বিশ্ব নিদ্রা দিবস আজ
দিন-রাতের ফারাক ঘোচায় বাড়ছে মারণ রোগ, মত সমীক্ষায়
ঘুম নিয়ে মাতামাতি করতে প্রতি বছর আস্ত একটা দিন উদ্যাপন করা? হঠাৎ করে মনে হতেই পারে এ-ও নিশ্চয় কোনও বিপণন চমক। কিন্তু তথ্য পরিসংখ্যান দেখলে আক্ষরিক অর্থে ঘুম ছুটে যেতে পারে।
কারণ আধুনিক জীবনযাত্রা ঘুম চুরি করে নিচ্ছে। এত দিন এই সমস্যা সামলাচ্ছিল পশ্চিম দুনিয়া। এখন তার আঁচ লাগছে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশেও।
এস এ পি ইন্ডিয়ার রঞ্জন দাস। ফিউচার গোষ্ঠীর রঘু পিল্লাই বা রিল্যায়্যান্স ইনডাসট্রিজ-এর রবিমোহন। কর্পোরেট জগতের ‘সাকসেস স্টোরি’র উদাহরণ তিনটি নাম। আরও একটি সূত্রে তিনটি নাম এক সঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে। অত্যধিক কাজের চাপ ও তার ফলে তৈরি হওয়া ‘স্ট্রেস’-এর কারণে তিনটি অকালমৃত্যু। গোড়ায় গলদ হিসেবে কম ঘুমকেই দায়ী করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, পরিণত বয়স্ক একজন মানুষের দিনে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তার চেয়ে কম ঘুম হলেই শারীরিক ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা সংস্থা এ সি নিয়েলসেন পাঁচটি দেশের উপর ঘুম নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। তথ্য বলছে ভারতের ৯৩ শতাংশ মানুষ ঘুমের সমস্যার কারণে বিভিন্ন অসুখে ভোগেন। ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন-এর তথ্য বলছে ঘুমের সমস্যার কারণে ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। হৃদরোগের সম্ভাবনা ৭৮ শতাংশ ও মানসিক অবসাদ ৮৩ শতাংশ বেড়ে যায়।
গোটা দেশের মতো শহর কলকাতাতেও বাড়ছে এই সমস্যা। সাইকোথেরাপিস্ট রেশমি দত্ত জানান, দিন ও রাতের ফারাক ঘুচিয়ে দেওয়া বিশ্বায়ন পরবর্তী বাজারে বদলে গিয়েছে দৈনন্দিন জীবন। তিনি বলেন, “সমস্যা কতটা ছড়িয়েছে তা জানতে না- পারলেও গ্রাফটা যে ঊর্ধ্বমুখী, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ‘স্লিপ ডিসঅর্ডার’-এর ফলে মানসিক অবসাদে ভোগেন অনেকে। আবার অবসাদের কারণে ঘুমের সমস্যা হয়। এটা একটা দুষ্টচক্রের মতো কাজ করে।” আর এই সমস্যার হাত ধরে তথাকথিত সফল তরুণ প্রজন্মে বাড়ছে বিভিন্ন নেশার জিনিসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা।
সমস্যা শুধু অবসাদেই আটকে নেই। তৈরি হয় রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যাও। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ‘পালমোনারি’ বিভাগের প্রধান রাজা ধর বলেন, “ঘুম কম হওয়া বা নাক ডাকার সমস্যাকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা ধরা পড়ে। অর্থাৎ রাতে ঘুমোনোর সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া। যা বারে বারে বা বেশি সময়ের জন্য ঘটলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দেখা দেয়।” চিকিৎসকদের দাবি, সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। কিন্তু তার আগে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন। নিয়েলসেনের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের ১৪ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে অন্তত বার তিনেক ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-য় আক্রান্ত হন।
এই তথ্য পরিসংখ্যানের স্পষ্ট প্রমাণ মেলে কর্পোরেট জগতের সিঁড়িভাঙা অঙ্কে। কর্পোরেট ভারতের মন্ত্র, স্বপ্নের পেছনে দৌড়। আর সেই ২৪ ঘণ্টার ইঁদুর দৌড়ে উধাও হচ্ছে ঘুম। নিত্য নতুন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে গিয়ে ঘুচে যাচ্ছে ঘুম আর স্বপ্নের নিবিড় যোগ। দেখা দিচ্ছে নানা রোগের উপসর্গ। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ থেকে শুরু করে মানসিক অবসাদ। বাদ যাচ্ছে না তথাকথিত কোনও ‘লাইফস্টাইল’ রোগও।
২০০৯ সালে বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের একটি সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে এই সমস্যার প্রকোপ। ৫৪ শতাংশ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ‘স্লিপ ডিসঅর্ডার’ বা ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। আর্থিক পরিষেবা ও টেলিকম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যেও এই সমস্যা রয়েছে। অ্যাসোচ্যামের মতে, গত তিন বছরে এই সমস্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্দা ও চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে ‘টাগের্ট’-নির্ভর কর্পোরেট মহল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.