সম্প্রতি সম্পন্ন বিধানসভাগুলির নির্বাচনে বিজেপির মিশ্র ফলাফল হইয়াছে। উত্তরপ্রদেশে তাহার অবস্থা অন্য জাতীয় দল কংগ্রেসের মতোই শোচনীয়। কিন্তু উত্তরাখণ্ডে পরাজিত হইলেও বিজেপি কংগ্রেসের সহিত সমান তালে লড়িয়াছে। পঞ্জাবে অকালি দলের সহযোগী হিসাবে শাসনক্ষমতায় ফিরিতে পারা একটা রেকর্ড, যাহা রাজ্যের ৪৬ বছরের ইতিহাসে কখনও হয় নাই। সর্বোপরি লক্ষণীয় গোয়ায় দলের সাফল্য। এই রাজ্যে মনোহর পারিক্কার দলকে যে নেতৃত্ব দিয়াছেন, তাহার মধ্যেও কিছু নজিরবিহীন ঘটনা রহিয়াছে। তিনি বহু খ্রিস্টানকে প্রার্থী করিয়াছিলেন এবং তাঁহারা সকলেই জয়ী।
সংঘ-পরিবার যখন বিজেপি নেতৃত্বকে হিন্দুত্বের অনুশীলনে ফিরিতে পরামর্শ দিতেছে, তখন গোয়ার ফলাফল দেখাইয়া দেয়, সহিষ্ণুতার সহিত সকলকে লইয়া চলিলে এবং উন্নয়নের কর্মসূচি রূপায়ণে সচেষ্ট হইলে জনাদেশ দলের অনুকূলে যাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। উত্তরপ্রদেশে তথাকথিত সংখ্যালঘু-তোষণের বিরোধিতা, অযোধ্যাকেন্দ্রিক ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি এবং উচ্চবর্ণের হিন্দুর পাশাপাশি অনগ্রসর ভোট টানিতে উমা ভারতীকে নামাইবার সিদ্ধান্ত বিজেপির নির্বাচনী ভরাডুবি ঠেকাইতে পারে নাই। কেবল সম্প্রদায় কিংবা জাত-ভিত্তিক আত্মপরিচয়ের রাজনীতি এখন আর ফলপ্রসূ হইতেছে না। মানুষ এখন আর স্লোগানে ভোলে না, কাজ দেখিতে চায়। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ক্রমশ বাস্তব পরিস্থিতির এই বাধ্যবাধকতাগুলি উপলব্ধি করিতেছেন।
তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে অরুণ জেটলির মতো নেতার বড় ভূমিকা। তাঁহার ‘গণসম্মোহন’ না থাকিতে পারে, কিন্তু ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতির বাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রহিয়াছে, তৎসহ রহিয়াছে শীতল মস্তিষ্ক ও হিসাবি বুদ্ধি। তিনি যখনই কোনও রাজ্যে দলের নির্বাচন পরিচালনার কান্ডারি নিযুক্ত হন, এই সম্পদগুলি ব্যবহার করেন। গোয়ায় দলের সাফল্যের পিছনেও তাঁহার মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তাগুলিই প্রাধান্য পাইয়াছে। অরুণ জেটলি আর এস এসের নির্দেশে দল করেন না, সিদ্ধান্তগ্রহণের আগেও ঘন-ঘন নাগপুরে ছোটেন না। প্রয়োজনে নাগপুরকে তাঁহার কাছে আসিতে হয়। ইহার বিপরীতে, কংগ্রেসে নেহরু-গাঁধী পরিবারের সদস্যদের প্রতি আনুগত্যের প্রগল্ভ প্রতিযোগিতাই দলীয় কর্মকর্তাদের একমাত্র ব্রত হইয়া উঠিয়াছে। হাই কমান্ড হইতে নির্দেশ না আসিলে কোনও কাজ হয় না। দলের ইস্তাহার রচনা, প্রার্থী মনোনয়ন, তহবিল বিতরণ, প্রচারসূচি নির্ণয় এবং ভোট-পরিচালনা সব কিছুর জন্যই দিল্লির মুখের দিকে চাহিয়া থাকিতে হয়। প্রাদেশিক স্তরের নেতা-কর্মীরা অপ্রাসঙ্গিক হইয়া গিয়াছেন। এই ভাবে কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই জেতা যায় না। বিজেপি’র আপেক্ষিক সাফল্য তাহাই বলিয়া দেয়। |