বিমানসংস্থাগুলির জন্য স্বস্তির হাওয়া প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাজেটে। দেশের প্রায় প্রতিটি বিমানসংস্থাই এখন লোকসানের কোপে। জ্বালানির আকাশছোঁয়া দামই তার প্রধান কারণ। এই অবস্থায় বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার অনুমতি বাজেটে যেমন দেওয়া হল, তেমনই বিমানের যন্ত্রাংশের উপরে আমদানি শুল্কও মকুব করা হল। পাশাপাশি, সরাসরি বিদেশ থেকে জ্বালানি কেনার ছাড়পত্রও দেওয়া হল দেশীয় বিমানসংস্থাগুলিকে। ফলে যারপরনাই খুশি বিমানসংস্থাগুলির কর্তারা। শুক্রবার সংসদে প্রণববাবু বাজেট পেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে টুইট করেছেন কিংফিশারের কর্ণধার বিজয় মাল্য।
বিমানসংস্থাগুলির মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এবং কিংফিশারের। এয়ার ইন্ডিয়ার হাল ফেরাতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রণববাবু। ধুঁকতে থাকা এই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানসংস্থা এতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই বাজেটে সবেচেয়ে বেশি লাভ কিংফিশারেরই হল বলে মনে করছেন বিমান পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা। প্রণববাবুর যে সমস্ত ঘোষণায় বিমানসংস্থাগুলি অনেকটা আশার আলো দেখছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বিদেশি ঋণ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, পুঁজির জোগান বাড়াতে বিমানসংস্থাগুলি এক বছরের জন্য বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ডলার ঋণ (এক্সটার্নাল কমার্শিয়াল বরোইংস) নিতে পারবে। স্পষ্টতই খুশি বিজয় মাল্য জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া গেলে তার সুদ ভারতের তুলনায় অনেক কম পড়বে।
বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে সংস্থার ‘ক্ষুব্ধ’ পাইলটদের নিয়ে মাল্য যে বৈঠক করেছিলেন সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন যে, বিদেশের একটি বিমানসংস্থা এবং দু’টি অন্য সংস্থা হাতে টাকা নিয়ে বসে রয়েছে। নিয়ম সংক্রান্ত জটিলতা কাটলেই তারা কিংফিশারে টাকা ঢালতে প্রস্তুত। শুক্রবারের ঘোষণার পরে বিদেশ থেকে যে তাঁদের ঋণ পেতে অসুবিধে হবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। প্রণববাবু জানিয়েছেন, কোনও বিদেশি বিমানসংস্থার তরফে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ করে যে কোনও দেশীয় বিমানসংস্থার ৪৯ শতাংশ শেয়ার কেনার বিষয়টি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। সরাসরি বাজেটে বিষয়টির উল্লেখ থাকায় দিন কয়েকের মধ্যেই এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভার অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সে ক্ষেত্রে আরব দুনিয়ার একটি বিমানসংস্থা সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারে কিংফিশারে।
প্রণববাবুর ঘোষণা অনুযায়ী, দেশের বিমানসংস্থাগুলি এ বার সরাসরি বিদেশ থেকে জ্বালানি কিনতে পারবে। এর ফলে তাদের উপর থেকে বাড়তি করের বোঝা কমবে বলেই জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিজয় মাল্য বলেছেন, “এর ফলে জ্বালানির দাম অনেকটাই কমে যাবে।” এ দিনের বাজেটে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিমানের যন্ত্রাংশ ও চাকা আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড়।
কিংফিশারের এক কর্তার কথায়, “ভারতে কোনও যন্ত্রাংশই তৈরি হয় না। ছোটখাটো সমস্ত যন্ত্রাংশের জন্যই বিদেশের দিকে চেয়ে বসে থাকতে হয়। শুল্ক হিসেবেই প্রচুর টাকা দিতে হয়।” জেট এয়ারওয়েজের এক কর্তা জানিয়েছেন, সারা দেশে এখন তাঁদেরই বিমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফলে যন্ত্রাংশ আমদানির খাতে তাঁদের খরচও অন্য সংস্থার চেয়ে বেশি। বাজেটে এই ছাড়ের ফলে তাই অনেকটাই লাভ হবে জেট এয়ারওয়েজের। |