|
|
|
|
ডাইনি অপবাদ দিয়ে মারধর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গোঘাট |
ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক আদিবাসী মহিলা ও তাঁর পরিবারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে গোঘাটের হরিহরপুর গ্রামের আদিবাসীপাড়ায়। স্থানীয় কিছু মানুষই খবর দেন পুলিশকে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা নাগাদ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। পরিবারটিকে সরিয়ে আনা হয় থানার নিরাপদ আশ্রয়ে।
শুক্রবার বিকেলে ওই পরিবারের লোকজন আরামবাগের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শ্মরণাপন্ন হন। বিচারক তথা মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী জানান, পরিবারটি গ্রামেই ফিরে যাবে। পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে তাঁদের। মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন পাড়ার মোড়ল কালীপদ সরেন।
হরিহরপুরের আদিবাসীপাড়া বলতে গ্রামের হাজরাপুকুর নামে একটি পুকুর পাড়ের জনা পঁচিশ ছিটেবেড়ার ঘর। সেখানেই থাকেন শ’দেড়েক আদিবাসী। অতীতে এঁদের অনেকেই বাঁকুড়া থেকে কাজের খোঁজে এসে এখানে আস্তানা গাড়েন। এখানকারই বাসিন্দা পানমনি সরেন ‘অপদেবতা’র পুজো করতেন বলে গুজব ছিল। দিন সাতেক আগে গ্রামের এক বধূর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। পানমনির ‘তুকতাকের’ জেরেই এই ঘটনা বলে অপবাদ দেওয়া হয় তাঁকে। তারই জেরে বৃহস্পতিবারের ঘটনা।
পানমনি বলেন, “পাড়ায় কারও পেট খারাপ হলেও আমাকে সন্দেহ করা হয়। অনেক দিন ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। পাড়ার কোনও ছোট ছেলেকে কোলে পর্যন্ত করতে দেওয়া হয় না আমাকে। কারও চোখে চোখ রেখে কথা বলতেও দ্বিধা হয়। সকলেই কেমন বাঁকা নজরে দেখে।” পানমনির স্বামী পূর্ণর অভিযোগ, দিন তিনেক আগে গাঁয়ের সকলে বৈঠক করে আমাকে বলে, পাড়া থেকে বাস গোটাতে হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য, তৃণমূল নেতাদের সে কথা বলি। ওঁরা জানিয়ে দেন, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।”
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারে গেল না কেন পঞ্চায়েত?
সিপিএমের সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জীব দলুই বলেন, “কুসংস্কার কাটাতে কর্মশালা করা হয়নি ঠিকই, কিন্তু মোড়লদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছি। ওঁরা কোনও যুক্তি মানতে চাননি। উল্টে নাক গলাতে নিষেধ করেন।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুজিত সামুইয়ের কথায়, “কোনও ভাবেই ওই পাড়ার লোকজনকে এ সব কুসংস্কার থেকে বের করা যাচ্ছে না।” বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামে এসেছিলেন গোঘাট ১ ও ২ বিডিও জয়ন্ত মণ্ডল, অনির্বাণ সোম। ছিলেন গোঘাট থানার ওসি প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। দুই বিডিও-র বক্তব্য, “এ ধরনের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার রাতারাতি কাজে আসে না। মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটাতে লাগাতার চেষ্টা করে যেতে হবে।” |
|
|
|
|
|