মুকুলে সায়, কমবে কিছু ভাড়া, মমতাকে মনমোহন
রিক নেত্রীকে তুষ্ট করতে শেষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেই ফোন করলেন তাঁকে। তার আগে অবশ্য প্রণব মুখোপাধ্যায় লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছেন, এনসিটিসি এবং রেল ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে তাঁদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে আশ্বাস দিলেন, আমআদমিকে যাতে রেল সফরে অতিরিক্ত কড়ি গুনতে না হল, তা নিশ্চিত করা হবে। শুধু তা-ই নয়, দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হবে মুকুল রায়কে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি মমতাকে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তার নির্যাস, নিচু শ্রেণির ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তবে এসি টু, থ্রি টিয়ার বা প্রথম শ্রেণির মতো উঁচু শ্রেণিতে বর্ধিত ভাড়া বজায় রাখা হলে ভাল। মুকুল রায় রেলমন্ত্রী হচ্ছেন। মমতা রাজি থাকলে রেল বাজেট পাশের সময় মুকুলের মাধ্যমেই নিচু তলার (শহরতলির লোকাল, অসংরক্ষিত প্যাসেঞ্জার এবং স্লিপার শ্রেণি) ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবটি ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি বিবেচনা করছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে তিনি সহমত হতে পারেন বলেই মনে করছে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, এ কথা মনে করার কারণও রয়েছে। এ দিনই কলকাতায় তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে মমতা জানান, তবু উঁচু শ্রেণির ভাড়া বাড়ালে বিষয়টি আয়ত্তের মধ্যে থাকত। কিন্তু যে ভাবে নিত্যযাত্রী ও সাধারণ শ্রেণির ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তা মানা যায় না। বিশেষজ্ঞদের একাংশেরও বক্তব্য, ভাড়াকে পরবর্তী পাঁচ টাকার গুণিতকে পরিণত করার যে প্রস্তাব রেল বাজেটে করা হয়েছে, তা মেনে নিলে নিচুতলায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশেরও বেশি ভাড়া বেড়েছে। মমতাও এই নিয়ে অভিযোগ করেছেন। এ দিনের বৈঠকের পরে পরিষদীয় দলের কয়েক জন সদস্য জানান, নেত্রী বৈঠকে বলেছেন, ‘আমরা সাধারণ যাত্রীদের টিকিটের দাম বাড়ানোর বিরোধী।’ কিন্তু প্রয়োজনে রেলের উচ্চশ্রেণির ভাড়াবৃদ্ধি নিয়ে রেলমন্ত্রী দলনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতেই পারতেন! দীনেশ বাজেট পেশের পরপরই মমতা ঘনিষ্ঠ মহলেও এই কথা বলেছিলেন।
গত কাল রেল বাজেট পেশ করার পর মমতা এই শ্রেণির ভাড়া বৃদ্ধি নিয়েই সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, সাধারণ মানুষের উপর এই ভাড়া বৃদ্ধি বোঝার সৃষ্টি করবে। বাতানুকূল বা প্রথম শ্রেণিতে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁরা আমআদমির তালিকায় পড়েন না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবটি তাই গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছেন তৃণমূল নেত্রী।
আগামিকাল সাধারণ বাজেট পেশ করবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, তার আগে পরিস্থিতি শান্ত করতে আজ যথেষ্ট সক্রিয় থেকেছেন ইউপিএ নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী যেমন মমতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, তেমনই সুদীপবাবুকে প্রণববাবু আশ্বাস দিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব মন্ত্রিসভার ‘প্রয়োজনীয় পরিবর্তন’ ঘটানো হবে। তিনি এ কথাও জানিয়েছেন, আগামী সোমবারই প্রধানমন্ত্রী তাঁর (রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা সংক্রান্ত) জবাবি বক্তৃতায় জানিয়ে দেবেন যে, এনসিটিসি নিয়েও সরকার আলোচনা না করে আর অগ্রসর হবে না।
শুধু তা-ই নয়, বিরোধী শিবিরকে ঠান্ডা করতে আজ সকালে রেল বাজেটের দায়িত্বও নিজের কাঁধে নিয়েছেন প্রণববাবু। রেল বাজেট নিয়ে সঙ্কট কেন তৈরি হল? তবে কি মন্ত্রিসভার কোনও ‘সামগ্রিক দায়িত্ব’ নেই? এই প্রশ্নে উত্তাল বিরোধী শিবিরের সামনে লোকসভায় দাঁড়িয়ে প্রণববাবু জানিয়েছেন, “রেল বাজেটের অনুমোদন প্রধানমন্ত্রী অথবা মন্ত্রিসভা দেয় না। দেয় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। ফলে আমি এর দায়িত্ব নিচ্ছি। অনেক বিশেষজ্ঞ, ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন প্রস্তাব খুঁটিয়ে দেখেই এই বাজেট তৈরি হয়েছে।”
আজকের সমস্ত ঘটনাবলিই মমতাকে জানিয়ে দিয়েছেন সুদীপ। সব মিলিয়ে গত কালের প্রবল অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের পর আজ খুশির হাওয়া তৃণমূল শিবিরে। কথা ছিল, আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এনসিটিসি নিয়ে নিজেদের অভিযোগের কথা তুলে ধরবে তৃণমূল সংসদীয় দল। সেই অনুযায়ী, গত কাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সময়ও চাওয়া হয়। কিন্তু আজ প্রণববাবু নিজে থেকেই বিষয়টি নিয়ে আশ্বাস দেওয়ার পর সুদীপবাবুকে মমতা নির্দেশ দেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আর দেখা করে এই নিয়ে অনুরোধ করার প্রয়োজন নেই।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, মমতা চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিন মুকুল রায়। কেন না বিষয়টি নিয়ে দেরি হলে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের আলাপ আলোচনার পরিসরও বেড়ে যেতে পারে বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা রয়েছে।
গত কাল গভীর রাত পর্যন্ত রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলার পর, আজ সকালের উড়ান ধরে দিল্লি চলে আসেন মুকুল রায়। এসেই সোজা চলে যান সংসদ চত্বরে। সেখানে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তখন ধর্নায় বসেছেন তৃণমূলের অন্য সাংসদরা। ধর্নায় যোগ দেন মুকুলও। তিনি ছাড়াও সেখানে ছিলেন সুদীপ, সোমেন মিত্র, সৌগত রায়, সুব্রত বক্সী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস পাল, শতাব্দী রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায় প্রমুখ। স্বাভাবিক ভাবেই ছিলেন না দীনেশ ত্রিবেদী। শুধু এনসিটিসি নয়, ফরাক্কা জল থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক প্যাকেজ, খাদ্যবিল থেকে রেলভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহার সব দাবিতেই সরব হয়েছেন সাংসদরা। অধিবেশন শুরু হওয়ার পর যে যার কক্ষে (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) চলে যান। লোকসভায় শুরুতেই বিজেপি এবং বামেরা গত কালের ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় চিৎকার করতে থাকেন। ‘রেলমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিভ্রান্তির’ জবাব চান তাঁরা। এ কথাও জানতে চাওয়া হয় যে, দীনেশ ত্রিবেদী ইস্তফা দিয়েছেন কি না।
সঙ্কট কাটাতে সুদীপবাবু দাঁড়িয়ে উঠে জানান, “দীনেশ ত্রিবেদী পদত্যাগ করুন, এমন দাবি তৃণমূল নেতারা তোলেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত রাতে একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। এ বার প্রধানমন্ত্রী এবং মমতা মিলে স্থির করবেন, জোট রাজনীতির স্বার্থে কী বদল আনা হবে। আমি বিশেষ ভাবে বলতে চাই যে, সরকার স্থিতিশীল। ইউপিএ-২ তার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ করবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.