যাদের রুখে দাঁড়ানোর কথা সেই পুরসভার বিরুদ্ধেই পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি মালদহের। জেলার ইংরেজবাজার পুরসভার বিরুদ্ধে পুকুর ভরাট করে পার্কিংজোন করার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। শহরের কেন্দ্রস্থলের ওই পুকুরটি রথবাড়ির পুকুর নামে পরিচিত। সেই ইতিহাস বিজড়িত পুকুর বুজিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে পার্কিংজোন গড়ার অভিযোগ ওঠায় ব্যবসায়ী থেকে ইতিহাসবিদ, সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। এই ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে জেলা ভূমিরাজস্ব আধিকারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা ভূমিরাজস্ব আধিকারিক খগেন্দ্রনাথ ডিউ বলেন, “পুকুর বুজিয়ে পার্কিংজোন তৈরির ঘটনা জানা ছিল না। বিষয়টি নজরে আসতেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, পার্কিংজোন গড়তে শহরের জঞ্জাল দিয়েই রথবাড়ির ওই পুকুর বোজানোর কাজ চলছে। প্রতিদিনই পুরসভার ময়লা ফেলার ট্রাক্টর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জঞ্জাল তুলে পুকুরে ফেলছে। |
উড়ালপুলের নীচে জঞ্জাল ফেলে পুকুর ভরাট চলছে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়। |
রথবাড়িতে পুকুর বুজিয়ে পার্কিংজোন গড়ার পক্ষে সওয়াল করে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “ওটা কোনও দিনই পুকুর ছিল না। রেললাইন ও রাস্তা করার জন্য ওখান থেকে মাটি খোঁড়ার ফলে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই গর্ত পচা ডোবায় পরিণত হয়েছিল।” পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শহরে যেভাবে যানবাহন বেড়েছে তাতে পার্কিংজোন না করলে শহর মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে। এ ছাড়া রথবাড়ি এলাকায় কোনও পার্কিংজোন না থাকায় জাতীয় সড়ক ও স্টেশন রোড়ের উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে। সামনে বাজার থাকায় অনবরত গাড়ি যাতায়াত করার ফলে প্রতিনিয়ত রথবাড়ি এলাকা যানজট হচ্ছে। প্রতিদিনই যানজট হচ্ছে। পুর চেয়ারম্যান বলেন, “যানজটের হাত থেকে শহরের বাসিন্দাদের রেহাই দিতেই রথবাড়িতে পুর কর্তৃপক্ষ ওই পার্কিংজোন গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই পার্কিংজোন গড়ে উঠলে ৪০০ গাড়ি একসঙ্গে দাঁড়াতে পারবে। তখন আর যানজট বলে কিছু থাকবে না। তবে পুর কর্তৃপক্ষের ওই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন জেলার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ কমল বসাক। তাঁর দাবি, “রথবাড়ির কাছ দিয়ে রেললাইন বসার আগে ওখানে বিরাট পুকুর ছিল। সেই পুকুরের পাড়ে মদনমোহনের মন্দির ছিল। এখনও সেই মন্দির রয়েছে। সেই মন্দির থেকে রথ বার হত। সেই থেকে ওই পুকুরে নাম রথবাড়ির পুকুর। পরবর্তীতে রেললাইনের জন্য পুকুরের কিছুটা অংশ মাটি ফেলে বন্ধ করা হয়েছিল। রথবাড়ির পুকুরের সঙ্গে মালদহের বহু ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে।” মালদহ মাচের্ন্ট চেম্বার কর্মাসের বক্তব্য, পার্কিংজোন শহরের বাইরে করলে যানজটের হাত থেকে রক্ষা পেত। অথচ তা না করে শহরের ভিতরেই পুকুর বুজিয়ে পার্কিংজোন করা হচ্ছে। পার্কিংজোন শহরের বাইরে তৈরির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত। নইলে আগামী দিনে যানজটে শহরের মধ্য দিয়ে আর নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা যাবে না। মাচের্ন্ট চেম্বার কর্মাসের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, “যেভাবে শহরের কেন্দ্রস্থলে পুরসভা পুকুর বুজিয়ে পার্কিংজোন তৈরি করছে তা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। শহরে কোথাও আগুন লাগলে জল পাওয়া যাবে না। ১৯৯৮ সালে নেতাজি পুরবাজারে যখন আগুন লেগেছিল তখন রথবাড়ির এই পুকুর থেকে জল নিয়ে দমকল আগুন নেভায়। এখন যদি ফের কোথাও আগুন লাগে তখন কী হবে?” |