সিনেমা সমালোচনা ২...
প্রতিবন্ধকতা হারিয়ে

একা মোর গানের তরি ভাসিয়ে ছিলেম নয়ন জলে...
সহসা কে এলে গো সে তরি বাইবে বলে...


চেনা গান, চেনা দুঃখ। অনেকেরই প্রিয় গান।
কিন্তু এ গান যদি কোনও সুবেশা সুন্দরী মানসিক প্রতিবন্ধী আবেগ দিয়ে গেয়ে ওঠেন কেমন লাগে? তখন যেন মানেটাই পাল্টে যায়। পাল্টে যায় ঘরের পরিবেশ। গুমরে কেঁদে ওঠে মন। গলার কাছে দলা পাকায় কান্না।
একজন মানসিক প্রতিবন্ধীকে ঘিরে তার পরিবারের মানুষজন, আত্মীয় কুটুম, পাড়াপড়শির সুখ দুঃখ নিয়ে একটি সংবেদী ছবি তৈরি করেছেন তনিমা সেন। এ ছবির বাণিজ্যিক মূল্য কতটা এই প্রসঙ্গ তোলা রেখে প্রথমেই বলা যায় মন ছুঁয়ে যাওয়া ছবি।
হল থেকে বেরোবার সময় দেখা গেল অনেকেই রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন। ওঁরা কারা? জানা গেল ওঁরা প্রত্যেকেই মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানের মা-বাবা বা প্রিয়জন। ওদের যন্ত্রণার সঙ্গে মিলে গেছে ছবির গল্প। ইদানিং স্মার্ট, ঝকঝকে পালিশের বিনোদনী ছবি অনেক। কিন্তু সমাজের কোনও একটা করুণ দিক নিয়ে তেমন ছবি খুব একটা হচ্ছে না। তনিমা এমনই একটা সমাজ সচেতনার ছবি বানিয়ে ফেলেছেন। নানা ওঠা পড়ার মধ্যে দিয়ে এ ছবি শেষ করতে সময় লেগেছে ছ’ বছর।
পথের শেষ কোথায়
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তনিমা সেন, গৌরব চট্টোপাধ্যায়
প্রতিবন্ধীদের মা-বাবারা তো সন্তানদের বুকে আগলে রেখে ভালবাসা দেন, কিন্তু তাঁরা মারা যাওয়ার পর কী হবে এই সব সন্তানের? কোথায় পাবে তারা এতটুকু যত্ন, ভালবাসা, আনন্দ, আদর? পুরো ছবি জুড়ে এই কঠিন প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন পরিচালক বড় করুণ ভাবে।
প্রতিবন্ধী সন্তানদের মা-বাবারা বা যাঁরা ‘অটিজম’ নিয়ে সেবামূলক কাজ করছেন এ ছবি দেখলে অনুপ্রাণিত হবেন। ডাক্তারের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যয়ের জোরালো অভিনয় মনে করিয়ে দিল ‘হুইল চেয়ার’ ছবির সৌমিত্রকে। সুপ্রিয়া দেবীর মাতাজি চরিত্র বেশ মনভোলানো।
কাহিনি, চিত্রনাট্য, পরিচালনা ছাড়াও, প্রতিবন্ধী যুবক গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে তনিমা প্রমাণ করেছেন অভিনয়েই তাঁর নিজস্ব পা রাখার জায়গা। পরিচালক হিসেবেও গেঁথেছেন মনের রাখার মতো মুহূর্ত। আর প্রতিবন্ধী যুবকের ভূমিকায় গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় নজর কাড়ে।
গৌরবের বাবা হিসেবে কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায় মানিয়েছেন বেশ। প্রাঞ্জল স্বভাবের মধ্যেও সারা ছবি জুড়ে রেখে গেছেন বিষাদের চাপা অভিব্যক্তি। তাঁর নিজের গলায় গাওয়া অনেকগুলি রবীন্দ্রসঙ্গীতও বেশ লাগে শুনতে। সাহেব চট্টোপাধ্যায়, চান্দ্রেয়ী ঘোষও সমব্যথী বন্ধুর ভূমিকায় ছবিতে প্রাণ জোগান।
সাংঘাতিক নাটকীয় এক পরিণতি এ ছবিতে ছিলই। সেটাকে ভাল করে দানা বাঁধালেই ছবিটা আরও বেশি তরতরিয়ে এগিয়ে যেত। এটা ঠিক ঢিলেঢালা চিত্রনাট্যে দু’ঘণ্টা ধরে চলা ছবির অনেক অংশ অকারণে দীর্ঘায়িত।
তা সত্ত্বেও ‘অটিজম’-এর মতো বিষয় নিয়ে ছবি বানানোর যে চেষ্টা করেছেন তনিমা, তাকে সেলাম না করে উপায় নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.