সম্পাদকীয় ২...
স্বাস্থ্যোদ্ধার
সন্ন অর্থবর্ষে ভারতীয় অর্থনীতি ঘুরিয়া দাঁড়াইবে। সাধারণ বাজেটের আগের দিন অর্থ মন্ত্রক যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করিয়াছে, তাহাতে অন্তত এই আশাটি রহিয়াছে। বর্তমান অর্থবর্ষে আয়বৃদ্ধির হার সাত শতাংশের সীমা অতিক্রম করিবে না, তাহা প্রায় নিশ্চিত। কেন, সেই কারণটিও এত দিনে স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে। ভারতে শিল্প-উৎপাদনের ক্ষেত্রটির গতিভঙ্গ হইয়াছে। কৃষি তাহার সাধ্যমত বাড়িয়াছে। পরিষেবা ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হারও মন্দ নহে। বস্তুত, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে পরিষেবা ক্ষেত্রের অনুপাত বৃদ্ধি পাইয়াছে। অর্থ মন্ত্রক আশা প্রকাশ করিয়াছে, আগামী অর্থবর্ষে আয় বৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ হইবে। কী ভাবে, তাহার ইঙ্গিত সমীক্ষায় রহিয়াছে। অনুমান করা হইয়াছে, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে যে উথালপাথাল চলিতেছে, তাহা আংশিক ভাবে হইলেও শান্ত হইবে। বাজারে মূল্যস্তর খুব বেশি ঊর্ধ্বমুখী হইবে না, বিশেষত তেলের দাম গগনচুম্বী হইবে না। বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক হইবে। শেষ অনুমানটি নিতান্তই প্রকৃতির হাতে, কিন্তু উল্লিখিত প্রথম দুইটি আশা কতখানি পূর্ণ হইবে, তাহাতে বিস্তর সংশয় রহিয়াছে। প্রথম কথা, ইউরোপ এখন যে সংকটে রহিয়াছে, তাহা এক দিনের নহে। ফলে, হঠাৎই সেই সংকট মিটিয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইয়া যাইবে, এমন আশার ছলনায় ভুলিলে বুদ্ধির পরিচয় দেওয়া হইবে না। মার্কিন বাজারের সংকটের শিকড়ও গভীরে। আর, ইরানে যুদ্ধ বাধিলে তেলের দাম কোথায় ঠেকিবে, তাহা অনুমান করা বারাক ওবামারও অসাধ্য। ফলে, দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্যোদ্ধারে বহির্বিশ্বের মুখাপেক্ষী থাকিলে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বইকি।
শিল্প-উৎপাদন ক্ষেত্রের হাল ফিরাইতে হইলে যে সুদের হার ক্রমে কমাইয়া আনিতে হইবে, অর্থনৈতিক সমীক্ষা এই কথাটি স্পষ্টই বলিয়াছে। সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির হারের তুল্যমূল্য বিচার করিয়া সমীক্ষাটি দেখাইয়াছে, উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব মজবুত নহে। অর্থাৎ, সুদের হার বাড়াইলেই মূল্যস্ফীতি কমিবে, এমন সরলীকরণ বিপজ্জনক। বিশেষত ভারতের ন্যায় দেশের ক্ষেত্রে, যেখানে মূল্যস্ফীতির একটি বড় কারণ কাঠামোগত ত্রুটি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কথাটি মানিতে রাজি হয় নাই। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করিতে দফায় দফায় সুদের হার বাড়াইয়াছে। এক দিকে সরকার বাজারে দেদার দেনা করিয়া চলিয়াছে, আর অন্য দিকে সুদের হার চড়া বেসরকারি শিল্পমহলের পক্ষে পরিস্থিতিটি অতি বিপজ্জনক। বিপদটি ঘটিয়াছে। মুশকিল হইল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও তাহার পথ পরিবর্তন করিতে রাজি হয় নাই। বাজেটের আগের দিন ব্যাঙ্ক জানাইল, সুদের হার আপাতত অপরিবর্তিতই থাকিতেছে, কারণ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা, এখনই সুদের হার কমাইলে তাহার ফাঁক গলিয়া মূল্যস্ফীতি ফের ঊর্ধ্বমুখী হইবে। ব্যাঙ্ক রাজকোষ ঘাটতি কমিবার অপেক্ষায় রহিয়াছে। দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য মেরামত করিবার ক্ষেত্রে রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ হ্রাস করিবার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বর্তমান অর্থবর্ষে এই ঘাটতি সম্পূর্ণ বেলাগাম হইয়াছে। সমীক্ষায় ইঙ্গিত রহিয়াছে, সরকার এই ঘাটতির রাশ টানিতে চাহে। ঢালাও ভর্তুকির ক্ষেত্রে কাটছাঁটের সম্ভাবনা আছে, বহু ক্ষেত্রে সংস্কারের পথে হাঁটিবার কথাও বলা হইয়াছে। বস্তুত, সেই তালিকায় খুচরা বিপণনে বিদেশি পুঁজিকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রস্তাবটিও আছে। কিন্তু, ব্যাঙ্ক যদি সুদের হারের প্রশ্নে অনড় হইয়া থাকে, তবে আর্থিক পুনরুত্থানের কাজটি, সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও, যথেষ্ট বেগবান হইবে না। দুব্বুরি সুব্বারাও কথাটি স্মরণে রাখুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.