বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে তরুণ-তরুণীর চুল কেটে ‘শাস্তি’ দিলেন গ্রামেরই জনা কয়েক যুবক। রঘুনাথগঞ্জের দফরপুরের বাসিন্দা ওই তরুণ-তরুণীর কাছে এই ‘অপরাধে’ হাজার চল্লিশেক টাকা জরিমানাও চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের বেধড়ক মারধরও করা হয়। গত বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ এই ঘটনায় যদিও পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে এক সপ্তাহ পরে, ১৫ মার্চ ঘটনার কথা জানতে পেরে জঙ্গিপুরের এসডিপিও উইংডেন ভুটিয়া রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
ওই তরুণের বাড়ি দফরপুরের মুড়াপাড়ায়। আর ওই তরুণী থাকেন পাশেরই রওজাপাড়ায়। তাঁরা দু’জনেই বিবাহিত। সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে তাঁরা জানান, বিয়ের আগে তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। ওই তরুণী জানান, তাঁর বিয়ে হয়েছিল বছর দেড়েক আগে। তবে সে বিয়ে টেঁকেনি। বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে তিনি বাপের বাড়িতেই থাকেন। ওই তরুণেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। ওই তরুণী সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন।
ওই তরুণ এ দিন বলেন, “৯ মার্চ রাতে আমাকে গ্রামেরই কয়েক জন বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। আমার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করে ওরা ৪০ হাজার টাকা জরিমানা চায়। বলে, টাকা না দিলে আমাদের বিয়ে করতে হবে। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে বেঁধে মারধর করে ওরা। সারা রাত আটকে রাখে একটা ঘরে। সকাল হতে না হতেই ওরা সালিশি বসায়। আমার আর ওই মেয়েটির চুল কেটে নেয়। তখনও বেঁধে রেখে মারধর করে আমাদের। একই কথা জানালেন ওই তরুণীও। তিনি জানান, “আমারও এক গোছা চুল কেটে নেয় ওরা। গ্রামে আমাদের ঘোরাবারও মতলব করেছিল। কিন্তু গ্রামবাসীরা বাধা দেয়।” গ্রামেরই এক যুবক ইলিয়াস শেখ বলেন, “এই ঘটনায় গ্রামের কারও কোনও সায় নেই। সেই সময়ে গ্রামে মোড়ল বা শিক্ষিত লোকেরা কেউ ছিলেন না। যারা এ কাজ করেছে তারা সমাজবিরোধী, মদ্যপ কয়েক জন যুবক।” কিন্তু ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে চাইছে না। পুলিশ তদন্ত করলে সবই জানতে পারবে।”
ওই তরুণের পড়শি মেহেবুল শেখ বলেন, “ওই তরুণের মা সে দিন রাতেই আমার কাছে এসেছিলেন। আমি গিয়ে ওই যুবকদের বাধা দিই। বলি, ও কী করে বিয়ে করবে? ওর ঘরে স্ত্রী আছে। ওরা মোটা অঙ্কের জরিমানা দাবি করে। রাতভর ছেলেটাকে আটকে রাখে। পরদিন সকালে ওর চুল কেটে দেয়।” ওই তরুণীর বাবা সাহাবুল শেখ বলেন, “দু’টো পরিবারই খুব গরিব। কোনও রকমে খেটে খাই। ওরা শাসিয়েছে, কারও কাছে ওদের নাম বললে গ্রাম থেকে বের করে দেবে। পুলিশ কতক্ষণ আর রক্ষা করবে?”
তদন্তকারী পুলিশ কর্তা জানান, “ওই তরুণ-তরুণীকে নির্ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। অপরাধীদের নাম জানার চেষ্টা চলছে। তবে ঘটনার তদন্ত আমরা শুরু করে দিয়েছি।” |