি সব সময় বলি, যখন কেউ অবসর নেয় তখন চিরকালের জন্য অবসর নেয়। আসুন, আমরা আরাম করে বসে এই নম্র, ছোটখাটো অথচ অসাধারণ প্রতাপশালী ক্রিকেটারের শেষ বছরগুলো উপভোগ করি। বললাম না, আমি সচিনকে ব্যাট করতে দেখেছি। আর আমার মনে হয় আমি বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানকে দেখেছি। |